ছবি সংগৃহীত

কার্জন হল: ইতিহাসে উজ্জ্বল, প্রাণচাঞ্চল্যে রঙিন

তানভীর আশিক
লেখক
প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০১৪, ১১:২৭
আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০১৪, ১১:২৭

(প্রিয়.কম) ১৯০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ তৎকালীন ভাইসরয় ও গর্ভণর জেনারেল জর্জ কার্জন রমনা এলাকায় ভিত্তি স্থাপন করেন এক ইমারতের। এই ইমারত নির্মিত হয়েছে টাউন হল হিসাবে ইতিহাসের কোথাও কোথাও উল্লেখ থাকলেও শরীফউদ্দীন আহমদ এক প্রবন্ধে এ ধারণাটিকে ভুল বলে যুক্তি প্রকাশ করেন। তাঁর মতে এটি নির্মিত হয় ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসেবে এবং নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন ভাওয়ালের রাজকুমার। ১৯০৪ সালের ঢাকা প্রকাশ লিখেছিল- "ঢাকা কলেজ নিমতলীতে স্থানান্তরিত হইবে।

গম্বুজ
এই কলে��ের সংশ্রবে একটি পাঠাগার নির্মাণের জন্য সুযোগ্য প্রিন্সিপাল ডাক্তার রায় মহাশয় যত্নবান ছিলেন। বড়লাট বাহাদুরের আগমন উপলক্ষে ভাওয়ালের রাজকুমারগণ এ অঞ্চলে লর্ড কার্জন বাহাদুরের নাম চিরস্মরণীয় করিবার নিমিত্তে 'কার্জন হল' নামে একটি সাধারণ পাঠাগার নির্মাণের জন্য দেড় লক্ষ টাকা দান করিয়াছেন।" সেই মতে এই ইমারত নির্মিত হয় ‘কার্জন হল’ নামে এবং ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসেবে। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে ঢাকা কলেজের ক্লাস চলে কার্জন হলে। তারপর ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে কার্জন হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের বিজ্ঞান বিভাগের জন্য অর্ন্তভুক্ত হয়। লাল ইটের দ্বিতল ভবনটিতে বিশাল একটি কেন্দ্রীয় হল আছে। পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে সংযোজিত কাঠামো আর চারপাশ দিয়ে বারান্দা ঘেরা। উত্তর দিকের সম্মুখভাগে অশ্বক্ষুরাকৃতির খাঁজকাটা খিলান রয়েছে। ভবনটি ইউরোপ ও মোগল স্থাপত্য রীতির অপূর্ব সংমিশ্রণ। এর চমৎকার গম্বুজগুলো আধুনিক ইসলামী স্থাপত্যবিদ্যার পরিচয় বহন করে। সম্রাট আকবর নির্মিত ফতেহপুর সিক্রির দুর্গের সঙ্গে এ ভবনের স্থাপত্য নকশার মিল রয়েছে বলে জানা যায়। ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এই কার্জন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বদম্ভে ঘোষণা দেন- উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা। আর ছাত্ররা সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করে।
রঙিন ক্যাম্পাসে পথচলা
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নয়। দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও কার্জন হলের নির্মান শৈলী উপভোগ করার জন্য ছুটে আসেন। এমনই একজন মাহমুদ এসেছেন সৈয়দপুর থেকে। ঢাকায় বড় বোনের বাসায় বেড়ানোর সুযোগে দেখে যেতে এসেছেন ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন কার্জন হলের সৌন্দর্য।
ক্লাস শেষে উজ্জ্বল তারুণ্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার প্রাক্তন ছাত্র মীর আবু নাসের জয় বলেন, চাকরি সূত্রে আমি ঢাকার বাইরে থাকি তবে ঢাকায় আসলে একবার হলেও কার্জন হলটা একনজর দেখে যাওয়ার চেষ্টা করি।
চলছে আড্ডা আর সাথে ডিম খিচুড়ি
ক্লাস শেষে আড্ডা চলে ছাত্র-ছাত্রীদের। সাথে ক্যান্টিনের চা- সিঙ্গারা। আছে ডিম খিচুড়িও। এইভাবে অতীতের উজ্জ্বল স্মৃতি আর বর্তমানের প্রাণচঞ্চলতায় আলো ছড়াচ্ছে কার্জন হল। তথ্যসূত্র: ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী- মুনতাসীর মামুন; উইকিপিডিয়া। ছবি: তানভীর আশিক।