ছবি সংগৃহীত

এই মামা এই বাংলা র‌্যাপ চলব নাকি? (ভিডিও)

কুদরত উল্লাহ
সহ-সম্পাদক, বিনোদন
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০১৫, ১০:২২
আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০১৫, ১০:২২

ছবি: লয়েড তুহিন হালদার (প্রিয়.কম) সালটা ২০০৮। ঘড়িতে সময় রাত আটটা। ধানমন্ডি লেকে অপেক্ষা করছে এক যুবক। এ অপেক্ষা আসিফের, সাফা নামের একটি ছেলের জন্য। বন্ধু তারা দুজন। দুজনই ভালো বাংলা র‌্যাপ গান করেন। তখনও বাংলাদেশে বাংলা র‌্যাপ গান কেউ করেনি। র‌্যাপ গান বলতে চিনতো বাংলা ও ইংলিশ মিলিয়ে যে গান করা হত। তাহলে একমাত্র আসিফের মাথায় আসল কোথা থেকে এই র‌্যাপ গান? ‘টুপাক’ নামের ক্যালিফ্রোনিয়ার এক র‌্যাপারের গান ইন্টারনেটে দেখে আসিফের মাথায় র‌্যাপ ভর করে সেদিন থেকেই। রাত দিন ইন্টারনেট ঘেঁটে টুপারকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালায় আসিফ। অবশেষে খুঁজে পায় টুপারকে তবে ১৯৯৫ সালেই সে মারা গেছে। মারা গেছে বললে ভুল হবে। তাকে হত্যা করা হয়েছেছিল শুধুমাত্র র‌্যাপ গান করার অপরাধে। টুপারের ইতিহাস আসিফের মনকে আরও বেশি নাড়া দেয়। সেদিনই সে সিদ্ধান্ত নেয় পড়ালেখার বাইরে যদি কিছু করে তাহলে শুধুই র‌্যাপ গান করবে। র‌্যাপ গান বলে যে শুধু বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় হবে তা কিন্তু নয়। আসিফ মনে মনে আরও একটি সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলো বাংলায় র‌্যাপ গান হবে একদিন। যা গাইবে বিশ্বের মানুষ।

