ছবিটি রূপক, ফটো সোর্স- www.fleshaphotography.com
(প্রিয়.কম) জীবন থাকলে সম্পর্ক থাকবেই। আর সম্পর্ক থাকলে থাকবে সমস্যা। প্রতিদিন ফেসবুকের ইনবক্সে ও ই-মেইলে আমরা অসংখ্য সম্পর্ক ভিত্তিক প্রশ্ন পাই, যেগুলোর কথা হয়তো কাউকেই বলা যায় না। পাঠকদের করা সেইসব গোপন প্রশ্নের উত্তর দিতেই আমাদের নিয়মিত আয়োজন "প্রিয় সম্পর্ক"। আর সম্পর্ক ভিত্তিক সেই প্রশ্নগুলোর উত্তরে পরামর্শ দিচ্ছেন গল্পকার রুমানা বৈশাখী, এডিটর ইন চার্জ (লাইফ ও সায়েন্স), প্রিয়.কম।
আপনি চাইলে নিজের এমনই কোন একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যার কথা লিখে জানাতে পারেন আমাদের। আমরা প্রতিদিন চেষ্টা করবো বাছাইকৃত কিছু সমস্যার সমাধানে কাঙ্ক্ষিত পরামর্শটি দেবার। সমস্যার কথা লিখে জানান আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। নাম গোপন রাখতে চাইলে লিখে দেবেন "নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক"। আমাদের পেজ লিঙ্ক- https://www.facebook.com/priyolife
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।
"গত বছরের আগস্টে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক হয় স্কুল লাইফের এক ক্লাসমেটের সাথে। আমি ঢাকায় থাকি, সে থাকে ঢাকার বাইরে। সম্পর্কের শুরু থেকে এই পর্যন্ত সে অনেকবার মিথ্যা বলে আমার কাছ থেকে মোট ২৫,০০০ টাকা নিয়েছে। গত বছরের কোরবানীর ঈদে নাকি ঢাকা আসার সময় ট্রেনে তার মানিব্যাগ পকেটমার নিয়ে গেছিল, এই অজুহাতে প্রথমবার তাকে আমি ৩০০০ টাকা বিকাশ করে দেই। এরপর প্রজেক্টর কেনার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৭০০০ টাকা নেয়। সেটা নেওয়ার পরপরই একদিন জানায়, তাদের ভার্সিটির এক নেতা টাইপের ছেলে ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে তাকে ফাসিয়ে দিয়েছে এবং তাকে হুমকি দিয়েছে, ১৫ দিনের মাঝে ২০,০০০ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলবে। ওকে বাঁচানোর জন্য বহুকষ্টে ৭০০০ টাকা জোগাড় করে দিলাম।
ও কথা দিয়েছিল রোজার ঈদের সময় ঢাকা এসে আমার সাথে ইফতার করবে, আমাকে ঈদের ড্রেস কিনে দিবে। কিন্তু ঢাকা আসার পর ৩ দিন আমাকে ঘুরিয়ে অবশেষে একদিন সকালে দেখা করার সময় দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখে। আমার জেদ চেপে গেছিল বলে সেদিন ওর বাসার কাছাকাছি পর্যন্ত চলে গেছিলাম এবং ওর মাকে ফোন দিয়ে ওকে সামনে আনিয়েছিলাম। আন্টিকে ফোন দিয়েছিলাম বলে সে আমাকে বাজে গালি দিয়েছিল এবং আন্টিও আমাকে দোষ দিয়েছিল। তার হাতে টাকা নাই এই অজুহাতে আমাকে ড্রেসও কিনে দিল না, কিন্তু আমার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করল ঈদের পর তার দুলাভাইয়ের সাথে চায়না যাবে আর সেখান থেকে আমার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবে। ঈদের পর সে আর চায়না যায়নি। কিন্তু একদিন আমাকে ফোন দিয়ে বলল, আমি তোমার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তোমাকে ড্রেস কিনে দিব। আমি যদি তোমাকে একটা মোবাইল গিফট দেই, তুমি কি নিবা?
