ছবি সংগৃহীত

খাটো শিশুর চিকিৎসা

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০১৪, ০৯:৪৬
আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৪, ০৯:৪৬

(সাপ্তাহিক ‘সাপ্তাহিক’) - অনেক শিশুর ক্ষেত্রে জম্মের পর দেখা যায়, শিশুটি ঠিকমতো বেড়ে উঠছে না। এক্ষেত্রে শিশুটির মা-বাবা শিশুটিকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। এছাড়া অনেক বাবা-মা তখন শিশুটিকে প্রকৃতিগত বেঁটে বলেই মেনে নেন। তবে এ ধারণা সব সময় ঠিক নয়। শিশু ঠিকমতো লম্বা না হবার কিছু কারণ রয়েছে। সেই কারণগুলোর মধ্যে সুষম খাবারের অভাব, শিশুর রোগের সঠিক চিকিৎসা না করানোও অন্যতম। ঠিকমতো চিকিৎসা করলে, অনেক ক্ষেত্রে শিশু ঠিকমতো বেড়ে উঠে। খাটো শিশুর চিকিৎসা সম্পর্কে সাপ্তাহিক-এর সঙ্গে কথা বলেছেন ডা. রবি বিশ্বাস। তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাপ্তাহিক: শিশু খাটো কেন হয়? ডা. রবি বিশ্বাস: মানুষ কতটা লম্বা হবে তার একটা নির্দিষ্ট হিসাব আছে। সুস্থ-স্বাভাবিক শিশু লম্বা হবে আপন গতিতে, অর্থাৎ জাতিগত, বংশীয়, পারিবারিক প্রভাব নিয়েই শিশুর উচ্চতা জন্মগতভাবে ঠিক হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশু বাড়তে থাকে। এক সময় সে তার নির্দিষ্ট উচ্চতা লাভ করে। আর যদি শিশুর ঠিকমতো বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক গতি কোনো কারণে ব্যাহত হয়, সেক্ষেত্রে সেই শিশুটি খাটো হয়। সাপ্তাহিক: শিশু ঠিকমতো লম্বা না হওয়ার কারণগুলো কী? ডা. রবি বিশ্বাস: শিশু যদি জন্মগতভাবেই স্বাভাবিক না হয়। এ ছাড়া শিশু যদি জন্মের পর ঠিকমতো পুষ্টি না পায়, ঘন ঘন অসুস্থ থাকে বা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হয়, শিশুর শরীরে লম্বা হবার জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের অভাব দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে শিশু ঠিকমতো লম্বা হয় না। সাপ্তাহিক: শিশু খাটো হবার জিনগত কিংবা বংশগত কোনো কারণ কি রয়েছে? ডা. রবি বিশ্বাস: হ্যাঁ। স্বাভাবিকভাবে মা-বাবা খাটো হলে শিশু খাটো হয়। এ ছাড়া জিনগত কিছু রোগ হাড়ের বৃদ্ধিতে সমস্যা ইত্যাদি কারণে শিশু খাটো হতে পারে। সাপ্তাহিক: শিশু ঠিকমতো বেড়ে উঠছে না, এটি কীভাবে নির্ণয় করে থাকেন? ডা. রবি বিশ্বাস: কোনো শিশু তার বয়স অনুযায়ী লম্বায় ঠিকমতো বাড়ছে কি না, তা একজন শিশু বিশেষজ্ঞ সহজেই নির্ণয় করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে শিশুর উচ্চতা একটি আদর্শ উচ্চতা-চার্টের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবে কারণ জানার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটু বেশি অনুসন্ধানের প্রয়োজন হতে পারে। সাপ্তাহিক: কত বছর পর্যন্ত একটি শিশু লম্বা হতে পারে। ডা. রবি বিশ্বাস: একটা শিশু সাধারণভাবে ছেলে হলে আঠারো, আর মেয়ে হলে ষোলো বছর পর্যন্ত লম্বায় বেড়ে থাকে। এরপর চেষ্টা করেও কাউকে লম্বা বানানো সম্ভব নয়। তবে বয়স কম থাকতে সঠিক পদক্ষেপ নিলে আশানুরূপ ফল পাওয়া সম্ভব। সাপ্তাহিক: শিশু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য কোন বিষয়ের দিকে বেশি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। ডা. রবি বিশ্বাস: শিশুর কোনো রোগ আছে কি না, শিশুটি পরিমিত এবং পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার খাচ্ছে কি নাÑ এদিকে নজর দিতে হবে। যেকোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক সমস্যার সঠিক চিকিৎসা শিশুর বেড়ে ওঠার পূর্বশর্ত। এছাড়াও পর্যাপ্ত ব্যায়াম আর মানসিক শক্তির যোগান দিয়েও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা সফল হয়েছে। সাপ্তাহিক: শিশু লম্বা হবার ক্ষেত্রে কীভাবে চিকিৎসা করে থাকেন। ডা. রবি বিশ্বাস: প্রথমেই শিশু কতটা খাটো তা নির্ণয় করে কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করতে হবে, তা হলেই অনেকখানি সফল হওয়া সম্ভব। এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রভূত উন্নতি ঘটার কারণে মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই ভাগ্যকে জয় করতে পেরেছে। শিশুর লম্বা হবার ক্ষেত্রেও গতানুগতিক চিন্তাধারার বাইরেও অনেক কিছু করা হচ্ছে। উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও বর্তমানে সঠিক কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনে হরমোন চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুর উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব। সাপ্তাহিক: হরমোন চিকিৎসা কি দেশেই সম্ভব? কোথায় কোথায় এ চিকিৎসাসেবা পাওয়া সম্ভব? সাধারণত কত বছর বয়সের শিশুদের হরমোন চিকিৎসা করে থাকেন? হরমোন চিকিৎসা সম্পর্কে যদি বিস্তারিত বলেন? ডা. রবি বিশ্বাস: হ্যাঁ। ঢাকা শিশু হাসপাতাল ছাড়াও বারডেম হাসপাতালে এ চিকিৎসা দেয়া হয়। শিশুর শরীরে অনেক ধরনের হরমোনের অভাবে তার বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে, যেমন- থাইরয়েড হরমোন, গ্রোথ-হরমোন বা সেক্স হরমোন। তাই রোগ-নির্ণয় সাপেক্ষেই সঠিক বয়স বলা সম্ভব। তবে লম্বা হবার জন্য শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি শেষ হবার বয়স অর্থাৎ মেয়েদের ১৬ ও ছেলেদের ১৮ বছরের আগেই চিকিৎসা নিতে হবে। যত আগে চিকিৎসা শুরু করা যাবে, তত ভালো ফল পাওয়া যাবে। সাপ্তাহিক: এ চিকিৎসার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি রয়েছে? ডা. রবি বিশ্বাস: উন্নত দেশসমূহে এ ধরনের চিকিৎসা অনেকদিন ধরে এবং ব্যাপক পরিসরে করা হচ্ছে। এ ছাড়া গবেষণায়ও তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সাপ্তাহিক: স্বাভাবিকভাবে যেন শিশু লম্বা হয়, সেক্ষেত্রে মা-বাবার করণীয় কি? ডা. রবি বিশ্বাস: শিশু যদি জন্নগতভাবে অস্বাভাবিক মনে হয়, তখনই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এরপর শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ এবং পরবর্তীতে পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার দিতে হবে। অসুখ হলে সঠিক চিকিৎসা দিতে হবে। পাশাপাশি লক্ষ রাখতে হবে, শিশু ঠিকমত বাড়ছে কিনা। সন্দেহ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।