ছবি সংগৃহীত

মাউসের ডিপিআই এবং পোলিং রেট নিয়ে কিছু কথা

আবীর হাসান
লেখক
প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০৭:৪৭
আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০৭:৪৭

কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় কম্পোনেন্ট গুলোর মাঝে ‘মাউস’ একটি। এই মাউসই আবার দু’রকমের হিসেবে ভাগ করা হয়ে থাকে। ১। সাধারণ মাউস, এবং ২। গেমিং মাউস আমরা সাধারণ ভাবে অফিস আদালতে বা বাসায় যে মাউস ব্যবহার করে থাকি সেগুলো সাধারণ মাউসের পর্যায়ে পরে, এগুলোর দামও হয় কম। আর গেমিং মাউস গুলো প্রধানত ব্যবহার করা হয় গেম খেলার জন্য তবে সাধারণ কাজের জন্যেও এগুলো ব্যবহার করা যায়। গেমিং মাউসগুলো কিছুটা দামী হয়ে থাকে। গেমিং মাউস এর বিজ্ঞাপন গুলোতে ‘উচ্চমানের ডিপিআই’ এবং ‘পোলিং রেট’ এর উপর জোর দেয়া হয়ে থাকে। আজকে আমি এই দু’টি বিষয় সংক্ষেপে আলোচনা করব যাতে করে আপনারা যারা এই ‘ডিপিআই’ এবং ‘পোলিং রেট’ সম্পর্কে জানেন না তারা কিছুটা হলেও বিষয় দুটি বুঝতে পারেন। আসলে এই দু’টি ব্যাপার কি এবং আসলেই কি এই উচ্চমানের বিষয়গুলো কাজে লাগে ? – এই প্রশ্নের উত্তর দুটিই আমি ব্যখ্যা করতে চেষ্টা করব।

অপটিকাল মাউস নিয়ে বেসিক কিছু কথাঃ

আগেকার সময়ে মাউসের নিচে একটি রাবারের বল থাকতো, খুব বেশি আগের কথা নয়। এমনকি এখনোও হয়ত কোথাও কোথাও এরকম মাউস পাওয়া যাবে। সেই মাউসের সময় যখন ব্যবহারকারী মাউসটি ব্যবহার করত তখন সেই রাবারের বলটি আপনার হাতের মুভমেন্টের ডিরেকশনে ঘুরত এবং এই ঘুর্ননই কম্পিউটারে মাউস পয়েন্টারের অবস্থান জানিয়ে দিত। তবে বিরক্তির বিষয় ছিল যে রাবারের বলটি প্যাডে বা অন্য কোন সার্ফেসের উপর ঘোরার সময় এর ভেতরে ময়লা জমত এবং এটি খুলে পরিষ্কার করতে হত। তবে, সেই দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে, এখন আমাদের কাছে ‘অপটিক্যাল মাউস’ এবং ‘লেজার মাউস’ চলে এসেছে। আধুনিক ‘অপটিক্যাল মাউস’ এর স্ট্রাকচারে একটি লাইট থাকে, সাধারণত এই লাইটটি ‘লাল’ রঙের হয়ে থাকে। এই ‘অপটিক্যাল মাউসের’ গঠনে একটি ছোট্ট ক্যামেরাও সংযুক্ত থাকে। আপনি যখন একটি ‘অপটিক্যাল মাউস’ নাড়াচাড়া করবেন তখন মাউসের সাথে সংযুক্ত লাইটটি নিচের সার্ফেসে আলো পাঠাবে এবং ক্যামেরাটি প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ১০০টি ছবি তুলবে। মাউসটি তখন ছবিগুলোকে পর্যবেক্ষন করবে এবং এর মাধ্যমেই মাউস বুঝতে পারবে যে আপনি ঠিক কোন ডিরেকশনে মাউসটি নাড়াচ্ছেন। তখন মাউসটি সেই ‘মুভমেন্ট ডাটা’ আপনার কম্পিউটারে পাঠাবে মাউসের ইনপুট হিসেবে, এবং মাউসের সেই ইনপুট সিগন্যাল পাওয়ার পরেই আপনার কম্পিউটারটি কার্সরকে সেই ডিরেকশনে নিয়ে যাবে। লেজার মাউসের ক্ষেত্রেও কার্যক্রম ঠিক একই শুধু মাত্র লেজার মাউসের ক্ষেত্রে ভিসিবল লাইট ব্যবহার না করে ইনফ্রারেড লাইট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ১

ডিপিআই (DPI) কী?

