
ছবি সংগৃহীত
প্রিয় লাভ ডায়েরি: জর্জ ও স্বর্ণার ভালোবাসার গল্পটি দেখে নিন ছবিতে
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৬:৩৮
আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৬:৩৮
আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৬:৩৮
(প্রিয়.কম)- পাঠকের জন্য, পাঠকেরই ভালোবাসার কাহিনী নিয়ে শুরু হলো "প্রিয় লাভ ডায়রি"। মিষ্টি একটা প্রেম বা বিয়ের গল্প সবার জীবনেই থাকে। আপনারও কি আছে এমনই একটি দুষ্টু-মিষ্টি ভালোবাসার কাহিনী? তাহলে দারুণ কিছু ছবি সহ যোগাযোগ করতে পারেন আমাদের সাথে। আপনার ভালোবাসার সেই মিষ্টি কাহিনী ছাপা হবে প্রিয়.কমের পাতায়, জানবে সারা বিশ্ব। নিজের ভালোবাসার কথা সকলকে জানাতে চাইলে ছবি সহ যোগাযোগ করুন আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। পেজ লিঙ্ক-https://www.facebook.com/priyolife

ভালোবাসা একেক মানুষের একেক রকম। কিছু কিছু ভালোবাসা বিয়ের আগে, কিছু আবার বিয়ের পরেই! কোনো কোনো ভালোবাসা একেবারে সিনেমার মতো, রুদ্ধশ্বাসে যার গল্প শুনি আমরা। কিছু গল্প আবার শুনে মনে হয়, আরে! এটা একদম আমার জীবনের মতো! চলুন, জেনে আসি তেমনই এক ভালোবাসার গল্প যা কিনা আমাদের খুব চেনা। হ্যাঁ, পড়াশোনা করতে করতে ভালোলাগা, ভালোবাসা আর তা থেকে শুভ বিবাহের গল্প শোনাবো আজ। আর তা হলো জর্জ এবং স্বর্ণার গল্প।

গল্পের শুরুটা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে, ২০১০ সাল সেটা। সেখানে ভর্তি হতে গিয়ে ভীষণ বিপাকে পড়ল স্বর্ণা আর তার মা। কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না স্টুডেন্ট সেকশন। এমন সময়ে প্রথম বর্ষের এক ছাত্র উদ্ধার করলো তাদেরকে। স্টুডেন্ট সেকশন দেখিয়ে দিলো বটে, কিন্তু তার চোখ আটকে গেলো স্বর্ণা নামের মেয়েটিতে। এই সেই জর্জ। সেই দিনের পর ঝটপট জর্জের কথা ভুলে গেলেও স্বর্ণাকে ঠিকই মনে রাখে জর্জ।হলুদ জামা পরা সেই মেয়েটিকে আরেকটু ভালো করে জানতে চায় সে। কয়েকবার করে পাঠায় ফেসবুক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, কিন্তু প্রতিবারেই তা ইগনোর করে যায় স্বর্ণা! এভাবেই চলতে থাকে দুজনের পড়াশোনা।
এরপর এলো ২০১২ সাল। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের গোল্ডেন জুবিলি প্রোগ্রামে নাচল স্বর্ণা। আর জর্জ? জর্জ নিজের র্যাপ গানের প্রতিভা দেখিয়ে দিলো লিংকিন পার্ক এর “ইন দি এন্ড” গানে।

প্রোগ্রামের ২-৩ দিন পর ফেসবুক ঘাটতে ঘাটতে স্বর্ণা দেখে জর্জ মাহমুদ নামের এক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। আরে, এটা সেই র্যাপার ছেলেটা না? রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করার পর কী মনে করে মেসেজও দেয় স্বর্ণা, র্যাপ পার্ফরমেন্স ভালো লেগেছে এই বলে। তখন থেকে শুরু কথা, টুকিটাকি মেসেজে আড্ডা। তখনো পড়াশোনা আর কেমন আছো- ভালো আছির গন্ডিতে আটকানো দুজন। হঠাৎ কি মনে করে জর্জ বলে ফেললো, আমি কিন্তু তোমাকে সেই ২০০৯ থেকে জানি। স্বর্ণা তো পড়লো আকাশ থেকে। সেকি! জর্জ এরপর একটু একটু করে বলে সেই ঘটনা। সব মনে আছে বলে অবাকই হয় স্বর্ণা। এমনকি তার পরনের হলুদ জামাটা পর্যন্ত ভোলেনি ছেলেটা! জর্জের পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট যে সে আগেও ইগনোর করেছে না জেনেই, এটাও জানা যায় তখনই।

গিটার শিখছিলো তখন স্বর্ণা। সুন্দর সুন্দর গানের লিঙ্কগুলো পাঠাতো জর্জ। একদিন জর্জের থেকে কিছু মুভি নেবার জন্য দেখা করে স্বর্ণা। দুজনের প্রথম দেখা হয় গাইনোকলজি ওয়ার্ডের করিডরে। পেন ড্রাইভের সাথে দুটো চকলেটও দিলো জর্জ। এরপর পেন ড্রাইভটা ফেরত দেবে কী করে? ফেরত দেবার জন্য সারিন্দা রেস্টুরেন্টে কফির আমন্ত্রন দেয় জর্জ।
তখনো ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি স্বর্ণা যে জর্জ তাকে পছন্দ করে। সারিন্দায় গিয়ে পেন ড্রাইভ নিয়ে আবার ফেরত। তবে সেদিনই প্রথম স্বরনার ফোন নাম্বার নেয় সে। এর অনেক পর, জুন মাসে জর্জের হঠাৎ মেসেজ, “যদি বলি তোমাকে ভালো লাগে?” স্বর্ণা তো ভীষণ অবাক। এতদিন তো মোটেও কিছু বোঝেনি।
“আমি তোমার থেকে এটা এক্সপেক্ট করিনি” অবাক হয়েই উত্তর দেয় স্বর্ণা।“আসলে এতদিন তোমাকে সিনিয়রই ভেবেছি। তবে এর বেশি যেওনা, আমাকে ভালোবাসা শুরু করোনা” মজা করে বলে স্বর্ণা। কিন্তু রসিকতার ছিটেফোঁটাও নেই জর্জের মধ্যে। আবারও সে বলি, “যদি বলি তোমাকে ভালোবাসি?”
এবার একেবারেই বাকরুদ্ধ স্বর্ণা। রেগেই গেলো মেয়েটা। “আমি ভেবেছিলাম তুমি অন্যরকম!” কয়েকদিন যোগাযোগ একদম বন্ধ দুজনের মাঝে। এরপর জর্জ ফোন করলো তাকে। “আর যাই করো, যোগাযোগ বন্ধ করে দিও না”- এই ছিলো তার অনুরোধ।

