ছবি সংগৃহীত

জ্যোতিষ মতে রত্ন (পর্ব-১)

nusrat jahan champ
লেখক
প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০১৩, ১৬:৫৩
আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৩, ১৬:৫৩

নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে কে না চায়! আর তাইতো অলংকারকে গণ্য করা হয় সৌন্দর্য বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে এবং এসব অলংকার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় সুন্দর সুন্দর কিছু উপাদান । যেমন - রত্ন বা পাথর । অলংকারের ক্ষেত্রে যেসব পাথর ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে এক সময় মানুষ অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে মনে করত । সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিষয়টি তখনো তাদের মাঝে গুরুত্ব পায়নি। সৌন্দর্য বর্ধন ছাড়াও সেই সনাতন বিশ্বাস থেকে এখনো হাজারো মানুষ নানা ধরনের রত্ন-পাথর ব্যবহার করে থাকেন । সাধারণত এগুলো পরা হয় ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে!! কেননা অনেকেই বিশ্বাস করে থাকেন যে, পাথর ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম। সেই আদিকালের বিশ্বাস এখনো মানুষের মাঝে রয়ে গেছে বহুলাংশেই। গ্রীকদের মাঝেও এ বিশ্বাস ছিল। গ্রীক এবং ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী রাশিচক্রে বর্ণিত বারোটি রাশির জন্য আলাদা আলাদা বিশেষ পাথর রয়েছে । বিশ্বাস করা হয়,রাশি অনুযায়ী পাথর পরলে ভাগ্যের উন্নতি ঘটে। এমনকি তা ব্যক্তিকে রোগশোক থেকেও দূরে রাখে! সবচেয়ে শক্তিশালী নয়টি রত্নকে জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে একত্রে 'নবরত্ন' বলা হয়। এগুলো হলো - হীরা , পোখরাজ , নীলা , চুনি , পান্না , প্রবাল , মুক্তা , গোমেদ এবং ক্যাটস্ আই। ওই যে, কথায় বলে না- "বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর!" তাই চলুন সেই আদি বিশ্বাসের আঙ্গিক থেকেই কিছু তথ্য জেনে নেই 'নবরত্ন' এবং এগুলো ব্যবহারের প্রচলিত কিছু ধারণা সম্পর্কে – হীরা : হীরা সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন । এটি খুব রহস্যময়ও বটে ! সামান্য কয়লা থেকে অসামান্য হীরার জন্ম বলে অনেকের কাছেই তা বিস্ময়ের বিষয় । হীরা মূলত প্রাকৃতিক রত্ন হলেও আধুনিক প্রযুক্তির কারণে বর্তমানে কৃত্রিম উপায়েও হীরা তৈরি করা হয় । দক্ষিণ আফ্রিকা , ব্রাজিল , আমেরিকা , অস্ট্রেলিয়া , রাশিয়া এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে প্রাকৃতিক হীরা পাওয়া যায় । হীরা মূলত চার ধরনের হয় - স্বচ্ছ বা সাদা , লালচে আভাযুক্ত , কালো রঙের বা কালচে আভাযুক্ত এবং পীত রঙের । হীরার বিভিন্ন নাম আছে । যেমন - বজ্র , শতকোন , বিদুর , কুলিশ , তানারা , ভূমিজ , অধির , অশির ইত্যাদি । জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, হীরা ব্যবহার করলে সব ধরনের ব্যাধি নাশ হয় । হীরা দেহের ও মনের সুখ-শান্তি বৃদ্ধি করে এবং অকাল বার্ধক্য রোধ করে আয়ু বাড়িয়ে তোলে । প্রেম ও দাম্পত্য জীবন সুখময় হয় । সংগীত , চিত্রকলা , কাব্য , শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ জন্মে । এমনকি গনোরিয়া , সিফিলিস , দন্তরোগ , বদহজম , গলার রোগ ও হাত-পায়ের ব্যথা উপশম করে । পোখরাজ : পোখরাজ এক ধরনের স্বচ্ছ , মসৃণ ও উজ্জল রত্ন । পোখরাজ বেশ দামী একটি পাথর । সিংহল , থাইল্যান্ড , ভিয়েতনাম , নরওয়ে , রাশিয়া , ব্রাজিল , মায়ানমার , দক্ষিণ আফ্রিকা , আমেরিকা ও ভারতে পোখরাজ পাওয়া যায় । সাদা , গোলাপী , হলদে ও নীল - এই চার ধরনের পোখরাজ দেখতে পাওয়া যায় । পোখরাজের অনেকগুলো নাম রয়েছে । যেমন - পুষ্পরাগ , পীতমণি , পীতরক্ত , ঋতুমণি , গুরুরত্ন , সম্ভুমণি , বৃহস্পতিবল্লভ ইত্যাদি । জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করেন পোখরাজ ব্যবহার করলে দেহের শক্তিসহ মেধাশক্তি, আয়ু , সুখ ও গুরুজনদের প্রতি ভক্তি বৃদ্ধি পায় । সংসারে কখনো অভাব আসে না । এছাড়া রতিবৃদ্ধি , চুলপড়া , কণ্ঠরোগ , হৃদরোগ , টিউমার ও পাকস্থলীর রোগ দূর করে । নীলা : নীলা সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য রত্ন । এর সুন্দর নীল রঙের জন্যই এই নামকরণ । ভারত , সিংহল , মায়ানমার , অস্ট্রেলিয়া , জার্মানি , থাইল্যান্ড ও কম্বডিয়ায় নীলা পাওয়া যায় । নীলা পাঁচ ধরনের হয়ে থাকে - ইন্দ্রনীলা , পীতম্বর নীলা , রক্তমুখী নীল , অপরাজিতা নীলা এবং গঙ্গাজলী নীলা । নীলার বিভিন্ন নামও রয়েছে । যেমন - নীলোত্‍পল , মহানীল , সুনীল , নীলম , নীলরত্নক , সৌররত্ন , নীলাঙ্ক্ষা ইত্যাদি । জ্যোতিষ শাস্ত্রে নীলাকে বলা হয় সবচেয়ে মারাত্মাক এবং শক্তিশালী রত্ন। না বুঝে নীলা ব্যবহার করলে তা সুফলের চেয়ে কুফল দেয় বেশি। নীলা ব্যবহার করলে দুঃখ-কষ্ট , দারিদ্র্য , মৃত্যুভয় দূর হয় এবং নানা ভাবে অন্যের স্নেহ-ভালবাসা ও সাহায্য পাওয়া যায় । শত্রুরা মাথা নত করে , বন্ধুরা সহজে আকৃষ্ট হয় । বৈধব্যযোগ দূর হয় , কফ , পিত্ত , বায়ু ও বাতরোগ দূর হয় । তা ছাড়া দেহের কান্তি দিন দিন বৃদ্ধি পায় ।