ছবি সংগৃহীত

পৃথিবীর সবচাইতে "বিষধর" ৭টি প্রাণী

Abhijit Mojumder
লেখক
প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১৬:৩৭
আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ১৬:৩৭

পৃথিবীতে কিছু প্রাণী আছে যাদেরকে দেখলে আদর করতে ইচ্ছে করে, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আবার কিছু প্রাণী এতোটাই বিষাক্ত যে এদের বিষের সামান্য স্পর্শে মৃত্যু ঘটতে পারে আপনার। আচ্ছা বলুন তো, পৃথিবীর সবচাইতে বিষাক্ত প্রাণীর তালিকায় এক নম্বরে আছে কোন প্রাণীটি? ভাবছেন সাপ? একদম নয়! পৃথিবীর সবচাইতে বিষাক্ত প্রাণীটি হচ্ছে এক রকমের জেলিফিশ! সাপ আছে বটে, তবে দ্বিতীয় অবস্থানে। আর তৃতীয় অবস্থানে আছে এক রকমের শামুক! অবাক লাগলেও এটাই সত্য। আসুন জেনে নেই বিস্তারিত, দেখে নেই ছবি!

১) বক্স জেলিফিশ

সবচেয়ে বিষধর প্রাণীর মধ্যে বক্স জেলিফিশ আছে একদম এক নম্বরে। ১৯৫৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বক্স জেলিফিশের আক্রমনে ৫,৫৬৭ টি মৃত্যু নথিভুক্ত করা হয়েছে। এদের বিষ বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক বিষ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। বক্স জেলিফিশের বিষ আক্রান্তের হৃৎপিণ্ড ,স্নায়ুতন্ত্র এবং ত্বকের কোষ আক্রমণ করে। এদের বিষ এতোই মারাত্মক যে মানুষ পর্যন্ত মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে। অবিলম্বে চিকিৎসা না নিলে জেলিফিশের বিষ থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ দুষ্কর। এক্ষেত্রে ঔষধ হিসেবে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। আক্রান্ত হওয়ার ৩০ সেকেন্ড এর মধ্যে ভিনেগার গ্রহন করলে বিষ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। একটি জেলীফিশ লম্বায় ৩ মিটার এবং প্রস্থে ২৫ সেমি হয়ে থাকে। এদের ওজন প্রায় ২ কেজির মত হয়ে থাকে। সাধারণত উত্তর অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রে এবং ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরে বাস করে। এদের পেটে অনেক চোখ থাকে যার ফলে এদেরকে ভয়ংকর দেখায়। এদেরকে “সমুদ্রের বোলতা” বলা হয়। ২)শঙ্খচূড় সাপ(King Cobra)
সাপদের মধ্যে সবচে বড়ো হলো অজগর (Python)। কিন্তু বিষাক্ত সাপদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো- শঙ্খচূড়। গোখরো সাপের (Cobra) সঙ্গে খানিক সাদৃশ্য আছে এদের। তাই এদের রাজ-গোখরো বা King Kobra বলা হয়। ধারণা করতে পারো কতো বড়ো হয়! এরা প্রায় ১৮-২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। মাটি থেকে প্রায় ৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে ফণা তুলে দাঁড়াতে পারে। এদের বিষ ধারণ ক্ষমতাও মারাত্মক। যে পরিমাণ বিষ এরা জমা রাখে তাতে মানুষ তো মারা যায়ই, পূর্ণবয়স্ক একটি হাতিও মারা যায় মাত্র ৩ ঘণ্টায়। তবে এরা সাধারণত মানুষের কাছাকাছি আসে না। ফণা তুলে শুধু ভয় দেখাতে চায়। ছোট ছোট নির্বিষ সাপই এদের খাদ্য। এদের সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গলেই দেখা যায়। ৩)মার্বেল-কোণ শামুক(Marbled Cone Snails) মার্বেল-কোণ শামুকরা কোণ আইসক্রিমের মতো দেখতে। সব কোণ শামুকই বিষাক্ত, তবে এদের মধ্যেও সেরা হলো মার্বেল-কোণ শামুক। এদের খোলসটা দেখলে মনে হয়, মার্বেল পাথর দিয়ে মোজাইক (Mosaic) করা হয়েছে। তাই এদের এমন নাম। এদের দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ার উষ্ণ লবণাক্ত সামুদ্রিক জলরাশিতে। এরা দেখতে কিন্তু খুবই সুন্দর। সুন্দর হলে কি হবে! বিষধর প্রাণীদের তালিকায় যে এদের স্থান তৃতীয় অবস্থানে। (প্রচ্ছদের ছবি)

8) নীল রিং এর অক্টোপাসঃ

নীল রিং এর অক্টোপাস আকারে অনেক ছোট, অনেকটা গলফ বল আকৃতির। কিন্তু এদের বিষ এতটাই মারাত্মক যে মানুষের পর্যন্ত মৃত্যু হতে পারে। এক একটি নীল রিং এর অক্টোপাসে যে পরিমান বিষ থাকে তা ২৬ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এবং কোন প্রতিষেধক নেই। তারা বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বিষধর প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। এদের কামড়ে ব্যাথা অনুভূত হয় না কিন্তু এদের বিষ মুহূর্তের মধ্যে আক্রান্তের শরীর অসাড় করে দেয়, পেশী দুর্বল করে তোলে এবং শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যাঘাত ঘটায়। জাপান থেকে অস্ট্রেলিয়া মধ্যকার প্রশান্ত মহাসাগরে এদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। ৫)মরণ কাঁকড়া বিছে (Death Stalker Scorpion):
আমাদের দেশে যে ধরনের কাঁকড়া বিছে পাওয়া যায়, ডেথ-স্টকারও দেখতে অনেকটা সেরকমই। তবে বিষধর হিসেব করলে এরা কিন্তু অনেক ভয়ংকর! সাধারণত আমাদের দেশি কাঁকড়া বিছের কামড়ে কারও মৃত্যু হয় না। সামান্য কিছু জ্বালাপোড়া হয় মাত্র। কিন্তু এই মরণ কাঁকড়া বিছের নাম শুনলেই বোঝা যায় , এদের বিষ কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। এদের বিষে অসহ্য ও তীব্র ব্যথা হয়, জ্বরও হয়। ফলে প্রাণী অচেতন হয়ে শেষে মারা যায়। এদের পাওয়া যায়, উত্তর আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্যের মরু এলাকায়। ৬)পাথুরে মাছ (Stone fish):
বিষধর ক্ষমতার মতোই এরা দেখতেও মারাত্মক কুৎসিত। মাছের মধ্যে এরাই সবচেয়ে বিষধর। বিষের আক্রমণে প্রথমেই প্রাণী হঠাৎ আঘাত পায়, এর পর প্যারালাইসিস হয়ে প্রাণীদেহের কোষগুলোর মৃত্যু ঘটে। শেষে প্রাণীটি মারা যায়। ৭)ব্রাজিলের যাযাবর মাকড়সা(The Brazilian wandering spider):
২০০৭ সালে 'গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস' এ জায়গা করে নিয়েছিলো এই মাকড়সা। এটা হলো পৃথিবীর সবচে বিষধর মাকড়সা। শুধু তাই নয়, মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী মাকড়সাদের মধ্যে এরাই সবচে এগিয়ে। তারচেয়েও ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে- এদের যাযাবর স্বভাব। যেকোন জায়গাতেই এরা লুকিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কোনো বাসস্থান তৈরি না করে মানুষের আশ-পাশেই ঘুরে বেড়ায়।