ছবি সংগৃহীত

প্রতারণা করে হাতে কামড় দিয়ে পালালেন নায়িকা নদী

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ০৫:০১
আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ০৫:০১

(প্রিয়.কম) ২০০৩ সালে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করে প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করা নায়িকা নাসিমা আক্তার নদী জড়িয়ে পরেছেন প্রতারণা এবং মাদক ব্যবসায়। সম্প্রতি রাজধানীর একটি শপিং মল থেকে প্রতারণা করে জিনিস ক্রয় করে টাকা দেওয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে মলের ম্যানেজারের হাতে কামড় দিয়ে পালিয়ে যান। অশ্লিলতার অভিযোগে এফডিসিতে নিষিদ্ধ হবার পর এবার অভিনব প্রতারণায় জড়িয়েছেন চিত্রনায়িকা নদী। অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি এসব কাজে জড়িয়েছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। শনিবার দুপুরে মহাখালীর গুলশান লিংক সড়কের ২৪৭/২৪৮ মাল্টিপ্ল্যান স্পোর্টস নামে একটি দোকান থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ব্যায়ামের যন্ত্র পছন্দ করেন নদী। এ সময় নিজেকে চলচ্চিত্রের নায়িকা হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি দুবাই থেকে এসেছেন। তার কাছে থাকা ডলার ও দিনার ভাঙানোর সময় পাননি। এগুলো ভাঙিয়ে তাকে দাম পরিশোধ করতে হবে। এজন্য তাকে কাওরান বাজার বা গুলশানে যেতে হবে। এ সময় দোকানের কর্মচারীদের তিনি ডলার গিফট করেন। এক পর্যায়ে তার গাড়ি থেকে একজন নেমে জানান, গাড়ির চাকা পরিবর্তন করতে হবে। এ সময় নদী দোকানের ম্যানাজারের নিকট ৫০ হাজার টাকা চেয়ে বলেন ডলার ভাঙিয়ে তিনি টাকা ফেরত দেবেন এবং ব্যায়ামের যন্ত্রটি কিনে নেবেন। তিনি দোকানে কাউকে তার সঙ্গে দিতে বলেন। তখন নদীকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। তার সঙ্গে যান ওই দোকানের সহকারী ম্যানেজার শামীম আহমেদ। নদীর ব্যবহৃত কালো রঙের গাড়িতে নদীসহ ছিল চার জন। গাড়িতে ওঠার পর গুলশান ১-এর বলাকার মোড়ে গাড়ির গতি কমানো হয়। এসময় শামীম আহমেদকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয় নদীর সঙ্গীরা। শামীম আহমদ তখন ছিনতাইকারী, ছিনতাইকারী বলে চিৎকার করলেও নদী ও তার সঙ্গী চার পুরুষের চেহারা দেখে কেউ বিশ্বাস করতে পারেননি যে তারা ছিনতাইকারী। প্রতারক চক্র দ্রুত গাড়ি নিয়ে পালাতে চাইলে পুলিশ ধাওয়া করে। এসময় উপস্থিত লোকজন-পুলিশের ধাওয়ার শিকার হয়ে নদী ও তার সঙ্গী ওয়ালিদ পালিয়ে যান। নদীকে আটকানোর চেষ্টা করলেও শামীমের হাতে কামড় দিয়ে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তবে তার অন্য দুই সঙ্গীকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হচ্ছে টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের চৈতট গ্রামের দুলাল হোসেনের পুত্র ফারুক হোসেন ও মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরের চরসিলই গ্রামের মোতালেব সরকারের পুত্র অহিদুল হোসেন। এসময় তাদের গাড়ি থেকে তের পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী, মেয়েদের বস্ত্র জব্দ করা হয়। এ বিষয়ে উপ-পরিদর্শক আবদল মান্নাফ বাদী হয়ে গুলশান থানায় ও মাল্টিপ্ল্যান স্পোর্টসের সহকারী ম্যানেজার শামীম আহমেদ বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দু’টি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় গত শনিবার নদীর দুই সহযোগীকে পুলিশ আটক করে। ঘটনার পর থেকে নদী পলাতক। আটককৃতরা পুলিশকে জানান, নদীর আয়ের উৎস এখন নানাভাবে প্রতারণা ও মাদক ব্যবসা। মাদক ব্যবসার জন্য ইতিমধ্যে ইয়াবা সুন্দরী হিসেবে পরিচিতি গড়ে উঠেছে তার। এছাড়াও অর্থের বিনিময়ে বিত্তশালীদের প্রমোদ ভ্রমণের সঙ্গী হন তিনি। পুলিশ জানায়, অর্থ উপার্জনের জন্য নদী একটি প্রতারক চক্র গড়ে তুলেছেন। ওই চক্রের সদস্যরা নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত করতো। তাদের দু’জন নদীর বাসাতেই থাকতো। ওই বাসাতেই ইয়াবা সেবন করতেন নদী ও তার সঙ্গীরা। এছাড়া প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমনকি দেশের বাইরেও প্রমোদ ভ্রমণের সঙ্গী হন নদী। এক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে তিনি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বন্ধুদের সঙ্গে উপস্থিত থাকতেন নদী। এ চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা বিক্রি করেন নদী। নদী ও তার সঙ্গীরা মূলত ইয়াবার ডিলার। পরিচিতজনদের কাছে ইয়াবা সুন্দরী হিসেবেই পরিচিতি গড়ে উঠেছে তার। আটককৃতরা জানায়, নদী ও তার সহযোগিরা অভিজাত শপিং মলের ক্রেতা সেজে প্রতারণা করেন। গুলশান-বনানীর বিভিন্ন শপিং মলের এরকম প্রতারণা করেছে নদীর ওই চক্র। বিভিন্ন স্থানে অভিনব পন্থায় প্রতারণা করা ও মাদক বিক্রিই তাদের পেশা। উল্লেখ্য, নায়িকা নাসিমা আক্তার নদী দীর্ঘদিন ধরে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সড়কের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। স্বামী মারা গেছেন কয়েক মাস আগে। অশালীন চলচ্চিত্রে আপত্তিকর অভিনয়ের অভিযোগে চার বছর আগে এফডিসিতে নিষিদ্ধ হন। তারপর থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য বেছে নেন ভিন্নপথ। অশ্লীল ছবির নায়কা হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন নদী। অভিনেতা মান্না ও শাকিব খানের সঙ্গে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু অশ্লীলতার অভিযোগে তাকে একবার চলচ্চিত্রে নিষিদ্ধ করা হয়। গত কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্রে কোন ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি।