
ছবি সংগৃহীত
তাঁদের ‘রোমান্স ইন রেইন’
আপডেট: ২৪ মে ২০১৬, ১৫:৪৫
ছবি : সংগৃহীত।
(প্রিয়.কম) টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে আজ সারাদিন ধরেই। কোন ছন্দের তালে বৃষ্টি পড়ে? সেটা কি স্বরবৃত্ত? মাত্রাবৃত্ত? না কি অক্ষরবৃত্ত? সে তথ্য জানাতে পারেননি কোনো কবিই। তবে নাম না জানা হাজারো ছন্দের রিদম ভেসে আসে কানে। আকাশ গুমোট করে মানুষের মনে নানা অনুভূতির জন্ম দিয়ে ঝম ঝম শব্দে নাচিয়ে তোলে পুরো প্রকৃতিকে- তবু বৃষ্টি সবার মন জয় করতে পারেনি, বৃষ্টি যে সবার কাছে আনন্দের তা কিন্তু নয়। কারো কাছে তা যন্ত্রণাকর আবার কেউ কেউ হয়ত বৃষ্টির মাঝে করুণ কান্নার শব্দকেই খুঁজে পান। সে যাই হোক, বৃষ্টি কিন্তু আমার খুব প্রিয়। বৃষ্টি নামের মেয়েটি তার শীতল স্পর্শে হৃদয়কে নাচিয়ে তুলছে অলৌকিক আনন্দে। আর সে সময়েই আবছা স্বপ্নের মতো অতি সরল এক স্বপ্ন জমাট বাঁধে চোখের কোনে। কোনো এক কোমল হাতে হাত রেখে বৃস্টিস্নান। আহা! ভাবতেই কেমন কেমন যেন লাগে। আর তখনই মনে পড়ে যায় কবিগুরুর কবিতা, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়’।
শুধু কি তাই? শৈশবের দিগন্তজোড়া মাঠ থেকে ভেসে আসে দুষ্টু ছেলেদের কলরব, কদমফুলের ঘ্রাণ আর বৃষ্টি পতনের শব্দে ঘনায়মান সন্ধ্যার অন্ধকারে করুন মায়াবী গ্রাম বাংলার মুখ। আচ্ছা, আমার মতো তারকারাও কি এমনটাই ভাবেন? নাকি তাদের কল্পনার পৃথিবীতে বৃষ্টির আরেক রঙ, আরেক গন্ধ, অন্য কোনো ছন্দে তাদের মনকে বৃষ্টি রাঙিয়ে দেয়, বিষিয়ে দেয়। খুব জানতে ইচ্ছে করল। মুঠোফোন হাতে নিয়ে ফোন দিতেই যাদের পাওয়া গেলো তাদের নিয়েই সাজানো হলো এই ফিচার।
প্রিয়.কম অফিসের বাইরে তখনো বৃষ্টির ছাট। কাজের মেয়েটি এসে জানালাগুলো বন্ধ করে দিচ্ছিল। গতকালও এ সময়টাতে ঠাটা রোদে সবাই হাপিত্যেস করছিল। আর আজ কি প্রাণ জুড়ানো শীতলতা। মুঠোফোন হাতে নিতেই আইরিনের হাসি হাসি মুখটা ভেসে উঠল। ফোন বাজল কিন্তু ধরল না। আমি আবারও মগ্ন হলাম বৃষ্টি দেখায়। হঠাৎ বৃষ্টির ছন্দের তালের মাঝে ছন্দপতন ঘটাল রিংটোনের শব্দ। আইরিনের ফোন। বাসাতেই তিনি। বৃষ্টি কমলেই বেরিয়ে পড়বেন।
‘বৃষ্টি আমার খুবই ভালো লাগে। তবে একটানা অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে সেটা ভালো লাগে না। বৃষ্টি আমি খুব উপভোগ করি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা কথা আছে না? এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়। হা হা হা। বৃষ্টির দিনে এর চেয়ে রোমাঞ্চকর শব্দ আর নেই। কবিতার মতোই রোমান্টিক কাউকেই বলতে চাই সেই না বলা কথা। জানিনা কবে তারে পাবো। যখন পাবো তখন বলে দিব।’ একটানা কথাগুলো বলে ফেললেন আইরিন।
প্রশ্ন খুব একটা করতে হলো না, সামান্য টোকা দিতেই আবারও গড়গড়িয়ে বলা শুরু করলেন আইরিন, ‘প্রিয় মানুষের সঙ্গে এখনো বৃষ্টিতে ভেজা হয় নাই। তবে আমি অপেক্ষা করছি কারো সঙ্গে ভিজব।’
আইরিনের অপেক্ষার প্রহর শেষ হোক শিগগিরই। প্রিয় মানুষের সঙ্গে বৃষ্টিস্নানে মেতে উঠুন তিনি।
এবার ফোনের কললিস্ট ঘাটতে ঘাটতে পাওয়া গেল মৌসুমী হামিদকে। মৌসুমী তখন রাস্তায়। শুটিংয়ে যাচ্ছেন। ও যেখানে আছে সেখানে তখনো বৃষ্টি নামেনি। তবে নামবে নামবে বলে ঢঙ ধরে আছে। বললেন, ‘বৃষ্টিতে কাজ করতে ভালোই লাগে, নায়িকা নায়িকা ফিলিং হয়। হা হা। বৃষ্টিতে ভিজতে খুবই ভালো লাগে।
