
ছবি সংগৃহীত
মিথ কি আসলেই মিথ্যে?
আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৪, ০৫:৪৬
মিথ আসলে কাকে বলে?আমরা সাধারণত বিভিন্ন দেশের ঝলমলে রূপকথা, পৌরাণিক গল্প বা লোককথাকে মিথ বল�� থাকি। এ ছাড়াও এমন সব গল্পকে মিথ বলা হয়, যা মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত এবং ধরেই নেওয়া হয় সেসব গল্প একেকবারেই বানোয়াট। কিন্তু মিথ আসলে কি? কোথা থেকে মিথের উৎপত্তি? “মিথ” কথাটার অর্থই বা কি? মানুষের ইতিহাস, উৎপত্তির ইতিহাস জানতে হলে আমাদের জেনে নিতে মিথের উৎপত্তি কোথা থেকে। “মিথ” কথাটি এসেছে গ্রিক শব্দ মাইথোস থেকে, যার অর্থ “শব্দ” বা “লোককথা” বা “সত্য ঘটনা”। এ থেকে বোঝা যায় যে মূলত মানুষের মুখে মুখেই এই মিথ অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়তো। শুধু তাই নয় বরং এটাও বোঝা যায় এ এর শেকড় আসলে ছিলো সত্যের মাঝেই। মিথ শব্দটি আরও একটি শব্দের সাথে জড়িত আর তা হলো মিও, যার অর্থ “শেখানো”, অথবা “গোপন রহস্যের সন্ধান দেওয়া”। খ্রিস্টপূর্ব ৭ম বা ৮ম শতকের দিকে কবি হোমারও এই অর্থেই মিথ শব্দটিকে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি “ইলিয়াড” লেখার সময় এই শব্দ ব্যবহার করেন, যার মাধ্যমে তিনি একটি সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও দর্শনের উন্নতি ঘটতে থাকে। সত্য কি, তার ব্যাপারেই মানুষের ধারণা পরিবর্তিত হতে থাকে। ফলে সময়ের সাথে সাথে মিথের সংজ্ঞাও যায় বদলে। প্রথম দিকের বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকেরা প্রচলিত মিথের সত্যতা এবং স্থায়িত্বকাল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ থেকেই চলে আসে মিথের প্রতি সহজাত একটা সন্দেহ এবং অবিশ্বাস। এর প্রায় ৪০০ বছর পরে মিথ সীমিত হয়ে যায় রূপকথা, প্রতীকী গল্প এবং ফিকশন জাতীয় গল্পে। এখনো মিথকে আমরা দেখি এভাবেই- একটা গল্প যার সত্যতার কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু ৪০০ বছর পুরনো একটা গল্প যে আসলেই মিথ্যা- সেটাই বা প্রমাণ করা যাবে কিভাবে? কোনো প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও তো কতো কিছুই আমরা বিশ্বাস করি, তাই না? এটা তো হতেই পারে যে একটা সময়ে বিভিন্ন সত্য ঘটনা মানুষ মিথের মাধ্যমেই প্রকাশ করতো- এবং তা বিশ্বাসও করতো। এই তত্ব অনেকের কাছে আজগুবি মনে হতে পারে। কিন্তু এটা যে সত্যি হতে পারে তার পেছনে রয়েছ যুক্তি। কারণ মিথোলজিতে থাকা এমন কিছু ঘটনা সত্য প্রমানিত হয়েছে যাকে মানুষ নিছকই রূপকথা মনে করতো। এর একটা ভালো উদাহরন হলো ত্রয় নগরী, যাকে ঘিরে ঘরে উঠেছে হোমারের ইলিয়াড। অনেক অনেক বছর ধরে এই শহরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়, বলা হয় এটা শুধুই কল্পনা, শুধুই মিথ। ১৮৬৮ সালে আসলেই এই শহর খুঁজে পাওয়া যায়। এঁকে তখন স্থান দেওয়া হয় ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু এর পরেও ইলিয়াডকে ধরা হয় ফিকশন হিসেবে, ফ্যান্টাসি হিসেবে, মিথ হিসেবে। এর এই মিথের পেছনে আরও কোনো সত্য লুকিয়ে আছে কিনা, তা নিয়ে করা হয়না গবেষণা। শেষ পর্যন্ত আমরা কি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি? মিথের উৎপত্তির ব্যাপারে কি জানতে পারি? আমরা এটাই জানলাম, যে অনেক পুরনো বলেই মিথ, মিথ্যে নয়। প্রমানের অভাব থাকলেই মিথ, মিথ্যে নয়। মিথের মাঝে লুকিয়ে থাকা অনেক গল্পই আসলে সত্যি হতে পারে। এটা অবশ্য খুবই সম্ভব যে মিথ বলে প্রচলিত অনেক লোকো কোথা আসলে মানুষের তৈরি করা বানোয়াট গল্প। কিন্তু এই গল্পের সবগুলোকেই পাইকারিভাবে মিথ্যে বলে বাতিল করে দেওয়াটা খুব বড় ভুল। মিথের সত্যতা খুঁজে বের করার মাধ্যমে বের হয়ে আসতেই পারে ইতিহাসের অনেক বড় বড় রহস্য।