ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশের নকশী পিঠা

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০১৩, ১৬:০৭
আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৩, ১৬:০৭

পিঠা খেতে পছন্দ করেন না, এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয় নানান ধরনের পিঠা। নকশি পিঠা এর মধ্যে অন্যতম। নকশি পিঠার উত্‍পত্তি কোথায়, কীভাবে এবং কোন অবস্থার প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছিল তার কোনো প্রমাণসিদ্ধ তথ্য এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে নবাব শায়েস্তা খাঁর আমলেও নকশি পিঠা প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। এই নকশি পিঠা কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার নিজস্ব সম্পদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় শস্যের সাথে নকশি পিঠার গভীর যোগসূত্র রয়েছে। আউশ ও আমন ধান যখন কৃষকের ঘরে ওঠে মূলত তখনই নকশি পিঠা তৈরি করা হয়। ভাদ্র-আশ্বিন কিংবা অগ্রহায়ন-পৌষ মাসে সাধারণত নতুন ধানের চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। এ সময় গ্রামের বধূরা তাদের বাপের বাড়িতে বেড়াতে যায় এবং তাদের উপলক্ষ করে তৈরি করা হয় নকশি পিঠা। এছাড়াও বিয়ে-শাদি, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, ঈদ, খাতনা, নবান্ন, শবে বরাত, শবে কদর ও অন্যান্য অনুষ্ঠানেও নকশি পিঠা তৈরি করা হয়। বিশেষ করে, বিয়ে ও নতুন জামাইয়ের সম্মানে নকশি পিঠার রয়েছে বিশেষ স্থান। পিঠা যাতে দেখতে সুন্দর ও স্বাদে ভরপুর হয় এবং বেশি দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় সেজন্য গ্রামীণ নারীরা বিভিন্ন আকারে, নকশায় ও মোটিফে নকশি পিঠা তৈরি করে থাকে। নকশি পিঠা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। পিঠা তৈরির পদ্ধতিতেও রয়েছে রকমফের। ঢেঁকিছাঁটা চালের গুঁড়া, চিনি, নারিকেল, তিল, তাল, ডিম, বাতাসা, মশলা, মিছরি, কলা ইত্যাদি ব্যবহার করে নানা ধরনের পিঠা তৈরি করা হয়। নানা উপকরণের পিঠাকে তেলে ভেজে, আগুনে সেঁকে, সেদ্ধ করে, ভাঁপ দিয়ে, রসে বা দুধে ডুবিয়ে ইত্যাদি নানা পদ্ধতিতে নকশি পিঠা তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত কয়েকটি নকশি পিঠা হলো - পুলি বা কুলি পিঠা, দৈলা পিঠা, চিতই বা চিতল পিঠা, ধুই পিঠা, পাটা পিঠা, জালি পিঠা, আন্দসা পিঠা, ডিজাইনা পিঠা, ফুল পিঠা, খোয়াসাগর বা পাতা পিঠা, কলসি পিঠা, কাদিয়া পিঠা, পলার পিঠা, ধাপড়া পিঠা, মিরা পিঠা, ঝুরি পিঠা, মুনিয়া পিঠা, কাজললতা পিঠি, কন্যামুখ পিঠা, জামাই মুচড়া পিঠা, পানপাতা পিঠা, সতীন পিঠা, শঙ্খলতা পিঠা, জামাই ভোলানো পিঠা ইত্যাদি।

নকশি পিঠার মধ্যে ফুল, মাছ, পাখি, পাতা, গৃহস্থালীর নানা সরঞ্জাম, চাঁদ, তারা, বর ও কনের মুখ, নৌকা, শঙ্খ ও জ্যামিতিক রেখার মতো বিভিন্ন ধরনের মোটিফ পিঠার অবয়বে দেখা যায়। নকশি পিঠা যাতে কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী ও নকশার দিক দিয়ে সুন্দর হয়, সেজন্য ছাঁচ ব্যবহার করা হয়। এখন মাটি, কাঠ, পাথর বা ধাতুর তৈরি নানা ধরনের ছাঁচ বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। শুধু খাদ্য হিসেবে পেটে নয়, নকশি পিঠা স্থান করে নিয়েছে লোকসাহিত্যেও! কাজলরেখা গীতিকায় ও ময়মনসিংহের লোকসংগীতে পিঠার গান শুনতে পাওয়া যায়। শুধু দেশে নয়, নকশি পিঠা তার নিজস্ব গুণ, বৈশিষ্ট্য ও স্বাদের কারণে বিদেশেও অনেক পরিচিতি লাভ করেছে।