
ছবি সংগৃহীত
মাইক্রোসফট অফিস 365
আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৩, ০৭:৩৭
সারাবিশ্বে কম্পিউটার ব্যবহারকারিদের কাছে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সিরিজের পরপরই সবচেয়ে পরিচিত একটি সফটওয়্যার হচ্ছে ‘মাইক্রোসফট অফিস’। বিভিন্ন সময়ের পরিবর্তন আর যুগের চাহিদায় হাজারো চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে MS Office এখন একটি জনপ্রিয় ব্রান্ডে রূপ নিয়েছে।
বিভিন্ন সংযোজন বিয়োজন তথা পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের ধারাবাহিকতায় নতুন সংযোজন ‘মাইক্রোসফট অফিস 365 হোম প্রিমিয়াম’।
বর্তমান পৃথিবী এখন ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের জালে আবদ্ধ। মাইক্রোসফট অফিস 365 হোম প্রিমিয়ামও ক্লাউড-এর আলোকেই ডিজাইন করা হয়েছে। তবে এটি কেনার জন্য নয়, বরং সাবস্ক্রিপশন ব��� চাঁদা দিয়ে ব্যবহার করার জন্য। এ ধরনের ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘সাবস্ক্রিপশন বেজড’ বা চাঁদাভিত্তিক। নির্দিষ্ট পরিমাণে সাবস্ক্রিপশন দিয়ে ক্লাউড সার্ভার থেকে এটি ডাউনলোড করে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে। আপনি এটি আগে যেভাবে MS Office ব্যবহার করতেন সেভাবেই ব্যবহার করবেন।
তবে আগের ভারসনগুলোর সাথে এটির পার্থক্য হচ্ছে, নতুন এই অফিসকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে আপনি আপনার পিসি বা ল্যাপটপে যেভাবে ব্যবহার করবেন, ক্লাউডেও ঠিক সেভাবেই করতে পারবেন। তাছাড়া অফিস 365 দিয়ে যেকোন জায়গায় বসেই ডকুমেন্ট এডিট করতে পারবেন, সেটা উইন্ডোজভিত্তিক ডেস্কটপ হোক বা হোক উইন্ডোজ ফোন, ওয়েব ব্রাউজার বা এমনকি অ্যাপল কম্পিউারও। এর কারণ হচ্ছে, অফিস 365-এর ব্যবহারকারিরা এটিকে পাঁচ ধরনের ডিভাইসে ইনস্টল করতে পারবেন। এক কথায় বলতে গেলে, অফিস 2013 বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অফিস অ্যাপ্লিকেশন স্যুইটের এ পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা আপগ্রেড ভারসন, এতে এমন সব নতুন ফিচার আছে যেগুলো আপনার অভিজ্ঞতায় যোগ করবে নতুন মাত্রা।
নানা ধরনের ভারসন
এরই মধ্যে হোম ইউজাররা অফিস 365 হোম প্রিমিয়াম 99.99 মার্কিন ডলারের বার্ষিক সাবস্ক্রিপশনের বিনিময়ে কিনতে পারছেন। এটিতে আছে ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, আউটলুক, পাবলিশার, ওয়ান নোট এবং সেই সঙ্গে আছে উইন্ডোজ 7, 8 (তবে ভিস্তা বা এক্সপি নয়) ও ম্যাক-এর জন্য তৈরি অফিস 2011-তে অ্যাকসেসের সুবিধা। আবার কলেজ ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মীরা অফিস 365 ইউনিভার্সিটি ভারসন কিনতে পারবেন 79.99 ডলারে, পুরো চার বছরের জন্য।
তবে এটিকে তারা ব্যবহার করতে পারবেন শুধুমাত্র দুইটি ডিভাইসে, এজন্য প্রতি মাসে খরচ হবে 20 ডলার। দুটো সার্ভিসের সঙ্গেই থাকছে মাইক্রোসফটের স্কাইড্রাইভ (SkyDrive) সার্ভিসে 27 গিগাবাইট ক্লাউড স্টোরেজ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্যও অফিস 354-এর একটি ভারসন ইতিমধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসের 27 তারিখে এসে গেছে।
অফিস অন দ্য ক্লাউড
মাইক্রোসফট কিন্তু এর আগেও ক্লাউডভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে, তার নামও ছিল এটাই - অফিস 365। তবে নতুন এই ভারসনের মাধ্যমে মাইক্রোসফট অফিসের ইতিহাসে একটি মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। তা হল, অফিস-এর ফোকাসকে ডেস্কটপ থেকে পুরোপুরি ক্লাউডভিত্তিক করে ফেলেছে; ঠিক যেভাবে তারা উইন্ডোজ 8-এর মাধ্যমে ডেস্কটপ থেকে ট্যাবলেটের দিকে ফোকাসকে নিয়ে গেছে। আপনি যদি আপনার ডকুমেন্টকে বাই ডিফল্ট স্কাইড্রাইভে না রেখে ডেস্কটপে রাখতে চান তাহলে আপনাকে Options মেনু থেকে Save to Computer by default নামে একটি অপশন সিলেক্ট করে দিতে হবে।
