ছবি সংগৃহীত

বিজ্ঞান প্রতিদিন- স্বল্প খরচে ঘরেই তৈরি করুন সাবান!

দেয়া
লেখক
প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারি ২০১৪, ০৪:৪৯
আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৪, ০৪:৪৯

ভাবুন তো প্রতিদিন আপনি যে সব প্রসাধনী ব্যবহার করছেন সেগুলো আপনার ত্বকের জন্য কতটা উপকারী? বিশেষ করে যে সাবান ব্যবহার করছেন, তার মাঝেও থাকে ক্ষতিকর রাসায়নিক। সাবানের মোড়কের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন, এর উপাদানের তালিকা দেখলে মনে হবে সাবান তৈরি করতে কত শত উপাদান দরকার! মোটেই না। একেবারে হাতে গোনা কয়েকটি উপাদান দিয়ে আপনি নিজেই নিজের জন্য সাবান তৈরি করে নিতে পারবেন। ভাবুন তো, আপনার বাড়ির রান্নাঘরে তৈরি হচ্ছে আপনার নিজের হাতে তৈরি সাবান। শুধু তাই নয়, ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকেও এটা মুক্ত। বিজ্ঞান মানেই কি কেবল ভারী ভারী বইয়ের মাঝে থাকা দুর্বোধ্য সব নিয়মনীতি? নাকি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা মানেই শুধু ফিটফাট ল্যাবরেটরি আর বোতলে বোতলে ভরা সব রাসায়নিক? কোনটাই নয়! একদম সাধারণ কিছু উপাদান দিয়ে আপনি নিজেই তৈরি করতে পারবেন মজাদার একেকটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা। আর এই কাজ টি করার জন্য কোনও ল্যাবরেটরি প্রয়োজন হবে না, আপনার নিজের রান্নাঘরটিই যথেষ্ট! নারিকেল তেল আর টুকিটাকি কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি করে ফেলুন ঘরোয়া সাবান!

মূলনীতিঃ

সাবান তৈরিতে দুইটি মূলত জিনিস লাগবে, তেল এবং ক্ষার। এখানে আমরা ব্যবহার করবো খাঁটি নারিকেল তেল। দোকান থেকে বেশি দাম দিয়ে ব্র্যান্ডের তেল কিনতে হবে না, কমদামী কিন্তু খাঁটি নারিকেল তেল পেলেই চলবে। সাধারণত কমার্শিয়াল সাবানে ৫-৭ ধরণের তেল বা ফ্যাট ব্যবহার করা হয় কিন্তু আপনার জন্য নারিকেল তেলই যথেষ্ট। অন্য যে উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো ক্ষার বা লেই (NaOH) । এটা খুঁজে পেতে একটু কষ্ট হতে পারে আপনার তবে হার্ডওয়্যার বা রঙের দোকানে খুঁজলে পেয়ে যেতে পারেন। আর হ্যাঁ, অন্যান্য মজাদার পরীক্ষার মতো মজার হলেও এই সাবান তৈরির কাজটি আপনার বাচ্চাদের সামনে করবেন না, তাদের সাথে নিয়ে তো নয়ই। কারণ একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর তাছাড়া এখানে যেহেতু রাসায়নিক বিক্রিয়ার ব্যাপার আছে সুতরাং উপাদান মেপে মেপে দেওয়ার ব্যাপারেও থাকতে হবে সতর্ক।

কি কি লাগবেঃ

উপাদানঃ - ৯৩৫.৫ গ্রাম নারিকেল তেল - ১৩৭ গ্রাম ক্ষার - ৩৫৫.৫ গ্রাম পানি - ১৫ গ্রাম এসেনশিয়াল অয়েল (ইচ্ছে) - রঙ (ইচ্ছা) আনুষঙ্গিক উপকরণঃ - রাইস কুকার - চুলা - সসপ্যান - ডিজিটাল স্কেল - থার্মোমিটার - কাঁচের মেজারিং কাপ - কাঁচের বোল (মিশ্রণ তৈরির জন্য) - লম্বা হাতলওয়ালা প্লাস্টিকের চামচ - সাবানের জন্য ছাঁচ (ওভেনে পাউরুটি তৈরির স্টিলের ছাঁচ দিয়েই কাজ চলবে) - ছাঁচের ভেতরে দেবার জন্য পার্চমেন্ট পেপার - ধারালো ছুরি - নিরাপত্তার জন্য রাবারের গ্লাভস, চশমা, অ্যাপ্রন এবং লম্বা হাতাওয়ালা সুতির জামা - ভিনেগার ভরা বড় বোল ( কোনও কারণে হাতে ক্ষার লেগে গেলে সাথে সাথে এতে ডুবিয়ে নিতে হবে, তারপর সাধারণ সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে)

যা করতে হবেঃ

১) রাইস কুকার কম আঁচে চালিয়ে দিন এবং উপাদানগুলো মেপে ফেলুন। ২) কাঁচের একটি বোলে পানি নিন এবং এটা নিয়ে বাইরে চলে আসুন (বাড়ির বারান্দা, ছাদ বা বাগানের মতো খোলা কোনও জায়গায়)। সাথে করে নিয়ে আসুন ক্ষার এবং লম্বা হাতলওয়ালা চামচটি। আর এ সময়ে গ্লাভস, চশমা, মাস্ক এবং অ্যাপ্রন পরে থাকুন। খুব ধীরে ধীরে পানির সাথে ক্ষার মিশিয়ে নি। এ মিশ্রণটি গরম হয়ে যাবে এবং ধোঁয়া উঠবে। ধোঁয়া যেন ফুসফুসে না যায় যে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখুন। পাত্রে পানি নিয়ে তাতে ক্ষার মেশাবেন, ক্ষার নিয়ে পানি মেশাবেন না। ৫-১০ মিনিট মিশ্রণটিকে ঠাণ্ডা হতে দিন। ৩) নারিকেল তেল সসপ্যানে নিয়ে গরম করুন ১২০-১৩০ ফারেনহাইট পর্যন্ত। থার্মোমিটার দিয়ে দেখুন ঠিকমতো গরম হয়েছে কিনা। এরপর ওই গলে যাওয়া নারিকেল তেল আপনার রাইস কুকারে ঢেলে দিন।
৪) রাইস কুকারে সাবধানে ক্ষারের মিশ্রণ যোগ করুন এবং নাড়তে থাকুন। ক্রিমের মতো মসৃণ এবং ঘন একটা মিশ্রণ তৈরি হবার পর ঢেকে দিয়ে মৃদু আঁচে রাখুন। দুধ যেভাবে ফুলে ওঠে, সেভাবে এই মিশ্রণটাও পাত্রের গা বেয়ে ফুলে উঠে তারপর ভেতরের দিকে আবার বসে যাবে। মোটামুটি ৪৫ মিনিট লাগতে পারে প্রস্তুত হতে। ৫) কখন বুঝবেন এটা প্রস্তুত হয়ে গেছে? যখন এটাকে দেখতে ভেসলিনের মতো অর্ধ-স্বচ্ছ হয়ে উঠবে তখন। অল্প একটু আঙ্গুলে নিয়ে ঘষে দেখতে পারেন, মোমের মতো লাগলে বুঝবেন হয়ে গেছে। আর যদি হাতে একটু জ্বালা করে তবে বুঝবেন এখনো এতে ক্ষার রয়ে গেছে এবং আরেকটু গরম করতে হবে। ৬) যদি এসেনশিয়াল অয়েল ও রঙ যোগ করতে চান তবে মিশ্রণটি একটু ঠাণ্ডা হয়ে আসার পর যোগ করবেন। চাইলে এতে মেশাতে পারেন নানান ভেষজ দ্রব্য, গোলাপের পাপড়ি, নিমপাতা ইত্তাদিও। ৭) ছাঁচের মাঝে এই মিশ্রণ পুরে দিন। ভালো ফলাফলের জন্য একে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। তবে বেশিক্ষণ রাখলে এটা শক্ত হয়ে যাবে আর কাটা যাবে না। তাই কয়েক ঘণ্টার মাঝে এর চটচটে ভাব কেটে গেলে টুকরো করে ফেলুন। ৮) বাতাস চলাচল করে এমন কোনও স্থানে রেখে দিন যাতে ভালোভাবে শুকিয়ে যায়। এরপর ইচ্ছেমত ব্যবহার করতে পারেন। শুকনো এবং ঠাণ্ডা স্থানে স্টোর করে রেখে দিলে এটা বছরখানেক ব্যবহার করতে পারবেন।