ছবি সংগৃহীত

দাঁতের সুরক্ষায় ১০টি অসাধারণ খাবার

Lopa Sayeda
লেখক
প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ০২:২৯
আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫, ০২:২৯

(প্রিয়.কম) আমরা সবাই জানি যে দাঁত সুরক্ষিত রাখা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে খাবারই খাই এবং পানীয়ই গ্রহন করি না কেন সবকিছু আমাদের দাঁতের উপর প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিনের অভ্যাসের মাধ্যমে দাঁত ও মাড়িকে সুস্থ রাখা এবং দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করা। বেশ কিছু খাবার ও পানীয় আছে যেগুলো দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ খাবারগুলো দাঁত এবং মাড়ির জন্য উপকারী। এখানে দাঁতের জন্য স্বাস্থ্যকর কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করা হলো আপনারদের খাবার তালিকায় রাখার জন্য আদর্শ-

পানি

প্রচুর পরিমান পানি খেতে হবে শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য এবং মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য। উপকারিতা-
  • - পানি বিষাক্ততা দূর করে এবং মুখের ভেতরের লালার পরিমান বাড়ায়।
  • - ছোট ছোট খাদ্যকণা যা দাঁতের মাঝে আঁটকে থাকে তা পানির সাহায্যে বের হয়ে যায়।
  • - পানি মাড়িকে আর্দ্র রাখে এবং দাঁতের এনামেল ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
  • - পানিতে ফ্লোরাইড নামক খনিজ থাকার ফলে তা দাঁতের ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করে।
তাই প্রতিবেলা খাবার পর ভাল করে পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন এবং খাবার কিছুক্ষন পর এক গ্লাস পানি পান করুন যা আপনার মাড়ি এবং দাঁতকে ভালো এবং সুস্থ রাখবে।

চিনি ছাড়া চুইং গাম

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে চিনি ছাড়া চুইং গাম দাঁতের যত্নে সাহায্য করে। উপকারিতা-
  • - চুইং গাম চিবোনোর ফলে এটি দাঁতকে পরিষ্কার করে এবং লালার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
  • - লালা মুখের ভেতরের এসিডকে পরিষ্কার করে।
  • - এতে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস দাঁতের হাড়কে শক্তিশালী করে।
  • - চুইং গাম চোয়ালকে শক্তিশালী করে এবং দাঁতকে পরিষ্কার করে।
তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে চুইং গাম যেন চিনি ছাড়া হয়।

পনির

পনির লালাকে পরিচালনা করতে পারে এবং এটি দাঁতের জন্য ভালো উপকারিতা-
  • - পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস চোয়ালের হাড়কে শক্ত করার সাথে সাথে মুখে থাকা এসিডকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে।
  • - প্রতিবার খাবার পর ছোট এক টুকরো পনির খেলে তা দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে।
যেকোনো ধরনের পনির যেমন দেশি, সুইস, রিকোটা ইত্যাদি পনির থেকেই এই উপকারিতা পেতে পারেন।

দুধ

পনিরের মতই দুধে প্রাপ্ত ভিটামিন ডি, ফসফরাস, এবং ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য বেশ উপকারি। উপকারিতা-
  • - দুধ দেহের এবং দাঁতের হাড়ের জন্য উপকারী।
  • - দাঁতের এনামেল মেরামত করতে এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
  • - কারো যদি দুধে ল্যাক্টোজ অসহনিয়তা থাকে তাহলে সয়া দুধ খেতে পারেন। সয়া দুধও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
যারা ওজন কমানোও জন্য খাবার নিয়ন্ত্রন করেন তাদের জন্য দুধ বেশ উপকারি খাবার।

চা

রঙ চা এবং সবুজ চা উভয় চা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো উপকারিতা-
  • - চায়ে থাকা পলিফেনল ব্যাক্টেরিয়ার কারনে সৃষ্ট প্লাক দূর করতে পারে।
  • - সবুজ চা এবং রঙ চা দাঁতে গর্ত সৃষ্টি হওয়া প্রতিরোধ করতে পারে।
এছাড়া যদি চিনি ছাড়া সবুজ চা মধু মিশিয়ে পান করেন তাহলে তা শুধু দাঁতের জন্য নয় সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো।

বাদাম

বাদামে দাঁত ও মাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বিদ্যমান রয়েছে। উপকারিতা-
  • - চিনাবাদামে রয়েছে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম
  • - কাঠ বাদামেও রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম
  • - কাজু বাদাম মুখের লালা তৈরিতে সাহায্য করে
  • - আখরোটে আছে খাদ্য আঁশ, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি৬, ই, ফলিক এসিড, জিংক এবং পটাসিয়াম যা দাঁতের জন্য খুবই উপকারী।
তবে বাদাম খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে দাঁতের এনামেল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

দই

দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফ্যাট ছাড়া দই উত্তম একটি খাবার। উপকারিতা-
  • - দইয়ে থাকে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম
  • - এছাড়া লো ফ্যাট দই ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • - পুষ্টিগুণ ও স্বাদ বাড়াতে চাইলে দইয়ের সাথে কিছু ফল যোগ করে খেতে পারেন।
এছাড়া স্মুদি তৈরি করেও খেতে পারেন। দাঁতের যত্নের পাশাপাশি ওজন ও কমাতে পারবেন।

ডার্ক চকলেট

ডার্ক চকলেটের কোকোয়াতে থাকে ট্যানিন যা দাঁতের জন্য উপকারি। উপকারিতা-
  • - ডার্ক চকলেটে থাকা ট্যানিন দাঁতের ক্ষয় হ্রাস করে।
  • - মাড়ির প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।
  • - প্লাক জমার প্রবণতা কমায় এবং মুখের ভেতরের এসিড উৎপাদন কমায়।
  • - মাড়ির রক্তচলাচল বাড়ায়
  • - ডার্ক চকলেটে রয়েছে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
দাঁতের সুরক্ষায় প্রতিদিনই ডার্ক চকলেট খেতে পারেন তবে অবশ্যই কম পরিমানে।

কমলা

কমলা বা মালটা দাঁতের জন্য খুবই উপকারী উপকারিতা-
  • - এতে থাকা ভিটামিন সি, ডি এবং ক্যালসিয়াম দাঁতের সুস্থতার জন্য খুবই উপকারি।
  • - কমলার জুস মুখের ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
এছাড়া যেকোনো টক ফলই দাঁতের জন্য বেশ ভাল। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেকোন টক ফল খাওয়ার পরই কুলি করে মুখ ধুয়ে নিয়ে হবে এদের আম্লিক গুনাগুনের জন্য।

আপেল

কথায় আছে প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের কাছ থেকে দূরে থাকা যায়। এই কথাটি দাঁতের জন্য ও প্রযোজ্য। উপকারিতা-
  • - বেশি আপেল খেলে লালার পরিমানও বৃদ্ধি পায়
  • - আপেল কামড় দিয়ে খাওয়ার ফলে দাঁতের গর্ত এবং দাগ দূর হয়
  • - ম্যাগ্নেসিয়াম, জিংক, আয়রন, ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৬, সি, ই এবং কে থাকে আপেলে।
  • - রাতে খাবার পরে একটি করে আপেল খেলে তা দাঁতকে পরিষ্কার করার সাথে সাথে দাঁতকে সুরক্ষিত রাখে।
লেখিকা শওকত আরা সাঈদা(লোপা) জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ এক্স ডায়েটিশিয়ান,পারসোনা হেল্‌থ খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান(স্নাতকোত্তর)(এমপিএইচ) মেলাক্কা সিটি, মালয়েশিয়া। সূত্র: weeklyhealthylife