আপনি কোন ডিভাইস ব্যবহার করছেন তার ওপর নির্ভর করবে অফিস 365 কিভাবে কাজ করবে। এটিকে যখন ডেস্কটপ বা ইন্টেলভিত্তিক ট্যাবলেটে (যেমন মাইক্রোসফট সারফেসে প্রো) ব্যবহার করবেন তখন ফুল ফিচারড কিছু অফিস অ্যাপ্লিকেশন আপনার কম্পিউটারের ডিস্কে ইনস্টল হয়ে যাবে, এবং ওয়ার্ড, এক্সেল, আউটলুক ও বাকি অ্যাপ্লিকেশনগুলো দেখতে শুনতে ঠিক আগের মতই থাকবে।
একজন বিশেষজ্ঞ মাইক্রোসফট-এর কাছে জানতে চেয়েছিলেন অ্যান্ড্রয়েড, আইপ্যাড বা আইফোনের জন্যও অফিস 365-এর ভারসন আসবে কি না। উত্তরে মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে উত্তর দেয়া হয়েছে যে, নন-উইন্ডোজ প্লাটফর্মের জন্য (অর্থ্যাৎ অ্যান্ড্রয়েড, আইপ্যাড বা আইফোন) এখনই অফিসের কোনো ভারসন রিলিজ হচ্ছে না। তার মানে হচ্ছে, এখন না করলেও অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘোষণা আসার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সেটা কখন ঘটবে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
উইন্ডোজ 8 যেমন ট্যাবলেট মার্কেটে অ্যাপলের প্রতি মাইক্রোসফট-এর একটি জবাব, নতুন এই অফিস 365 ভারসন অন্যান্য ক্লাউডভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বী যেমন গুগল (গুগলডকস, যেটি প্রায় সব ডিভাইসেই চলে) ও অ্যাপল (অ্যাপল পেজেস, নাম্বারস ও কিনোট অ্যাপস, যা OSX ও IOS-এর বিভিন্ন ভারসনে চলে)-এর প্রতি একটি উত্তর। গুগলডকস অবশ্য একদিক দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছে, আর তা হল, সবার জন্য এটি ফ্রি। তবে বাণিজ্যিক ব্যবহারকারি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুগলডকস পেতে হলে পয়সা খরচ করতে হবে। অবশ্য গুগলডকস-এর তুলনায় মাইক্রোসফট অনেক বেশি শক্তিশালী একটি প্রোডাক্ট উপহার দিচ্ছে, কারণ গত বিশ বছর ধরে মাইক্রোসফট একটার পর একটা ফিচার অফিস-এর মধ্যে স্থান করে দিয়েছে।
অফিস 365 : নতুনত্ব
অফিস 2013-কে আসলে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও নতুনত্বের জন্যই বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। এ নতুন ধরনের স্টাইল অনেকটাই উইন্ডোজ 8-এর সরলীকৃত ডিজাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দেখতে ভাল এবং অফিসের আগের ভারসনগুলোর চাইতে এটি নেভিগেট করাও সহজ। আপনি যদি মাউসের তুলনায় কিবোর্ড ব্যবহারে বেশি স্বচ্ছন্দ হন তাহলে Alt কি-তে চাপ দিলে যে পপ-আপ রিবন ও মেন্যু আসবে তার অক্ষরগুলোকে কিবোর্ড থেকে ‘ট্যাপ’ করতে হবে। আর এর জন্য মাউসে হাত দেয়ারও দরকার হবে না। এটি আগের ভারসনগুলোতেও ছিল, তবে নতুন ভারসনে কাজগুলো করা সহজতর হয়েছে। অফিসের ব্যবহারকারিদের মধ্যে সম্ভবত MS Word-ই সবচেয় বেশি জনপ্রিয়। নতুন এই ভারসনে ওয়ার্ডও নতুনত্ব পেয়েছে। রিবন ইন্টারফেসের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। নতুন একটি ডিজাইন ট্যাব এসেছে যাতে ডিজাইন সংক্রান্ত আইকন ও কন্ট্রোলগুলোকে ‘পেজ লেআউট’ ট্যাব থেকে আলাদা করে নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে পেজ লেআউট ট্যাবটিকেও আগের চেয়ে সুন্দর দেখাচ্ছে। স্পেলচেক ডায়ালগ এখন এডিটিং উইন্ডোর ডান দিকে আলাদা একটি প্যানেলে চলে গেছে। ওয়ার্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এক্সেলও এখন আগের চেয়ে অনেক ‘এক্সেলেন্ট’ হয়ে গেছে। যুক্ত হয়েছে একটি নতুন ‘কুইক অ্যানালাইসিস লেন্স’, ডাটার ওপর যে কাজগুলো সবচেয়ে বেশি করা হয় সেসব কাজ বা অপশনে দ্রুত অ্যাকসেস করা যাবে এই লেন্সের সাহায্যে। আছে ‘ফ্ল্যাশ ফিল’ নামে নতুন একটি ফিচার যেটি ব্যবহার করে অন্য কলাম থেকে ডাটা নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে নতুন একটি কলাম পূর্ণ করা যায়। ওয়ার্ড ও এক্সেলের পাশাপাশি অফিস স্যুইটের অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনও এখন আগের চেয়ে আরো সুন্দর ও কার্যকর হয়েছে।