ছবি সংগৃহীত

কান ছাড়াই শুনতে পায় গার্ডিনার্স ব্যাঙ

প্রিয় লাইফ
লেখক
প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৭:০৩
আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩, ০৭:০৩

শব্দ শোনার জন্য মানুষের যেমন দু দুটি কান আছে, তেমনটা নেই জীবজগতের অনেক প্রাণীর। কান না থাকলেও জিহ্বা দিয়ে শুনতে পায় সাপ। পেছনের পায়ে থাকা শ্রবণযন্ত্র দিয়ে শব্দ শোনে ঘাসফড়িং জাতীয় পোকা। কিন্তু কান ছাড়া ব্যাঙের কথা কি শুনেছেন কখনো? শুধু তাই নয়, কানের বদলে মুখ দিয়ে শোনে এই ব্যাঙগুলো, যেন মুখ হাঁ করে শব্দকে গিলে খাচ্ছে! গার্ডিনার্স ব্যাঙ (Gardiner’s Seychelle frog) নামের এই ব্যাঙের প্রজাতিটি কান ছাড়াই শুনতে সক্ষম। এহেন ব্যাঙগুলো বেশ ছোট আকৃতির। শুধুমাত্র Seychelle দ্বীপপুঞ্জে পাওয়া যায় এদের দেখা। এদের দৈর্ঘ্য মাত্র এক সেন্টিমিটার অর্থাৎ আপনার নখের এক কোণার ওপরেই দিব্যি একটা ব্যাঙ বসে থাকতে পারবে। বেশিরভাগ প্রজাতির ব্যাঙের বাহ্যিক কোনও কান না থাকলেও এদের রয়েছে মধ্যকর্ণ বা Middle ear এবং অন্তঃকর্ণ বা Inner ear। তাদের কানের পর্দা থাকে তাদের মাথার ওপরে এবং সেখান থেকে শব্দ তরঙ্গ পৌঁছে যায় তাদের অন্তঃকর্ণে, এর পর চুলের কোষের মাধ্যমে এই শব্দ বৈদ্যুতিক তরঙ্গ রূপে পৌঁছে যায় মস্তিষ্কে। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ধারণা করতেন, যে মধ্যকর্ণ ছাড়া শব্দ শোনা যায় না এবং ব্যাঙের চামড়ায় ধাক্কা খেয়ে ৯৯.৯ শব্দ পৌঁছায় মস্তিষ্কে। কিন্তু গার্ডিনার্স ব্যাঙ এর কোনও মধ্যকর্ণ ক্ষেত্রে যা হয় তা হল, মুখগহ্বর এবং মুখের ভেতরে থাকা কিছু বিশেষ কোষ-কলার সাহায্যে শব্দ পৌঁছে যায় তাদের এই অন্তঃকর্ণে। এর ফলে গার্ডিনার্স ব্যাঙ শব্দ শুনতে পায় না- এই পুরনো ধারণার অবসান ঘটল। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স এর Journal proceedings এ।

ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অফ পয়টিয়েরস এর রেনৌড বয়স্টেল বলেন, “আমরা জানি কিছু ব্যাঙ অন্যান্য ব্যাঙের মতই ডাকতে পারে কিন্তু শ্রবণের জন্য তাদের কোনও টিম্প্যানিক মধ্যকর্ণ থাকে না। এ বিষয় দুটি পরস্পরবিরোধী”। এ কথাটি বলার কারণ হল, কান যদি না থাকে অর্থাৎ ব্যাঙটি যদি বধির হয়, তবে একই সাথে তার মূক হবার কথা। কিন্তু বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেন যে এই ব্যাঙগুলোর কান না থাকা সত্ত্বেও তারা বেশ জোরে জোরে ডাকতে পারছে। এরপর এই ঘটনার তদন্ত করার জন্য তারা এই ব্যাঙের ডাক রেকর্ড করেন এবং তা শোনান অন্যান্য জংলি ব্যাঙদেরকে। গার্ডিনার্স ব্যাঙ এর ডাক বেশ চড়া সুরের এবং জোরালো। বনের অন্য কোনও শব্দের সাথে এর তুলনা দেওয়া যায় না। এই রেকর্ড করা ডাক বাজানোর পর দেখা যাচ্ছে যে অন্য ব্যাঙগুলো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। “শব্দটি বাজিয়ে শোনালে তারা সাড়া দিচ্ছে,” বলেন এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী জাস্টিন গেরল্যাক। “তারা হয় তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে - শব্দ যেখান থেকে আসছে সেদিকে তাকায় – অথবা তারাও সাড়া দেয় ডাকের মাধ্যমে”, এমনকি কোনও ব্যাঙ যদি বেশি জোরে জোরে ডাকা শুরু করে তবে অন্য ব্যাঙরা তাকে আক্রমণও করে বসতে পারে। গার্ডিনার্স ব্যাঙরা যে শুনতে পায় এটা তো নিশ্চিত হওয়া গেলো। কিন্তু কিভাবে শুনতে পায়? এটা জানার জন্য গবেষকরা অতি-সংবেদনশীল এক্স-রে চিত্রায়ন প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে ব্যাঙের শারীরিক গঠন সহজে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়। এতে দেখা যায়, শব্দ তরঙ্গের উপস্থিতিতে কম্পিত হচ্ছে তাদের মুখগহ্বর, অনেকটা গিটারের ভেতরের অংশের মত। আর মুখগহ্বর এবং অন্তঃকর্ণের মাঝে অনেক পাতলা স্তরের কোষ অবস্থিত যার কারণে শব্দ অনেক ভালোভাবে ভেতরে পৌঁছে যায় এবং কান না থাকা সত্ত্বেও গার্ডিনার্স ব্যাঙ বেশ ভালই শুনতে পায়। এসব গবেষণা থেকে সম্ভব হয় অনেক নতুন তথ্যের উদ্ঘাটন। কিন্তু সবচাইতে আশার বিষয় হল এই, যে এই তথ্য ব্যবহার করে মানুষের বিভিন্ন রকমের বধিরতার সমাধান করা সম্ভব হবে।