
ছবি সংগৃহীত
মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে যেসব কাল্পনিক কথা প্রচলিত আছে
আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৯:১০
ফটো সোর্স : www.relativelyinteresting.com
(প্রিয়.কম)- মানবদেহের সবচেয়ে জটিল ও রহস্যময় অঙ্গ হচ্ছে মস্তিষ্ক বা ব্রেইন। গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার পরও মস্তিষ্কের বেশিরভাগ জিনিসই এখনো অজানা ও অনিশ্চিতই রয়ে গেছে। একারণেই মস্তিষ্ক নিয়ে কিছু কাল্পনিক কথা আজও প্রচলিত আছে। কিছু মিথ আছে এতোই বিচিত্র যে সত্য থেকে অনেক দূরে। সম্প্রতি এই রকম কিছু মিথ বিজ্ঞানীরা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। যদিও এই মিথ গুলোর অধিকাংশই অনিশ্চিত রয়ে গেছে কারণ মানব মস্তিষ্ককে পুরুপুরি বুঝে উঠা সম্ভব হয়নি। মস্তিষ্ক নিয়ে প্রচলিত কিছু মিথ সম্পর্কে জেনে নেই আসুন।
১। মানুষ তার মস্তিষ্কের শুধুমাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করে
সম্ভবত মস্তিষ্ক নিয়ে সবচেয়ে সুপরিচিত মিথ হচ্ছে মানুষ তার মস্তিষ্কের শুধুমাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করে। এটা সত্যি নয়, কারণ মস্তিষ্কের বাকী ৯০ শতাংস বিলুপ্তপ্রায় অঙ্গের পরিশিষ্ট অংশ নয়। ভ্রুনাবস্থা ও শৈশবে মস্তিষ্কের গঠনে এবং পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় কর্মক্ষম রাখতে প্রচুর এনার্জি প্রয়োজন হয়। বিবর্তনের ধারায় উদ্ধৃত ব্রেইন টিস্যু বহন করা বিবেচনাহীন মনে হবে। PET ও fMRI পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে, সহজ একটি কাজেও মস্তিষ্কের বেশিরভাগ অংশ কাজ করে। মস্তিষ্কে সামান্য আঘাতেও ভাষা, উপলব্ধি, চলন ও আবেগের উপর প্রভাব পরে। আমাদের মস্তিষ্ক ১০% এর অনেক বেশি পরিমাণেই কাজ করে যাচ্ছে সর্বক্ষণ কোন বিশ্রাম গ্রহণ করা ছাড়াই।
২। মস্তিষ্কের ডান ও বাম অংশের মধ্যে পার্থক্য করা
প্রচলিত মিথ হচ্ছে মস্তিষ্কের বাম অংশ যুক্তিতর্ক এবং ডান অংশ শৈল্পিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষ সকল ধরণের জ্ঞানীয় কাজের জন্যই উভয় হেমিস্ফেয়ারকে কাজে লাগায়। বাম ও ডান মস্তিষ্কের ধারণা উদ্ভূত হয়েছে মুলত অনেক মানুষ মনে করেন যে, বাম হেমিস্ফেয়ার ভাষা এবং ডান মস্তিষ্ক স্থানিক ক্ষমতা ও মানসিক অভিব্যক্তি প্রকাশ করে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের ধরণের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য এই ধারণাটি কাজে লাগান। মস্তিষ্কের ইমেজিং পর্যবেক্ষণ করে এই ধরণের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে ডান মস্তিষ্ক সৃজনশীলতার কেন্দ্র বিন্দু। আসলে পড়াশুনা ও অংক কষার জন্য মস্তিষ্ক তাঁর উভয় পাশই সমান ভাবে ব্যবহার করে।
৩। মাথা বড় হলে মানুষ বুদ্ধিমান হয়
প্রচলিত এই ধারণাটি শরীরের অন্য অঙ্গের ক্ষেত্রে সঠিক হলেও ব্রেইন এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তিমি মাছের সাথে তুলনা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তিমি মাছের মাথা মানুষের চেয়ে ৬ গুণ বড়। তিমি বুদ্ধিমান প্রাণী এ কথা সত্য । কিন্তু মানুষের জ্ঞানের দক্ষতা তিমির চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি।
৪। মস্তিষ্কের ক্ষতি স্থায়ী হয়
ব্রেইন নিয়ে আরেকটি মিথ হচ্ছে যদি একবার ব্রেইনের কোন ক্ষতি হয় তাহলে তা চিরস্থায়ী হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান ধারণা হচ্ছে ব্রেইন তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে স্বাস্থ্যকর ও বিকল্প পথে।
৫। উচ্চাঙ্গ সংগীত শুনলে শিশু বুদ্ধিমান হয়
প্রচলিত মিথ “Mozart effect” এর উপর বিশ্বাস করাটা বেশ প্রলুব্ধকর। কিন্তু এই ধারণার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, ক্লাসিক্যাল মিউজিক বা উচ্চাঙ্গ সংগীত শুনলে শিশু বুদ্ধিমান হয়।
৬। ব্রেইন গেইম স্মৃতিশক্তি ও যুক্তির দক্ষতার উন্নতি ঘটায়
প্রচলিত এই ধারনাটি নিয়ে BBC অনুমোদিত একটি গবেষণায় ১৮-৬০ বছর বয়সের ৮,৬০০ মানুষকে সপ্তাহে ৩ দিন প্রতিদিন ১০ মিনিট করে স্মৃতিশক্তি ও যুক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির ব্রেইন গেইম খেলতে দেয়া হয়। ৬ সপ্তাহ পরে অন্য বিষয়ের তুলনায় স্মৃতিশক্তি বা যুক্তির দক্ষতার তেমন কোন উন্নতি লক্ষ করা যায়নি।
৭। চাপের মধ্যে ব্রেইন ভালো কাজ করে
যদিও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার চাপ কঠিন পরিশ্রমের জন্য উদ্বুদ্ধ করে কিন্তু এটি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার জন্য ভালো ফল বয়ে আনেনা। আসলে এটি স্বাভাবিক কাজের ক্ষতি সাধন করে।
এই রকম আরো কিছু প্রচলিত মিথ হচ্ছে, কোন মানুষের আইকিউ সারাজীবন একই রকম থাকে, স্মৃতিশক্তি হচ্ছে আপনি যা দেখছেন ও যে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন তার সঠিক হিসাব, যাদের বাম মস্তিষ্ক সক্রিয় তারা অনেক বেশি সংঘটিত হয় এবং ডান মস্তিষ্ক যাদের বেশি সক্রিয় তারা সৃজনশীল হয়, ৪০ বছরের পর থেকে ব্রেইনের কর্ম দক্ষতা কমতে থাকে ইত্যাদি।
লিখেছেন-
সাবেরা খাতুন
ফিচার রাইটার, প্রিয় লাইফ
প্রিয়.কম