ছবি সংগৃহীত

জিনেরা কিসের তৈরি?

মাওলানা রোকন রাইয়ান
লেখক
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০১৬, ০৩:৫৩
আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬, ০৩:৫৩

মানুষ তো মাটির তৈরি। সে উড়তেও পারে না, অদৃশ্যও হতে পারে না। পক্ষান্তরে জিন এসবের আলাদা। সে অদৃশ্য হতে পারে। বাতাসের বেগে ছুটতে পারে। এর কারণ জিনকে আগুণের শিখা থেকে সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ। তাকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে মানুষের চাইতে বেশি। ফলে জিন জাতির প্রকৃতিই হলো অদৃশ্য থাকা। জিনকে নিয়ে প্রায় প্রতিটি সমাজ ও জাতিতে রয়েছে নানা রকম গল্প। নানা রকম সহস্য সৃষ্টি করা হয়েছে একে নিয়ে। নানাভাবে একে উপস্থাপন করেছেন কবি ও শিল্পীরা। বাস্তবে জিন হলো একটি অদৃশ্য শক্তি। একে চেনার দৃশ্যমান কোনো প্রমাণ নেই। জিনকে তৈরি করা হয়েছে মানুষ তৈরির আগে। আল কুরআনে সে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে। আর এর পূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। [সূরা আল হিজর : ২৬-২৭] আয়াতটিতে স্পষ্ট করা হয়েছে মানুষের পূর্বেই জিন জাতির সৃষ্টি। যখন একমাত্র ফেরেশতারা ছিল আল্লাহর সৃষ্টি। এ জন্য জিনকে ফেরেশতাদের কাছাকাছি বলে উল্লেখ করেছেন অনেক তাফসিরকারক। পবিত্র কুরআনের ইংরেজি অনুবাদক ও তাফসির কারক মুহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেছেন, জিনকে আগুনের প্রজ্জ্বলিত শীখা থেকে সৃষ্টি করা হয়, অর্থাৎ ধূম্রবিহীন আগুনের শীখা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আগুন হলো একটি প্রজ্জ্বলিত শীখা। আগুনের ভেতর একপ্রকার শক্তি রয়েছে যা অতি মাত্রায় তাপ উৎপাদন করতে সক্ষম। আর এ আগুন তিনভাবে উৎপাদিত হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেই বিষয়গুলো। ১. যেমন জ্বালনি পুড়িয়ে: অর্থাৎ কাঠ, কয়লা, তেল ইত্যাদি পুড়িয়ে আগুন তৈরি করা হয়। এই উৎপাদনকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে অক্সিডেশন বা প্রজ্জ্বলন। অর্থাৎ বাতাসের অক্সিজেনের সহযোগিতায় প্রকৃতিতে প্রাপ্ত হাইড্রোকার্বন জালিয়ে শক্তি উৎপাদন করা। এ ক্ষেত্রে বন্ধনী ভেঙে পরমানুগুলো বিমুক্ত হয়ে কিছু ভিন্ন যৌগ উৎপাদন করে প্রচুর শক্তির বিমোচন ঘটে, অধিকাংশ কার্বন পরমানু কয়লা রূপে অবশিষ্ট থাকে; আর কিছু কার্বনডাই অক্সাইড রূপে বাতাসে মিশে যায়। ২. ফিসন ও ফিউসন : এই পদ্ধতিতে পরমাণুর কেন্দ্রে প্রকৃতিগতভাবে গচ্ছিত শক্তির প্রজ্জ্বলন ঘটানো হয়। ফিসন পদ্ধতিতে একদিক পরমানুর কেন্দ্র মিলিত হয়ে ভারী মৌলের উৎপাদন ঘটেও শক্তির বিমোচন হয়। সূর্যে ও অন্যান্য নক্ষত্রে মৌলিক উপাধান হাইড্রোজেন রূপান্তরিত হয়ে হিলিয়াম উৎপন্ন করে পাশাপাশি শক্তির বিমোচন ঘটে।এ শক্তিই আমরা সূর্যের বিকিরণ হিসেবে দেখে থাকি। অন্যদিকে ফিসন পদ্ধতি হল কোনো পরমাণুর কেন্দ্র ভেঙে শক্তির উৎপাদন। সাধারণত বৃহৎ পরমাণুর কেন্দ্র ভেঙে ক্ষুদ্র পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়ে শক্তির বিমোচন ঘটায়। ৩. বিদ্যুৎ চুম্বক প্রজ্জ্বলন : চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের মাধ্যমে শক্তির বিমোচন ঘটানোই হল এই পদ্ধতিতে প্রজ্জ্বলন করা। আপনার ঘরের বিদ্যুত বাতিটি কিন্তু এই পদ্ধতিতেই আলো দিয়ে থাকে। এখানে আরেকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো তা হলো ধূঁয়া। ধূঁয়ার হল অতি সূক্ষ কণার ভাসমান দৃশ্য। সাধারণত আগুন জ্বালানোর পর তা থেকে নির্গত সূক্ষ কার্বন কণার ভাসমান অবস্থাকেই আমরা ধূঁয়া বলে জানি। তাহলে কোন ধরনের অগ্নিশিখায় ধূঁয়ার সৃষ্টি হতে পারে? স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে, যখন কোনো ভারী হাইড্রোকার্বন জ্বালানিকে দাহ্য করা হয় শুধুমাত্র তখনই ধূঁয়ার সৃষ্টি হতে পারে; উপরের ২য় বা ৩য় কোনো পদ্ধতিতেই ধূঁয়ার সৃষ্টি হতে পারে না। তাহলে উপরের আয়াতে বর্ণিত আগুন আমাদের অতি পরিচিত ১ম শ্রেণির আগুন নয় যা দিয়ে জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তা অবশ্যই ২য় বা ৩য় প্রকারের আগুন। খ্যাতিমান দার্শনিক আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি রহ. জিন জাতিকে নিয়ে লেখা কিতাব লাক্বতুল মারজ্বানি ফি আহকামিল জ্বান্ন নামের কিতাবে উল্লেখ করেছেন, অনেক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যেমন অবলোহিত, মাইক্রো ওয়েভ, গামা রশ্মি আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। জিন ফেরেশতা হয়ত এমন কোনো সূক্ষাতি সূক্ষ তরঙ্গ যাদের কোনো যন্ত্রপাতি দ্বারাও দেখা যাবে না। শয়তানরাও একপ্রকার জিন যারা আল্লাহর অবাধ্য এবং এরা অভিশপ্ত ইবলিশের বংশধরদের অন্তর্গত। মাওলানা রোকন রাইয়ান সহ-সম্পাদক, ইসলামি চিন্তার কাগজ