ডিপিআই এর পূর্নরূপ হচ্ছে ‘Dots per inch’ (DPI) – এটি মূলত একটি পরিমাপ যার মাধ্যমে মাপা হয়ে থাকে যে আপনার মাউসটি ঠিক কতটা স্পর্শকাতর (সেন্সেটিভ)। আপনার মাউসের ডিপিআই যত বেশি হবে, মাউসটিও আপনার মুভমেন্টের সাথে ঠিক ততটাই রেসপন্সিভ হবে। একটি উচ্চমানের ডিপিআই সেটিং করা মাউস আপনার ছোট্ট ছোট্ট মুভমেন্ট গুলো ডিটেক্ট করবে এবং সেই অনুপাতেই রিঅ্যাক্ট করবে। উচ্চমানের ডিপিআই কিন্তু আবার সবসময় ভালো ফলাফল দেয়না। কেননা, আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে আপনার হাতের অল্প একটু মুভমেন্টের ফলে আপনার মাউসের কার্সর প্রায় মনিটরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যাক! উচ্চমানের ডিপিআই সেটিংস মূলত কাজে লাগে যখন আপনি খুব নিখুঁত ভাবে কোন কিছুতে লক্ষ্য স্থির করতে চান। আমি একটি উদাহরণ ব্যবহার করলেই আপনার কাছে ব্যাপারটা সহজ হয়ে যাবে। ধরুন, আপনি একটি ফার্স্ট-পারসন শুটিং গেম খেলছেন। যখন আপনি খেলার সময় একটি স্নাইপার রাইফেলে জুম করে একটি ক্ষুদ্র বস্তুকে নিখুঁত ভাবে নিশানা করতে চাচ্ছেন তখন আপনি সাধারণ ভাবেই আপনার হাতটি খুব অল্প অল্প করে নাড়াবেন, এবং তখনই এই উচ্চমানের ডিপিআই সেটিংস কাজে আসবে। কেননা, আগেই বলেছি – উচ্চমানের ডিপিআই সেটিংস আপনার হাতের খুব সামান্য নাড়াচাড়াও ডিটেক্ট করে এবং সেই অনুপাতে রিঅ্যাক্ট করে থাকে। আবার ধরুন, আপনি নরমাল একটি বন্দুক ব্যবহার করে সেই একই গেমটি যখন খেলবেন তখন হাই ডিপিআই সেটিংস করা থাকলে আপনি ভালোভাবে শত্রুদের মারতেই পারবেন না, কেননা তখন মাউসের সেন্সেটিভিটি বেশি থাকবে। ঠিক একারনেই, দামী গেমিং মাউসগুলোতে ডিপিআই সেটিং এর জন্য বাটন দেয়া থাকে যার মাধ্যমে আপনি গেম খেলার মাঝেই ইচ্ছেমত আপনার মাউসের ডিপিআই সেটিং পরিবর্তন করে নিতে পারেন। ডিপিআই এর সাথে কিন্তু আবার মাউসের সেন্সিটিভিটি সেটিংসের সম্পর্ক নেই। এই দুটি ব্যাপার আবার আলাদা, যদিও আপাত দৃষ্টিতে একই মনে হতে পারে। ডিপিআই হচ্ছে মাউসের হার্ডওয়্যারের ধারনক্ষমতা, যেখানে সেন্সিটিভিটি শুধুমাত্র একটি সফটওয়্যারের সেটিং। উদাহরণস্বরূপ, ধরে নিচ্ছি আপনার একটি কম দামী মাউস আছে যার ডিপিআই অনেক কম। আপনি যদি এক্ষেত্রে আপনার সেন্সটিভিটি বাড়িয়ে দিয়ে থাকেন তবে আপনি যখন একটি ছোট্ট বস্তুকে টার্গেট করতে চাইবেন তখন মাউসের কার্সরটি স্মুথলি না গিয়ে দেখবেন জাম্প করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে। যেহেতু, আপনার মাউসের হার্ডওয়্যার ততটা সেন্সটিভ নয় তাই মাউসটি আপনার খুব সামান্য মুভমেন্ট নির্নয় করতে পারছেনা। আপনার অপারেটিং সিস্টেমের ডিফল্ট মাউস সেন্সিটিভিটি শুধু মাত্র সেন্সিটিভিটি বাড়িয়ে দিচ্ছে কিন্তু যেখানে আপনার মাউসের হার্ডওয়্যারের সেই ধারনক্ষমতাটুকু নেই তাই এক্ষেত্রে মুভমেন্ট স্মুথ হচ্ছেনা। আবার আপনি যদি একটি উচ্চমানের ডিপিআই সমৃদ্ধ মাউসে সেন্সিটিভিটি কমিয়ে রাখেন তখন আপনার মাউসের কার্সর খুব দ্রুত মুভ না করলেও যতটুকু মুভ করবে সেটুকুই হবে খুন স্মুথ। হাই ডিপিআই বিশিষ্ট মাউসগুলো মূলত বেশি কাজে লাগবে যখন আপনি একটি হাই-রেজ্যুলেশনের মনিটর ব্যবহার করেবেন। আপনি যদি একটি গেম একটি নিম্ন মানের রেজ্যুলেশনের ল্যাপটপে খেলে থাকেন (যেমন, 1366 x 768) তবে আপনার খুব বেশি পরিমানের ডিপিআই বিশিষ্ট মাউসের প্রয়োজন নেই। অপরদিকে, আপমি যদি 3840 x 2160 রেজ্যুলেশন বিশিষ্ট একটি 4K মনিটরে গেম খেলতে চান তবে আপনার জন্য একটি উচ্চমানের ডিপিআই সমৃদ্ধ একটি মাউস দরকার হবে কেননা তখন আপনাকে কার্সর মনিটরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যেতে আপনার হাতটিকে সম্পুর্ন ডেস্কের উপর নাড়াচাড়া করতে হবেনা! ২

পোলিং রেট কী?

একটি মাউসের পোলিং রেট হচ্ছে এটি ঠিক কতটা সময় পর পর আপনার কম্পিউটারকে কার্সরের অবস্থান জানাবে। পোলিং রেট হার্জ এককে পরিমান করা হয়ে থাকে। যদি একটি মাউসের ১২৫ হার্জ পোলিং রেট থেকে থাকে তবে এর মানে হচ্ছে মাউসটি প্রতি সেকেন্ডে এর অবস্থান ১২৫ বার কম্পিউটারকে জানাচ্ছে। অন্যভাবে বলতে গেলে, ১২৫ হার্জ পোলিং রেট বলতে বুঝায় যে মাউসটি এর অবস্থান সম্পর্কে কম্পিউটারকে রিপোর্ট করছে ৮ মিলি সেকেন্ড পর পর। তাহলে, এই হিসেব অনুযায়ী ৫০০ হার্জ পোলিং রেট এর অর্থ হচ্ছে মাউসটি এর অবস্থান কম্পিউটারকে প্রতি দুই মিলি সেকেন্ড পর পর জানাবে। একটি হায়ার পোলিং রেট বিশিষ্ট মাউসের পোলিং রেট সাধারণত এর কন্ট্রোল প্যানেল থেকে পরিবর্তন করা যায়। আবার কিছু কিছু মাউসের সাথেই হার্ডওয়্যার কী থেকে থাকে যাতে করে ইচ্ছেমত সময়ে যখন তখন পোলিং রেট পরিবর্তন করে নেয়া যায়। হাই পোলিং রেট আপনার হাতের মুভমেন্টের এবং মনিটরে কার্সরের মুভমেন্টের মাঝে ল্যাগ (সময়ের পরিমান) কমিয়ে দিতে পারে কিন্তু হাই পোলিং রেট প্রোসেসর বেশি রিসোর্স ব্যবহার করে থাকে কেননা, প্রসেসরকে মাউসের মুভমেন্টের উপর অনেক বেশি পরিমানে লক্ষ্য রাখতে হয়!

ডিপিআই এবং পোলিং রেটি – আসলেই প্রয়োজনীয়?

আসলে এই দুটি বিষয়ে অনেক বিতর্ক রয়ে গেছে। সবারই আলাদা আলাদা নিজস্ব মতবাদ আছে, এমনকি কিছু গেমিং মাউস নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান ডিপিআই –কে জরুরীর পর্যায়েও ফেলে দিয়েছেন। আমি শুরুতেও বলেছি যে ডিপিআই আসলে আপনার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে এবং প্রয়োজন সবারতো আর একরকম হয় না। আমি উপরেও ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছি যে ডিপিআই এক দিক দিয়ে বিবেচনায় ভালো আবার অন্যদিকে খারাপ। পোলিং রেট – আমার মতে আসলেই প্রয়োজনীয়। তবে ৫০০ হার্জ এবং ১০০০ হার্জের মাঝে তফাৎ নির্ধারন করাটা আবার কঠিন। আবার, যেহেতু হাই পোলিং রেট আপনার প্রসেসরের রিসোর্স বেশি ব্যবহার করে থাকে তাই এটিও আসলে আপনার প্রয়োজনের উপরই নির্ভর করছে। এখন আপনার যদি উচ্চ মানের পোলিং রেট দরকার না হয়ে থাকে তবে শুধু শুধু প্রোসেসরকে বেশি কাজের মধ্যে রেখে কি লাভ বলুন?

শেষকথা

হাই ডিপিআই এবং পোলিং রেট উপকারী হতে পারে তবে আমার মতে মোটেও আবশ্যক নয়। ব্যাপারটা এমন যে আমার একটি এলসিডি মনিটর আছে কিন্তু একটি এলইডি মনিটর কিনলে ভালো হয়, তবে না কিনলেই নয় – না ব্যবহার করলেই নয়, এমন কিছু কিন্তু নয়। তাই, হাই ডিপিআই এবং পোলিং রেট বিশিষ্ট মাউস কেনার আগে আপনার প্রয়োজনটা বিবেচনা করে দেখবেন। আজ এ পর্যন্তই, ভালো থাকুন।