ছবি সংগৃহীত

জন্ডিস রোগীর খাবার বিভ্রান্তি

Tahmina Sultana Chhanda
লেখক
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০১৩, ১০:২৬
আপডেট: ১৬ মে ২০১৩, ১০:২৬

জন্ডিস হয়েছে শুনলেই কেমন ভয় লাগে, তাই না? যেহেতু এতে লিভার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই ভয় পাওয়াটাও খুব স্বাভাবিক। তবে জন্ডিস কিন্তু আসলে কোন রোগ নয়,এটি রোগের লক্ষণ। সাধারণত যেসব রোগে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেসব রোগে জন্ডিস দেখা দেয়। জন্ডিস বলতে আমরা লিভারের একিউট প্রদাহ বা একিউট হেপাটাইটিস জনিত জন্ডিসকেই বুঝে থাকি। জন্ডিস হওয়ার কারণ হিসেবে আমরা ধরতে পারি ভাইরাস থেকে শুরু করে নানা ধরণের ওষুধ, এলকোহল ইত্যাদির কারণে লিভারে একিউট হেপাটাইটিসের প্রভাব। একিউট হেপাটাইটিসের প্রধান কারণ হলো- হেপাটাইটিস ই, এ এবং বি ভাইরাস। এদের মাঝে হেপাটাইটিস ই এবং হেপাটাইটিস এ পানি ও খাদ্যবাহিত ভাইরাসের কারনে হয়ে থাকে। আর তৃতীয়টি ছড়ায় মূলত রক্তের মাধ্যমে। হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের কারনে সাধারণত শিশুদের জন্ডিস হয়, আর হেপাটাইটিস ই ও বি ভাইরাসে যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। এছাড়াও যদি কোন কারণে শরীরের লোহিত রক্তকনিকা অতিরিক্ত ভাঙতে থাকে তাহলেও জন্ডিস দেখা দেয়। এগুলো ছাড়াও ক্যান্সার, গলব্লাডারে সমস্যা ইত্যাদির কারণেও জন্ডিস দেখা যায়।

জন্ডিসে কি খাবেন এবং কি খাবেন না

জন্ডিসে খাবারদাবারের ব্যাপারে বেশকিছু কুসংস্কার আছে। যারা জন্ডিসে আক্রান্ত হন তাঁদের চেয়ে বেশি আশঙ্কায় থাকে আশেপাশের মানুষজন। আর প্রথমেই যে ব্যাপারটা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয় তা হলো খাওয়া-দাওয়া। জন্ডিস হলে এটা খাওয়া যাবে না, ওটা খেতে হবে- এইরকম নানাজনের নানা মত। এতে করে বেচারা আক্রান্ত রোগী বিভ্রান্ত হয়ে যান যে তাঁর আসলে কি খাওয়া উচিত আর কি খাওয়া উচিত না।
  • - অনেকে মনে করেন জন্ডিসে তেলমশলা জাতীয় খাবার বা হলুদ দেয়া খাবার একদম খাওয়া যাবে না, এতে করে রোগীর গায়ের রঙ আরও হলুদ হয়ে যাবে বা জন্ডিসের মাত্রা বেড়ে যাবে। ব্যাপারটি কিন্তু মোটেও তা নয়। জন্ডিসে গায়ের রঙ হলুদ হওয়ার কারণ হচ্ছে রক্তে বিলিরুবিন নামক একটি হলুদ পিগমেন্টের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এই বেড়ে যাওয়ার কারণেই জন্ডিস দেখা দেয়, আর ব্যাপারটার সাথে খাবারের হলুদের কোন ধরনের যোগাযোগই নেই। এইসময় এমনিতেই রোগীর খাওয়াদাওয়ায় রুচি থাকেনা তাই এরকম করলে বরং রোগীর আরও ক্ষতি হতে পারে। তাই রোগীর পছন্দমতো রুচি হয় এমন সব স্বভাবিক খাবার খাওয়ানো উচিত।
  • - আরেকটি প্রচলিত ধারণা আছে যে, জন্ডিস হলেই পানি বা পানি জাতীয় ফলের রস, গ্লুকোজ খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে কিন্তু এ ধারণটাও অমূলক। পানি খেতে হবে স্বাভাবিক নিয়মেই। তবে পানি কম খেলে সমস্যা হতে পারে। তাই জন্ডিস হলে অতিরিক্ত নয় বরং পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। অতিরিক্ত পানি কিডনিতে চাপ ফেলে শরীর আরও অসুস্থ করে তুলতে পারে।
  • - জন্ডিসে সলিড খাবার বাদ দিয়ে শুধু পানীয় জাতীয় খাবার বা তরল খাবার খেলে হবে না। জন্ডিসে রোগীর বমি হতে পারে, এছাড়াও এই সময় শরীর দুর্বল থাকে তাই রোগীকে বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • - যাদের মদ্যপানের অভ্যাস আছে তাঁদের এই সময় একদম মদ খাওয়া চলবে না। মদ প্রক্রিয়াজাত হয় লিভারে, আর জন্ডিসে যেহেতু লিভার খুবই নাজুক অবস্থায় থাকে তাই এ সময় মদ্যাপান করা যাবে না।
  • - অনেকে মনে করে জন্ডিসের সময় মাছ-মাংস খাওয়া যাবেনা। কিন্তু এর ফলে শরীরে প্রোটিনের অভাব ঘটে যা আরো নানা ধরণের জটিলতার কারণ হতে পারে। তাই অবশ্যই মাছ মাংস বা মুরগির সুপ খেতে হবে। বেশী ঝাল মশলা যুক্ত খাবার না খেলেই হলো, তাতে হজমে সমস্যা হতে পারে।
  • - এই সময় বাইরের খাবারদাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। চটপটি,ফুচকা,বাইরের আখের রস,স্যাকারিন দেয়া গোলা আইসক্রিম এই ধরণের খাবার খাওয়া যাবেনা। কারণ খাদ্য ও পানিবাহিত ভাইরাসগুলো এসব খাবারের মাধ্যমেই ছড়িয়ে থাকে।
জন্ডিসের রোগীদের খাবার���র ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা অবশ্যই ভালো কিন্তু ভুল বা অজ্ঞতা অনেক সময় রোগীকে বড় ধরণের সমস্যায় ফেলতে পারে। সুতরাং জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর খেয়াল রাখার ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী।