ছবি সংগৃহীত

পরোক্ষ ধূমপান কীভাবে ক্ষতি করে একজন গর্ভবতী নারীর?

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০১৪, ০৪:১৩
আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৪, ০৪:১৩

ধূমপানে বিভিন্ন রকমের ক্ষতি হয়ে থাকে শরীরের। গর্ভাবস্থায় নারীদের থাকতে হয় নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন আর তাই এ সময়ে তাদেরকে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কিন্তু তার মানে এই নয়, যে নিজেরা ধূমপান না করলেও ধূমপানের প্রভাব থেকে তারা মুক্ত থাকতে পারবেন। গর্ভবতী নারীর কাছের কেউ যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন (বিশেষ করে তার স্বামী) তবে পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে গর্ভপাতের আশঙ্কা থেকেই যায়। এমনকি শুধু গর্ভাবস্থায় নয়, জীবনের সব ক্ষেত্রেই ধূমপানের সংস্পর্শে থাকার কারণে তাদের গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে।

কি মাত্রায় ক্ষতি করতে পারে পরোক্ষ ধূমপান?

এ তথ্য জানা গেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়, যেখানে মেনোপজ পরবর্তী সময়ে প্রায় ৮০ হাজার নারীর জীবনের ব্যাপারে তথ্য নেওয়া হয় এবং তামাকের ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকায় তাদের অতীতের গর্ভাবস্থা কিভাবে প্রভাবিত হয়েছিল তা জানার চেষ্টা করা হয়। এই গবেষণায় অংশ নেওয়া ৪১ হাজার নারী কখনোই ধূমপান করেননি। কিন্তু এই অধূমপায়ীদের মাঝে এমন অনেকে ছিলেন যারা শৈশবে বা পরবর্তীতে ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে পরোক্ষ ধূমপানের আওতায় ছিলেন। অন্যদের তুলনায় এদের মাঝে ১৭ শতাংশের গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে, ৫৫ শতাংশের ক্ষেত্রে মৃত সন্তান জন্ম নেয় এবং ৬১ শতাংশের ক্ষেত্রে এক্টোপিক প্রেগনেন্সি দেখা যায় (অর্থাৎ জরায়ুর বাইরে স্থাপিত হয় ভ্রূণ এবং তার ফলে টিকে থাকতে পারে না)। যারা জীবনে এতো বেশি সময় পরোক্ষ ধূমপানের আওতায় কাটাননি, তাদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ হতে দেখা যায় না। এই গবেষণার তথ্য থেকে ধারণা পাওয়া যায়, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে প্রতি বছর অনেক বেশি সংখ্যায় গর্ভপাত এবং সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হয়। ধূমপায়ী নারীদের মাঝে এই সব জটিলতার পরিমাণ আরও বেশি। অন্যদের তুলনায় তাদের গর্ভপাতের ১৬ শতাংশ বেশি ঝুঁকি থাকে এবং গর্ভের সন্তান মারা যাওয়ার ঝুঁকি থাকে ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়াও তাদের মাঝে দেখা যায় বন্ধ্যাত্ব এবং সন্তান ধারনে জটিলতা। তবে ধূমপায়ী নারীদের ক্ষেত্রে ধূমপানের প্রভাব যত ভালোভাবে বোঝা যায়, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার নারীদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব অনেকটাই ধোঁয়াটে।

গর্ভবতীর জন্য ধূমপান কতটা ক্ষতিকর?

সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে ৪ হাজারেরও বেশি ক্ষতিকর উপাদান, এর মাঝে রয়েছে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ এবং বিভিন টক্সিন। ঠিক কিভাবে এতো সব উপাদান গর্ভবতী নারী এবং তার শরীরের ভেতরে বেড়ে উঠতে থাকা ভ্রূণের ক্ষতি করে তা নিখুঁত ভাবে জানা যায় না, কিন্তু এটা ধরে নেওয়া হয় যে এসব পদার্থ মূলত হরমোনের স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি কিছু কিছু পদার্থ ভ্রূণের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিকার

একজন মানুষ নিজের এবং নিজের সন্তানের জন্য ধূমপান ত্যাগ করতে পারেন ঠিকই। কিন্তু নিজের কর্মক্ষেত্রে, জনবহুল এলাকায় এমনকি নিজের বাড়িতে যদি কেউ ধূমপান করেন, তবে তার ফলেও তো তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এক্ষেত্রে করার কি আছে? পরিবারের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করুন। নিজের স্বার্থে না হলেও অনাগত শিশুর স্বার্থে ধূমপান ত্যাগ করা উচিৎ মানুষের। শুধু তাই নয়, জনসমক্ষে ধূমপানের পরিমাণ কমিয়ে দিলেও নারীদের গর্ভাবস্থায় এসব জটিলতার পরিমাণ কমে আসতে দেখা যায়।