ছবি সংগৃহীত

ফাংগাল ইনফেকশন হলে করণীয়

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০১৪, ১৬:৪০
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪, ১৬:৪০

(সাপ্তাহিক ‘সাপ্তাহিক’) - এই রোদ এই বৃষ্টি, এমনটাই চলছে এখন। এই আবহাওয়ায় শরীর কখনো ঘামে ভিজে থাকে নতুবা বৃষ্টির পানিতে। ফলে ত্বকে কিছু ছত্রাক সংক্রমণ (ফাংগাল ইনফেকশন) দেখা যায়। এ ব্যাপারে সাপ্তাহিক-এর সঙ্গে কথা বলেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ড হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. জাকির হোসাইন গালিব। কী ধরনের সংক্রমণ হতে পারে তা জানালেন তিনি। সাধারণত মাথার ত্বক ও শরীরের ত্বকই এতে আক্রান্ত হয়। শিশুরাও সংক্রমণের শিকার হতে পারে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরিফুর রহমান সাপ্তাহিক: ফাংগাল ইনফেকশন কী? অধ্যাপক ডা. জাকির হোসাইন গালিব: এটি একধরনের সংক্রমণ। ফাংগাস প্রধানত প্রোটিন খেয়ে বাঁচে। তাই শরীরের যেসব জায়গায় প্রোটিন থাকে, সেখানেই এই অসুখ দেখা যায়। যেমন ত্বকের ওপরিভাগ, চুলে ও নখে। যেসব জায়গায় ঘাম বেশি হয় সেসব জায়গায় এই সংক্রমণের প্রভাব দেখা যায়। এই অসুখটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশের অসুখ। শরীরের কোনো কোনো জায়গায়- হাতে, পায়ে, মুখে, শরীরের নানা জায়গায় এই ফাংগাল ইনফেকশনটি দেখা যায়। বিশেষ করে শরীরের বিভিন্ন খাঁজে অর্থাৎ চাপা ও ঢাকা জায়গায় এই ইনফেকশনের প্রকোপ বেশি। যেমন স্তনের নিচে, বাহুমূলে ইত্যাদি। পায়ে যে ফাংগাল ইনফেকশন হয় তাকে অ্যাথলেট ফুট বলা হয়। এই অংশটি খুবই চুলকায় এবং আঁশের মতো ওঠে, ফাটা ফাটা হয়ে যায়। এটি সাধারণত পায়ের আঙুলের ফাঁকে দেখা যায়। যারা বেশি খালি পায়ে ভিজে জায়গায় চলাফেরা করেন, জলে কাদায় হাঁটেন, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনেক সময় সাঁতারের জায়গা থেকে আসতে পারে। নখের যেকোনো অংশে হতে পারে। ত্বকের তুলনায় নখে ফাংগাল ইনফেকশন বেশি দেখা যায়। সংক্রমণ হলে নখের রং পাল্টে যায়। নখটি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। নখের চারদিকের ত্বক মোটা হয়ে যায়। মাথায়ও এই সংক্রমণ হতে পারে। সাধারণত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়। এটি অনেকটা জায়গাজুড়েই হয়। লাল হবে, চুলকাবে এবং পুঁজভর্তি একটা উঁচু ঢিবির মতো হয়ে উঠবে। এই জায়গাটি থেকে চুল উঠে যেতে পারে। তবে ইনফেকশন কমে গেলে চুল নতুন করে গজাবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ন্যাপির জায়গাতেও এই সংক্রমণের প্রকোপ দেখা যায়। মুখের ভিতরে একধরনের ফাংগাল ইনফেকশন হয়, একে বলা হয় থ্রাশ। ফাংগাল ইনফেকশন একই সঙ্গে শরীরের নানা জায়গায় হতে পারে। সাপ্তাহিক: ইনফেকশন হলে কী হয়? ডা. জাকির হোসাইন গালিব: ফাংগাসটি কী ধরনের এবং শরীরের কোন জায়গায় ফাংগাল ইনফেকশন হয়েছে তার ওপর শরীরে কী ধরনের লক্ষণ দেখা যায় বা অসুবিধা হয় সেটা নির্ভর করে। প্রথমে লাল হয়, খুব চুলকায় এবং অল্প খোসা খোসা মতো ওঠে। ত্বকটি শুষ্ক হয়ে যায়। ‘ছুলি’ একটি বিশেষ ধরনের ফাংগাল ইনফেকশন। এটি হয় প্রধানত হাতের ওপরের অংশে, পিঠে, গলায় এবং বুকে। ওই অংশের ত্বকটি দেখতে সাদা, গোলাপি বা হালকা কালো হতে পারে। যেখানে বেশি হয়, সেখানে ছাল উঠে যেতে পারে। যাদের খুব বেশি ঘামের প্রবণতা থাকে, তাদের ছুলি বেশি হয়। শীতকালে ছুলি নিজে থেকেই কমে যায়। সাপ্তাহিক: ফাংগাল ইনফেকশনের কারণ কী? ডা. জাকির হোসাইন গালিব: জামাকাপড়, চিরুনি, সুইমিং পুল থেকে প্রধানত এই রোগটি ছড়ায়। একজনের টুপি অন্যজন ব্যবহার করলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। বহুদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে হতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলেও সংক্রমণ হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এর অন্যতম একটি কারণ। জলের সংস্পর্শে বেশি থাকলে, শুকনো করে হাত-পা না মোছলে, সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন। কারও হয়েছে, এ রকম ব্যক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকলে সংক্রমণ হবে। সাপ্তাহিক: কী করে বোঝা যাবে ফাংগাল ইনফেকশন হয়েছে? ডা. জাকির হোসাইন গালিব: চোখে দেখেই সম্পূর্ণ বোঝা যায়। এ ছাড়া ত্বককে ঘষে ‘স্ক্রেপিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। আবার নখ ও চুলের অংশ পরীক্ষা করে বোঝা যায়। সাপ্তাহিক: প্রতিরোধ করার বিষয়ে যদি বলেন। ডা. জাকির হোসাইন গালিব: কিছু পরামর্শ ঠিক ঠিক মেনে চললে উপকার পাবেন। যেমন-স্নান করার পর বা ঘর্মাক্ত অবস্থায় এলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুকিয়ে নিন। প্রধানত শরীরের খাঁজগুলোকে শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরুন। সুতির কাপড় দ্রুত ঘাম শুকিয়ে ফেলে, ফলে ফাংগাল বাসা বাঁধতে পারে না। ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণ করুন। সাপ্তাহিক: ফাংগাল ইনফেকশনের চিকিৎসা কী? ডা. জাকির হোসাইন গালিব: বিভিন্ন অ্যান্টিফাংগাল ওষুধ, লোশন, ক্রিম, পেস্ট, শ্যাম্পু এবং পাউডার, নানাভাবে পাওয়া যায়। এগুলো যেখানে হয়েছে সেখানে লাগাতে হয়। যদি শরীরের অনেকখানি জায়গাজুড়ে হয় এবং মাথায় ও নখেও দেখা যায়। তাহলে লাগানোর সঙ্গে খাওয়ার ওষুধও দিতে হবে। যাদের বেশি চুলকায় তাদের অ্যান্টি-অ্যালার্জি ওষুধ খেতে হবে। ফাংগাল ইনফেকশনের চিকিৎসা খুবই ফলপ্রদ। অসুখ সেরে যাওয়ার দুই-চার সপ্তাহ পর্যন্ত ওষুধ লাগাতে হবে নতুবা অসুখটি আবার ফিরে আসবে।