ছবি সংগৃহীত

নবীজির [সা.] শিক্ষা, করো না ভিক্ষা

priyo.Islam
লেখক
প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৪:০২
আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৪:০২

হাদিসের আলোকে ভিক্ষাবৃত্তি (১) হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে, নিশ্চয়ই সে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ভিক্ষা করে। সুতরাং তাকে বলে দাও সে কম-বেশি যা ইচ্ছা তাই ভিক্ষা করুক। (২) রাসূল (সরা.) বলেছেন, ভিক্ষুক আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত। (৩) আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) হতে বর্ণিত আছেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে মানুষ মানুষের কাছে ভিক্ষা করে, সে এমন অবস্থায় বিচারের দিন উপস্থিত হবে যে তার মুখে কোন মাংসই থাকবে না। (৪) হজরত যাবের (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, বেহেসত্ম ভিন্ন অন্য কোন কিছুই আল্লাহর ওয়াস্তে ভিক্ষা করা উচিত নয়। (৫) হজরত উমর (রা.) এর মতে, সন্দেহজনক জীবিকা ভিক্ষাবৃত্তি অপেক্ষা পছন্দনীয়। ভিক্ষাবৃত্তি যে কোন বৃত্তি নয়, বিশ্বনবী কর্তৃক সংগঠিত একটি ঘটনাই তার প্রমাণ বহন করে যা অনেকেরই জানা। (৬) এক ব্যক্তি তাঁর কাছে ভিক্ষা চাইতে এলে তিনি তাকে কাজ করে খেতে উপদেশ দেন। তিনি তার কম্বল বিক্রি করে সে অর্থের অর্ধেক দিয়ে সে দিনের খাবার ও বাকি অর্ধেকে কুঠার কিনে দিয়ে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে প্ররোচিত করেন। ভিক্ষাবৃত্তি ইসলাম সমর্থিত হলে তিনি তাকে কাজ করার উপযোগী না করে ভিক্ষা বৃত্তিতেই নিয়োজিত করতেন। ভিক্ষাবৃত্তিতে অন্যের কাছে অর্থনৈতিক সাহায্য বা খাবারের জন্য হাত পাতা হয়। রাসূল (সা.) তা কিভাবে পছন্দ করতে পারেন, যিনি নাকি সামান্য ব্যাপারেও পরনির্ভরশীলতাকে ঘৃণা করতেন? (৭) উষ্ট্রপৃষ্ঠে উপবিষ্টকালীন তাঁর হাতের লাঠিটি পড়ে গেলে হরজত আবু বকর (রা.) নিজে উট থেকে নেমে তা কুড়িয়ে দিতেন। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমার প্রিয় নবী (সা.) অন্য কোন আদম সমত্মান হতে কিছু প্রার্থনা করা পছন্দক রতেন না। (হজরত আবু বকর (রা.) স্বেচ্ছায় রাসূলে মাকবুল (সা.) এর জন্য তাঁর হয়ে কাজ করে দিতেন। এ ধরনের কাজ হাদিয়া বা সেচ্ছাসেবায় পর্যায়ে পড়ে যা ইসলামি আইনে বৈধ)। হজরত আবু বকর (রা.) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়। (৮) তিনি বলেন, রাসূল (সা.) আমার জন্য দোয়া করলেন এবং এর জন্য একটি শর্ত আরোপ করলেন, তুমি মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করতে পারবে না। আমি সম্মত হলাম। তিনি বললেন, তোমার হাতের লাঠিটি যদি পড়ে যায় তাও না, তুমি উচ থেকে নেমে আসবে এবং তা উঠিয়ে নেবে। ইসলামের খেদমতে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আমৃত্যু ইসলাম চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন এদের একজন আবদুল কাদের জিলানী (র.)। ভিক্ষাবৃত্তি সম্বন্ধে তার অভিমত ছিল অত্যমত্ম আপোষহীন। (৯) যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে জীবিকার জন্য হসত্ম প্রসারিত করে তাদেরকে তিনি ‘মুশরেক’ বলেছেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তিকে জীবিকা নির্বাহের উপায় বলে স্বীকার করেননি। ভিক্ষার সীমারেখা : (ক) রাসূল (সা.) বলেছেন, তিনটি কারণে ভিক্ষাকরা যেতে পারে। এ তিনটি কারণ ব্যতীত ভিক্ষা করা হারাম। কাবিসা বিন মাখরেক (রা.) বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ওহে কাবিসা, নিশ্চয়ই ভিক্ষা করা তিনটি কারণ ব্যতীত হালাল নয়। (ক) যদি কোন ব্যক্তি ঋণের জামিন হয় এবং ঋণ গ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় তবে সে ঋণ পরিশোধ করার জন্য ভিক্ষা করা হালাল যে পর্যমত্ম না জামিনের পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায়। তার পরই সে ভিক্ষা হতে নিবৃত্ত হবে। (খ) যদি আকস্মিক দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তির সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে জীবিকা না পাওয়া পর্যমত্ম অথবা (রাসূল সা.) বলেছেন, জীবিকার অবলম্বন না পাওয়া পর্যমত্ম ভিক্ষা করা হালাল। (গ) যদি কোন ব্যক্তি কল্পনাতীত অভাবে পতিত হয় যে পর্যমত্ম না তার সমাজ থেকে তিনজন সুবিবেচক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলেন, এ ব্যক্তি এরূপ অবিশ্বাস্য দারিদ্রে্য নিপতিত (যে দারিদ্রে ভিক্ষা ভিন্ন জীবিকার উপায় নেই) যে ভিক্ষা করতে পারে। এ অবস্থায় ভিক্ষা করা হালাল যে পর্যমত্ম না সে জীবিকার সন্ধান করতে পারে। ওহে কাবিসা, এছাড়া যে কোন কারণে ভিক্ষা হারাম এবং ভিক্ষা গ্রহণকারী হারাম অন্নই গ্রহণ করে। # মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান সৌজন্যে : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