এরপর একটু একটু করে সামনে আগানো। কখন যেন নিজের হৃদয়ে তাকে জায়গা করে দিয়েছে স্বর্ণা তা বুঝেও উঠতে পারে না। একদিন প্রফের পরীক্ষা খারাপ হয়েছে বলে জর্জের ভীষণ মন খারাপ। তা দেখে স্বর্ণারও মনটা গেলো খারাপ হয়ে। বুঝতে পেরে জর্জ অবাক। “আমার জন্য মন খারাপ, তাহলে কি আমার জন্য ফিলিংস আছে তোমার?”
স্বর্ণা বুঝতে পারে একজন আরেকজনের উপর দ্রুতই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। একদিন জর্জ বলেই বসে, “I love you.” এরপর আর অপেক্ষা করতে না পেরে বেচার প্রশ্ন করেই বসে, “এবার কি স্বীকার করবে তুমিও যে আমাকে পছন্দ করো?”
স্বর্ণা স্বীকার করলো আরও ৩-৪ ঘন্টা পর। এরপর দুজনে একসাথে খেতে বের হলো সেই সারিন্দা ক্যাফেতে। স্কলারশিপের পুরো টাকাটা দিয়ে সেদিন স্বর্ণার জন্য চকলেট নিয়ে আসে জর্জ। এরপর স্বর্ণাকে দিয়ে আসার জন্য একই রিকশায় দুজনে, এই প্রথম। তবে মজার ব্যাপার হলো, দুজনকে একসাথে দেখে ফেলে তাদের এক সহপাঠী। সোহাগ নামের ছেলেটার তো চক্ষু চড়কগাছ!

কলেজের সবাই নাচের মেয়ে হিসেবে স্বর্ণাকে, আর র্যাপার হিসেবে জর্জকে চিনতো। তাই দ্রুতই সারা কলেজে ছড়িয়ে পড়ে দুজনের সম্পর্কের কথা। স্বর্ণা তো লজ্জায় শেষ!
এর কিছুদিনের মাঝেই দুজনের পরিবারে জানিয়ে দেওয়া হয় একে অপরের কথা। দুজনে একই ক্যাম্পাসে, তাই চুটিয়ে চলে প্রেম। প্রতি শুক্রবারে ডিনার একটা রুটিনের মতো হয়ে যায়। এর সাথে চলে ময়মনসিংহ শহর জুড়ে ঘোরাঘুরি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতের পিঠা খাওয়া, নদীর পারে প্রেম আরও কতো কি।

প্রেমের পাশপাশি থেমে থাকেনি পড়াশোনা। স্বর্ণার এক বছরের সিনিয়র হওয়ায় লাইব্রেরিতে বসেই তাকে পড়াতো জর্জ। আর স্বর্ণার কাজ ছিলো তাকে রান্না করে খাওয়ানো। বৃষ্টি হলেই জর্জের জন্য খিচুড়ি আর গরুর মাংস রান্না ছিলো আরেকটা বাঁধা রুটিন। খাবার নিয়ে মেয়েদের হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো স্বর্ণা, আর সেটা নিয়ে জর্জ ফেরত যেত ছেলেদের হোস্টেলে।

এক এক করে কেটে যায় অনেকগুলো মাস। ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই অনেকটা হুট করেই ঠিক হয় এনগেজমেন্ট। এরপর ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি হলুদ, এরপর বিয়ে হয় ৪ জানুয়ারি।
বিয়ের পর অবশ্য একটু বিরহেরই গল্প। কারণ স্বর্ণা এখনো ময়মনসিংহে, আর জর্জ খুলনায়। ভালোবাসাবাসি এখন ফোন আর ভাইবারেই সীমাবদ্ধ। তাতে কী, একটা সময় নিশ্চয়ই তারা আবার ফিরে যাবে প্রতিদিনের পুরনো রুটিনে। নববিবাহিত এই তরুণ দম্পতির জন্য রইলো অনেক শুভকামনা।\

লিখেছেন
কে এন দেয়া
অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, প্রিয় লাইফ
প্রিয়.কম
১ ঘণ্টা, ৯ মিনিট আগে
১ ঘণ্টা, ৯ মিনিট আগে
১ ঘণ্টা, ১২ মিনিট আগে
১ ঘণ্টা, ১৪ মিনিট আগে
১ ঘণ্টা, ১৭ মিনিট আগে
১৩ ঘণ্টা, ২০ মিনিট আগে
১৩ ঘণ্টা, ২২ মিনিট আগে
২১ ঘণ্টা, ২৭ মিনিট আগে
২৩ ঘণ্টা, ১৫ মিনিট আগে