
ছবি সংগৃহীত
দাম কমালেও বড়পুকুরিয়ায় খনিতে পড়ে আছে ৩ লাখ টন কয়লা
আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ০৭:৫৯
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিঃ এর অব্যবস্থাপনা এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারনে চলতি মৌসুমে দু’দফা দাম কমিয়েও কয়লার ক্রেতা মিলছে না। খনিতে জমেছে কয়লার পাহাড়। যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। গত ১৫ দিনে কয়লার দাম দু’দফা কমিয়েও কয়লার ক্রেতা না মেলায় খনির ইয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন কয়লা মজুত পড়ে আছে। সামনের দিনে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এই কয়লার স্তুপে দুঘর্টনার সম্ভাবনা রয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষ গত ২০১২ সালে ইটপোড়ানো মৌসুমে কয়লার দাম প্রতিটন ১১ হাজার ১১৮ টাকা দরে ডিও পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি ইটভাটা ও বয়লার চালিত শিল্প কারখানায় মাসে ১শ’ টন কয়লা বরাদ্দ করে আবেদন গ্রহন শুরু করলে কয়লা ক্রয়ে হিড়িক পড়ে যায়। সাইকেলিং পদ্ধতিতে প্রতি কার্য দিবসে ২০টি ভাটা ও কারখানার বিপরীতে ২ হাজার মেট্রিক টন করে কয়লা সরবরাহ করা হয়। গত ২০১২ ডিসেম্বর মাস থেকে প্রায় ১ হাজার ৫’শ টি কয়লা ক্রয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইটভাটার কাপজপত্রাদি হাল নাগাদ পরীক্ষা করে কয়লা সরবরাহ করা হয়। কয়লা উৎপাদন কম থাকায় একবারের বেশী কোন ভাটা মালিক কয়লা পাননি। ফলে বাজারে কয়লার চাহিদা প্রচুর থাকায় প্রতিটি ১’শ টনের ডিও নির্ধারিত দরের চেয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা বেশী দরে বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভাটার কাগজ সংগ্রহ করে কয়লা ব্যবসায়ী এবং খনির কিছু কর্মকর্তাও ডিও নিয়ে তা অতিরিক্ত টাকায় বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সময় কয়লা উত্তোলন কয়েক মাস বন্ধ থাকায় কতৃপর্ক্ষ ঘোষনা দিয়ে কয়লা বিক্রি বন্ধ করে দেন।গত বছরের এপ্রিল মাস পযর্ন্ত অনুমোদিত আবেদনকারীদের ডিও’র কয়লা সরবরাহ করা হয়।গত বছরের শেষের দিকে চলতি ইট পোড়ানো মৌসুমে খনি কর্তৃপক্ষ কয়লা বিক্রি উন্মুক্ত না করায় ওই সুযোগ নিয়ে সরকারী দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আমলাদের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা পুর্বের দরে বিক্রি করে খনি কর্তৃপক্ষ। চাহিদা মতো কয়লা সংগ্রহ করতে না পারায় এবং কয়লা সংকটে পড়ার আশংকায় ইটভাটা মালিকরা বিশেষ বরাদ্ধ পাওয়া ব্যাক্তিদের কাছে প্রতি ১শ’ টনের ডিও কয়লার নির্ধারিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা বেশী দিয়ে কয়লা ক্রয় করেন।কয়লার পর্যাপ্ত বিক্রি না থাকায় খনি কর্তৃপক্ষের কয়লা ভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ওই সময় ভারতীয় নিন্মমানের আমদানীকৃত কয়লা কিনতে বাধ্য হন ভাটা মালিকরা। অনেকে ইন্দোনেশিয়ার আমদানী কয়লা কিনে ভাটার জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। দেশের ইট ভাটার জ্বালানী আমদানী করা কয়লার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বড়পুকুরিয়ায় কয়লা বিক্রি উন্মুক্ত করার সাথে সাথে কয়লার দাম প্রতিটনে প্রায় দেড় হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়।কয়লার মুল্য নির্ধারন করা হয় ১২ হাজার ৬শ’ ৫৮ টাকা। অথচ ইট পোড়ানোর ভরা মৌসুমে প্রতি টন ভারতীয় আমদানীকৃত কয়লা পরিবহন খরচ সহ ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায় ভাটা মালিকরা ক্রয় করেন। বড়পুকুরিয়ার কয়লা না পাওয়ায় তারা ভারতীয় নিন্মমানের কয়লা কিনে মজুদও করেন।ফলে কমে যায় ভাটা মালিকদের কয়লা ক্রয়।এর প্রভাব পড়ে কয়লা বিক্রির উপর।বর্তমানে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২শ’ টন কয়লা বিক্রির পরেও বর্তমানে কয়লার মজুদ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন বলে খনির একটি সুত্র জানিয়েছে। সুত্রটি আরো জানায়, গত ২ সপ্তাহ পুর্বে কয়লার বিক্রি কমে যাওয়ায় খনির বোর্ড মিটিং এ কয়লার দাম কমিয়ে আগের অবস্থানে আনা হয়।এতেও ক্রেতাদের সাড়া না পাওয়ায় এবং খনিতে কয়লা মজুদ বাড়তে থাকায় গত ১৫ দিনের মধ্যে আরো এক দফা দাম কমিয়ে গত বছরের দামের চেয়ে প্রায় ১ হাজার টাকা কমিয়ে প্রতি টন কয়লার দাম ১০ হাজার ২শ’ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। যা গত ২ ফেব্রুয়ারী থেকে কার্যকর করা হয়েছে। গত অর্থ বছর কয়লার ম্যানেজমেন্ট ও উৎপাদন খরচ যেখানে ট্যাক্সসহ ছিল প্রায় ১শ’ ২৩ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৯ হাজার ৮শ’ ৪০ টাকা সেখানে বর্তমান দামে কয়লা বিক্রি করলে কোম্পানী লাভের মুখ দেখবে না। এছাড়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বড়পুকুরিয়া খনি সেই প্রতিষ্ঠানের কাছে ৮ ডলার লোকসানে কয়লা বিক্রি করছে বলেও খনির একটি সুত্রে জানা গেছে। ইটভাটা মালিক ও বয়লার চালিত শিল্প কারখানায় কয়লার ব্যাপক চাহিদা থাকার পরেও খনি কর্তৃপক্ষের হঠকারী সিদ্ধান্তে বড়পুকুরিয়ার কয়লা অবিক্রিত রয়ে যাবে বলে কয়লা ব্যবসায়ীরা মনে করছেন।