আর রোমান্স ইন রেইনের মধ্যে রোমান্স করতে রেইনই যথেষ্ট। আর কাউকেই প্রয়োজন নেই। প্রিয় মানুষ? প্রিয় মানুষের সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজতে চাইলে তারা বলে অসুখ হবে।বৃষ্টিতে পিছলে পড়ে যাবে-তাই একা একা একাকীই বৃষ্টিতে ভিজি।’
একটু দম নিয়ে আবার বলা শুরু করেন, ‘জানেন, বৃষ্টি হলেই আমি বৃষ্টিতে ভিজি।কাজ বা শুটিং না থাকলেই আমি বৃষ্টিতে ভিজি। আর দুই তিন ঘন্টা বৃষ্টিতে ভেজারও অভ্যাস আছে।’
আর এমন দিনে মনের কথা? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন মৌসুমী। বললেন, ‘মনের কথা কাউকেই বলতে চাই না। ওরকম কেউ নেই। আসলেই কেউ নেই।’
মৌসুমীর কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়ল একরাশ একাকীত্ব। বৃষ্টির এমন উসকে দেওয়া দিনে একাকী মানুষগুলোকে বাদ দিয়ে বরং কোনো যুগলকে ফোন দেওয়া যেতে পারে। ফোনে পাওয়া গেল আরিফিন শুভকে। শুভ তখন কোনো এক বিল্ডিংয়ের লিফটে উঠার লাইনে দাঁড়িয়ে। প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘ওহ, বৃষ্টি! রোমান্স ইন রেইন! জীবনে সময়ের এত অভাব যে রোমান্সেরই টাইম নেই আর ইনরেইনের তো কথায় নেই। তবে বৃষ্টিতে ভেজা খুবই মজার। বউকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে খুবই ইচ্ছে করে কিন্তু সময় হয় না।’
আফসোস এখানেও। নক করা যাক অন্য কাউকে। বৃষ্টি তখন আরও জোরে বইতে শুরু করেছে। এবারের টার্গেট তাসনোভা এলভিন। আজ বাসাতেই আছেন তিনি। শুটিং নেই। এমন দিনে বৃষ্টির দেখা পেয়ে বেজায় খুশি এলভিন। কিন্তু আফসোস এখানেও- ‘আজ বৃষ্টিতে ভিজতে পারব না। কারণ আগামীকাল শুটিং। বৃষ্টিতে ভিজলে হঠাৎ যদি জ্বর হয় তখন শুটিংটাই বাতিল হয়ে যাবে।’
বৃষ্টির আনমনা ভাবের প্রসঙ্গ টানতেই এলভিনের কণ্ঠেও ঝমঝম শব্দে বৃষ্টি নামতে শুরু করল, ‘আমি পারসোনালি বৃষ্টি খুবই পছন্দ করি। আমার প্রিয় মানুষটার সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই।যার সঙ্গে রিলেশন হবে তার সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই। আমার স্বপ্ন শুধু বৃষ্টিতে ভেজা নয়, প্রিয় মানুষটাকে বলব বৃষ্টিতে যেন আমাকে কোলে করে নিয়ে ঘুরে।জানেন বৃষ্টি অনেক সুন্দর জিনিস। আমি সবসময় বৃষ্টি পছন্দ করি। কিন্তু আম্মু ছোটবেলায় বৃষ্টিতে ভিজতে দিত না। সেজন্য বৃষ্টি দিনে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে ছাদে উঠে যেতাম। বৃষ্টিতে ভিজতাম, আর…আর বৃষ্টির দিন এলেই প্রিয় মানুষটার কথা মনে পড়ে।’
এলভিন তার প্রিয় মানুষের কথা ভাবতে থাকুক, আমরা বরং বৃষ্টির দিনে একটি তাজা সরেশ প্রেমের গল্প শুনে আসি। হ্যাঁ, অমৃতা খানের প্রথম প্রেমটাই নাকি হয়েছিল বৃষ্টির দিনে। যদিও আজ অমৃতার বৃষ্টিতে ভেজা হবে না কারণ আজ তার ক্লাস আছে। বাসায় বসে বৃষ্টির টাপুরটুপুর শব্দ শুনতে শুনতে সে দিনের স্মৃতিচারণই করলেন অমৃতা- ‘তখন ক্লাস এইটে পড়ি।সেদিন বৃষ্টির দিন ছিল।