তারপর সে বলল,তার দুলাভাই চায়না থেকে কয়েকটা ফোন সেট এনেছে, সেখান থেকে কয়েকটা বিক্রি করতে চায়। আর তাই সে চাইছে আমাকে একটা ফোন আমাকে গিফট দিতে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ফাইভ। সে বলল, ফোনটার জন্য ১৫০০০ টাকা দেওয়া লাগবে, তুমি ৫০০০ দাও, বাকি ১০০০০ আমি দিব। যেহেতু তোমার মাথায় হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তাই আমি আমার কথা রাখতে চাচ্ছি। আমার কাছে ৫০০০ টাকা এক্সট্রা নাই, থাকলে আমিই দিতাম। টাকাটা আমাকে দিতে হবে না, তোমার কাছে কুরিয়ারের যে লোকটা ফোন নিয়ে যাবে তার হাতে দিও।
কিন্তু কয়েকদিন পর সে আমাকে জানাল, ফোনটা সে আগে নিজের কাছে কুরিয়ার করে আনতে পাঠিয়েছে কারণ সে টেস্ট করে দেখতে চায় ফোনটা ঠিক আছে কিনা। আমাকে বলল, তুমি ৫০০০ টাকা আমার ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দাও, আমি নিজে আরও ১০০০০ টাকা যোগ করে দুলাভাইয়ের কাছে দিয়ে দিব তারপর, তোমার ফোনটা তোমাকে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিব। জীবনে প্রথমবারের মত সে আমাকে কিছু একটা দিতে চাচ্ছে এই আনন্দে আমি তাকে বিশ্বাস করে ৫০০০ টাকা পাঠিয়ে দিলাম। তারও কয়েকদিন পর আবার আমার কাছে ২০০০ টাকা ধার চাইল। বলল, যেখান থেকে ইন্টার্ন শেষ করেছে সেখানে ২০০০ টাকা দেওয়া লাগবে। আমার ফুপু আমাকে ড্রেস কেনার জন্য ২০০০ টাকা দিয়েছিল, সেটা আমি ওকে দিয়ে দিলাম। সে আমাকে কথা দিয়েছিল ৯ তারিখে ফোনটা আমাকে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু ৯ তারিখে তাকে কল দিয়ে আমি তো পাই-ই নি, উল্টা আমি বারবার ফোন দিচ্ছিলাম বলে সে আমার ফোন নম্বরটা ব্লক করে দিয়েছে। তাকে ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটস আপে মেসেজ দিয়েছি সেগুলো দেখেও কোন উত্তর দিচ্ছে না।
প্রত্যেকবার টাকা নেওয়ার আগে সে আমাকে প্রতিজ্ঞা করেছে এই বছরের মাঝেই আমাদের এনগেজমেন্ট করে রাখবে, কিন্তু টাকা হাতে পাওয়ার পর তাকে সহজে ফোনে আর পাওয়া যায় না। যেহেতু সে ঢাকার বাইরে থাকে তাই আমি তার কাছ পর্যন্তও সহজে পৌছাতে পারি না। ১ বছরের সম্পর্কে তার সাথে ২ বার দেখা হয়েছে এবং এই ২ বারই আমি নিজে তাকে দেখা করার কথা বলেছি। আমরা যে ২ বার রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া করেছিলাম সেটার বিলও আমাকে দিতে হয়েছে। এবং হাতে টাকা নেই অজুহাতে তখন সে আমার কাছ থেকে আরও কিছু টাকা নিয়েছে। এখন আমার ফোন নম্বর ব্লক করে রেখেছে বলে তার সাথে আর যোগাযোগও করতে পারছি না।
