শুনে অবাক হচ্ছেন জানি। ভাবছেন, মাছ আবার ডাক্তার হয় নাকি? অবিশ্বাস্য হলেও ব্যাপারটি সত্য। বিভিন্ন প্রজাতির অনেক মাছ রয়েছে যারা বিনা পয়সায় মাছদের বিভিন্ন রোগ যেমন- চামড়ায় ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক জনিত ঘা, আঁইশের নিচের ছোট ছোট পোকা মাকড়ের বাসা বাঁধা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা করে থাকে। এই ডাক্তার প্রজাতি মাছের মধ্যে রয়েছে রেসিমাছ, পাইলট মাছ, অ্যাঞ্জেল মাছ ইত্যাদি। এরা চিকিৎসা দেওয়ার জন্য রীতিমতো চেম্বার খুলে বসে। রোগী মাছ চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে আসে। ডাক্তার একে একে রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে উপযুক্ত চিকিৎসা করে।
এসব ডাক্তার মাছ বিভিন্ন পদ্ধতিতে রোগীর সেবা করে থাকে। যেমন- ব্যাকটেরিয়াজনিত ঘা রোগের জন্য ডাক্তার মাছ প্রথমে তার মুখ দিয়ে ঠুকয়ে ঠুকরে ঘায়ের উপরের ময়লা সরিয়ে ক্ষতস্থানটি জীবাণুমুক্ত করে, নিজের মুখে থাকা মলম ঘায়ের ওপর লাগিয়ে দেয়। আর তাতেই রোগীর উপশম হয়।

ডাক্তার মাছরা চিকিৎসার আগে নিয়ম মতো রোগ পরীক্ষা করে। রোগীর উপর নিচে গিয়ে ঘা এবং পরজীবী আছে তা শনাক্ত করে। কখনো কখনো মাছকে তার ফুলকা খাড়া করতে হয়। কান ও মুখ খুলে দেখাতে হয়। তারপর সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরিষ্কার করে চিকিৎসা করে। এ ডাক্তার মাছের মধ্যে এক শ্রেণীর ডেন্টিস্ট মাছও আছে। যারা বড় দাঁত ওয়ালা মাছদের দাঁতের চিকিৎসা করে। কারণ এ ধরনের দাঁতওয়ালা মাছে মুখে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া জন্মে। তাই এ মাছকে শরণাপন্ন হতে হয় ডেন্টিস্ট মাছ রেসির কাছে। আর সে নির্ভয়ে মাছের মুখের ভেতর ঢুকে দাঁত ও মুখের ঘা পরিষ্কার করে।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সাগরে সাধারণত ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক থাকলেও নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অনেক রোগী চিকিৎসার পর ডাক্তার মাছকে সাবাড় করে ফেলে। আসলে ডাক্তার মাছের চিকিৎসায় রোগী মাছ সুস্থ হয় কিনা এ বিষয়ে পরীক্ষা করার জন্য সিলমাস নামক একজন বিজ্ঞানী বাহামা দ্বীপের পানির একটি অংশ থেকে ডাক্তার মাছেদের সরিয়ে নেন এবং ওই স্থানে বাসকারী মাছের দিকে নজর রাখেন। ফলাফল মেলে আশ্চর্য জনক! যেখানে প্রচুর মাছের বাস ছিল তা কিছুদিনের মধ্যে কমতে থাকে। দু'সপ্তাহের মাথায় সেখানে প্রকৃত অর্থে কোনো মাছই ছিল না। যেগুলো ছিল সেগুলো ছিল রুগ্ন, শরীরে নানা অসুখ-বিসুখে ভরা। তাহলে অন্য মাছ গেল কোথায়? তাদের মধ্যে অনেক রোগে মারা গেছে আর বাকিরা তাদের ডাক্তার ডাকতে গেছে।
আরও দারুণ ব্যাপার হচ্ছে আজকাল পৃথিবীর অনেক দেশেই এই ডাক্তার মাছ ব্যবহৃত হচ্ছে মানব দেখের নানান রকম রোগ সারাতে। বিশেষ করে ত্বকে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ জাতীয় রোগ। এরপরও কি মাছের ডাক্তারি বিদ্যার প্রমাণের আর দরকার পড়ে?