যখন বৃষ্টি নামে আমরা তখন বাস্কেট বল খেলতেছিলাম। বৃষ্টি নামার পরপর সবাই চলে যাই। কিন্তু পরক্ষণেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে আমরা বৃষ্টিত ভিজব। যেই কথা সেই কাজ। আমরা কয়েকজন মিলে বৃষ্টিতে ভিজছিলাম। সেসময় একটা ছেলে আসে (যাকে আমি আগে থেকেই পছন্দ করতাম, সেও আমাকে পছন্দ করত)। তো ছেলেটা এসে আমাকে বলতেছে আপনি বৃষ্টিতে ভিজতেছেন কেন? আপনার তো জ্বর আসবে।আমি জবাব দিয়েছিলাম ‘এতে আপনার কি! তার তিনদিন পরেই আবার বৃষ্টি নামে। সেদিন ঐ ছেলেটি বৃষ্টিতে ভিজছিল। এবার আমি তাকে গিয়ে বলি যে আপনি ভিজতেছেন কেন? আপনার তো জ্বর আসবে। জবাবে সে সেদিনের রিয়েকশন নেয়। জবাব দেয়-তাতে আপনার কি! তো ঐ দিনই বুঝলাম যে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আশ্চর্যের ব্যাপার তার কিছুক্ষণ পরেই ছেলেটা একটা কদম ফুল দিয়ে আমাকে প্রপোজ করে।আমিও প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলাম। যদিও ঐ রিলেশনটা এখন আর নেই।’
অমৃতার কণ্ঠে অঝর শ্রাবণের কোন্ আনন্দ খেলে গেল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ফোন যখন রাখতে যাব তখন তার কণ্ঠে বিষাদ নয়, বরং এমন দিনে কারোর জন্য অপেক্ষার আনন্দটাই যেন ঝরে পড়ল।
অনেক গল্প হলো পাঠক। তবে সেরা গল্পটা বোধ হয় বলা হয়নি। সেরা গল্পটা সবার শেষেই বলা যাক। কারণ প্রধান অথিতি তো সবার শেষেই বক্তব্য দেন। যদিও যার গল্প এখন বলা হবে তাঁর সঙ্গে কথোপকথন হয়েছিল কয়েক বছর আগে। ঐ যে কথায় বলে না, কিছু গল্প চিরন্তন, কিছু বোধ চিরন্তন। এমনই এক চিরন্তন বোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন ক্যামেরার সামনের কবি মোশাররফ করিম। এই বুষ্টিদিনে মেশাররফ করিমের রোমাঞ্চের কথা না শুনলে দিনটাই যে বৃথা যাবে আপনার-
‘‘বৃষ্টি আমাদের অন্য দুনিয়ার মুখোমুখি করে। পৃথিবীর চেহারাটাই চেঞ্জ করে দেয়। আমাদের চিরচেনা যে রঙ সেটা আর থাকে না। বৃষ্টির জাদুটা এই জায়গায়। আমাদের মনকে অন্য রকম করে তোলে, রোমান্টিক করে তোলে। বৃষ্টির সাথে তাই মেশাটাই আমার কাছে রোমান্টিক বলে মনে হয়। কখনো বৃষ্টিকেই প্রেমিকা বলে মনে হয়, আমি বৃষ্টিকে উপভোগ করি এভাবেই। আর ব্যক্তিগত জীবনের রোমান্টিকতার কথা বললে মনে হয় বৃষ্টির দিনে একটা রিকশা কিনে ফেলবো। রিকশা করে আমি এবং আমার স্ত্রী ঘুরবো। বৃষ্টির অত্যাচারের সহায়তায় পরস্পরের ঘনিষ্ঠতা আরো বেড়ে যাবে। এরকম অনেক স্মৃতি আছে, তুমুল বৃষ্টির ভেতর দুজন রিকশা করে যাচ্ছি। বৃষ্টির ছাট থেকে পরস্পরকে বাঁচাবার যে চেষ্টা, এটা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। আর শৈশব কৈশোরের স্মৃতিটাই অন্যরকম। নিজেকে এবং বৃষ্টিকে নিয়ে যে মাখামাখি তা আসলে কৈশোরেই সম্ভব হয়েছে। স্কুল থেকে ফেরার পথে ইচ্ছে করেই আছাড় খেতাম। ইচ্ছে করে আছাড় খেতেই ভালো লাগত। এর কারণ হচ্ছে আছাড় খেয়ে জামাকাপড় নষ্ট হলে বাড়িতে এসে পুকুরে গোসল করার সুযোগ পাওয়া যেতো। বৃষ্টির পানিতে পুকুরে যারা গোসল করেছেন, তারা সবাই জানেন ঐ সময়ে পুকুরের পানি খুব উষ্ণ থাকে। আমাদের পুকুরে একটা কলমীর দাম ছিলো। তার পাশে একটা কলার ভেলা। ভেলায় মাথা দিয়ে শুয়ে থাকতে ভালো লাগত। তখন কখনোই উঠার কথা মনে হত না। বৃষ্টির সাথে আমার একাকার হয়ে যাওয়াটা শৈশব কৈশোরে হয়েছিল। একটা বর্ষণমুখর দিন ঐরকমভাবে কাটানোর জন্য এখন স্বপ্ন দেখি।’’