সে আমার থেকে অনেক নিয়েছে, আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে, অপমান করেছে তবু এখনও আমি তাকে পাগলের মত ভালবাসি। তার কথা মনে হলে খুব কষ্ট হয়, নিজেকে সামলাতে পারি না। একদিন সে বলেছিল, আমি বাটপার না। তোমার সাথে সম্পর্ক যদি না থাকে তাহলে তোমার থেকে যত টাকা নিয়েছিলাম সব ফেরত দিব। কিন্তু এখন তার আচরণে মনে হচ্ছে সে সম্পর্ক রাখতে চায় না, আমার টাকাগুলোও ফেরত দিবে না। তাকে বহুবার বলেছি, তোমার যদি অন্য কাউকে ভাল লাগে বা আমাকে ভাল না লাগে তাহলে সরাসরি বলে দাও, যত কষ্টই হোক কোনদিন তোমাকে আর বিরক্ত করব না। কিন্তু সে হ্যাঁ না কিছুই বলে না। আমি বুঝতে পারি সে একটা বাটপার, মিথ্যাবাদী। তার সাথে থাকলে আমি কোনদিন ভাল থাকতে পারব না, তবু মনেপ্রানে তাকেই ভালবাসি এবং তাকেই চাই। সেটা না হলে যেভাবেই হোক আমার টাকাগুলো ফেরত চাই। কীভাবে এটা সম্ভব হবে?"
পরামর্শ:
সত্যি কথা বলি আপু, আমার মনে হয় না টাকাগুলো আপনি আর ফিরে পাবেন। আপনি একজনের সাথে প্রেম করেছেন, তাঁকে নিজের মনে করে টাকা দিয়েছেন, কোন লিখিত প্রমাণ বা কিছু তো রাখেন নি, তাই না? যদি তা না রেখে থাকেন, তাহলে আইনত টাকা উদ্ধার করার কোন উপায় নেই। আর যদি ফেসবুক , সেলফোন ইত্যাদি স্থানে এমন কোন মেসেজ বা প্রমাণ থাকে, যেখানে সে আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এমনটা উল্লেখ থাকে, তাহলে আপনি প্রমাণ সহ তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করতে পারেন। কিন্তু এতে তো আপনার পরিবার জেনে যাবে, অযথা আরও ঝামেলায় পড়বেন। ফলে এটাও মনে হয় আপনার জন্য সুবিধাজনক হবে না।
এখন আপনি যা করতে পারেন, ওই ছেলেটি যেহেতু আপনার প্রাক্তন ক্লাসমেট, নিশ্চয়ই এমন আরও কিছু ক্লাসমেট বা বন্ধু বান্ধব আছে আপনাদের, যারা কিনা আপনারও বন্ধু আর তাঁরও। এই সব বন্ধুদের মাঝে যদি ক্লোজ কেউ থাকে, তবে তাঁদের কয়েকজনকে আপনার অবস্থাটা খুলে বলুন। সে যে টাকা নিয়েছে, এটার প্রমাণ দেখান। এবং তাঁদের মাধ্যমে এই ছেলেটিকে চাপ প্রয়োগ করুন আপনার টাকা ফেরত দেয়ার জন্য। কয়েকজন বন্ধু মিলে চেপে ধরলে হয়তো কাজ হতে পারে। সেই বন্ধুদের মাধ্যমেই ছেলের বাড়িতেও প্রমাণ সরূপ সব দেখান, আপনি একলা দেখাতে গেলে উল্টো অপমানিত হতে পারেন।
আরেকটা কথা আপু, এই ছেলেটি আপনাকে ভালোবাসে না। আপনি তাঁকে যতই ভালোবাসেন না কেন, একটা কথা পরিষ্কার জেনে রাখুন যে এই ছেলেটির কছে সম্পর্ক কেবলই ব্যবসা। আমি নিশ্চিত যে সে আপনার মত আরও অসংখ্য মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে টাকা নেয় আর সেই টাকাতেই চলে। তাই এমন জানোয়ারের জন্য যত দ্রুত সম্ভব মন থেকে ভালোবাসা মুছে ফেলাই আপনার জন্য মঙ্গলজনক আপু।