সাফার সাথে তার আজকের দেখা করার কারণ এই র‌্যাপ গান নিয়ে। সাফা তার কন্ঠে একটি বাংলা র‌্যাপ গান শুনায়। গানটি শুনে আসিফের পছন্দ হয়। তার পড়ের দিন আসিফের বাসায় একটি ছেলেকে নিয়ে আসে তার নাম ‘সোহান’। তাকে দেখে বোঝার উপায় নাই সে বাংলাদেশি নাকি বিদেশী। তার গাওয়া র‌্যাপ গান শুনে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন আসিফ ঠিক ততটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন তার ব্ল্যাক আফ্রিকান অথবা আমেরিকানদের মত চেহারা দেখে। তাকে দিয়েই হবে! এই শব্দটা সেদিন আসিফের মুখ দিয়ে এমনিতেই বের হয়ে গিয়েছিল। দেরি না করে আসিফ এবং সোহান দু'জন মিলে শুরু করেন তাদের স্বপ্নের পথে পথ চলা। স্বপ্নটা যেহেতু দুজনের এবং তারা একটি দল। তাই একটা নাম দিতে হয় দলের। অনেক ভেবে নাম দলের নাম দেয়া হয় ‘আপটাউন লোকল্জ’(Uptown Lokolz)। দলের নাম তো দেয়া হল। এবার নিজেদের স্টেজ নাম দিতে হয়। আসিফ হয়ে গেল ‘বিগ স্পেড’(Bigg Spade) ও সোহানের নাম হয়ে গেল ‘ব্ল্যাক জ্যাং’(Black Zang)। তাদের পথচলা শুরু হলো নতুন করে।
‘আপটাউন লোকল্জ’(Uptown Lokolz) দলটির শুরুতেই হোঁচট খেতে হয়। কেউ তাদের গ্রহণ করতে চায় না। কি সব কথা বলে পাগলের মত। কত কথা, কত ঘটনা আর কত যে রটনা ঘটে যায় তাদের জীবনে। তবুও আশায় বুক বাঁধে ‘আপটাউন লোকল্জ’(Uptown Lokolz)। টুপাকের সেই মৃত্য তাদের যেমনটা অনুপ্রাণিত করেছিল র‌্যাপ গান করতে ঠিক তেমনি লিংকিংপার্ক, এমএলএন, ফিফটিসেনদের কাছ থেকে গান দেখে দেখে ‘আপটাউন লোকল্জ’(Uptown Lokolz)। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে, র‌্যাপ গানের উপর গবেষণা করে, নিজেদের ঝালিয়ে নিতে নিতে পার হয়ে প্রায় তিন বছর। তখনও র‌্যাপ গান বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা না থাকার কারণে শেখার একমাত্র অবলম্বন ছিল ইন্টারনেট। অবশেষে ২০১০ সালে আসে তাদের একটি র‌্যাপ গানের মিউজিক ভিডিও। ইউটিওবে প্রকাশ করা হয় ভিডিওটি। ব্যাস হয়ে গেল ‘এই মামা এই’ খ্যাত এই গানটি দিয়ে ‘আপটাউন লোকল্জ’(Uptown Lokolz) পৌঁছে যায় অনেকেরই কাছে। লাখের মত শ্রোতা হয়ে যায় তাদের। তখন বাংলা র‌্যাপ গানের এত শ্রোতা মানে বিশাল ব্যাপার ছিল। সে যাই হোক, ‘এই মামা এই’ গানের জনপ্রিয়তা এতটাই পায় যে রাস্তা ঘাটে যেখানে দেখা যায় সেখানেই শ্রোতার কণ্ঠে চলে আসে ‘এই মামা এই’ । ‘আপটাউন লোকল্জ’(Uptown Lokolz) মতে এটাই তাদের বড় পাওয়া। একই বছরের মাঝামাঝিতে বাজারে আসে তাদের প্রথম অ্যালবাম ‘কেএসপি’। এটিও বাংলাদেশি র‌্যাপ গানের শ্রোতাদের দারুন ভাবে আকর্ষিত করে। শ্রোতাদের মাঝে আলোচনা শুরু হয়। এবং বাংলায় র‌্যাপ গানের মর্যাদা পায়।
‘আপটাউন লোকল্জ’(Uptown Lokolz) শুধু যে নিজেদের ধরে রেখেছেন দেশের ভিতরে তা কিন্তু নয়। ব্ল্যাক জ্যাং(Black Zang) দেশের সীমানা পেরিয়ে আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি কেপিটাল অব ইউএসএ(Washington DC capital of USA) গেয়ে এসেছেন বাংলায় র‌্যাপ গান। অনুষ্ঠানটিতে নাচ গান, ডিজে পার্টি ছিল। একমাত্র র‌্যাপার হিসেবে ছিলেন ‘ব্ল্যাক জ্যাং(Black Zang)। এই অনুষ্ঠানটিতে ছিল আরও ৫টি দেশে ভারত, সেনেগাল, জিম্বাবুয়ে, সার্বিয়া ।তারপর গিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলসে মিউজিক ভিডিওর দৃশ্যধারনের জন্য ‘ব্ল্যাক জ্যাং(Black Zang)’। আন্তর্জাতিক ভাবে এখন বাংলাদেশেও র‌্যাপ গান করেন অনেকে তা কিন্তু অজানা নয়। এ বছর ২০১৫ সালের শেষের দিকে বের হবে তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ভিআইপি’। ‘আপটাউন লোকল্জ’(Uptown Lokolz) মতে, তারা দেখতে চান বাংলা ভাষায় হবে র‌্যাপ গান। যা সারা বিশ্বব্যাপী আওয়াজ তুলবে নানা দেশের মানুষগণ। যারা বাংলা পারেন না তারাও গাইবেন ‘এই মামা এই বাংলা র‌্যাপ চলব নাকি’।
হিপহপের অর্থ হিপহপ এক প্রকার সঙ্গীত যা হিপ হপ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং হিপ হপের ৪ টি মূল উপাদান আছেঃ র‌্যাপিং, ডিজেইং, সিন্থিসিস ও বীটবক্সিং। ১৯৭০-এর দশকে নিউইয়র্ক সিটির সাউথ ব্রনক্স এলাকায় হিপ হপ শুরু হয়। র্যাপকে হিপ হপ-এর প্রতিশব্দ হিসেবে দেখা হলেও আসলে হিপ হপ বলতে একটা পুরো সংস্কৃতির চর্চাকে বোঝায়। র‌্যাপিং বলতে এমসিং বোঝানো হয়ে থাকে, যা এমন এক ধরণের গায়কী যাতে গানের কথা বলা হতে থাকে তাল ও ছন্দের মাধ্যমে যার সাথে থাকে নানা রকমের বীট। আধুনিক বীটে থাকে ড্রাম মেসিন, সিন্থিসাইজার ও সরাসরি ব্যান্ড। হিপহপের ইতিহাস কিথ কাউবয় হিপ হপ শব্দটি প্রথম চালু করেন। যখন একে ডিস্কো র‌্যাপ বলা হতে থাকে তখন কিথ কাউবয়, ডিজে হলিউড ও লাভবাগ স্টারস্কি এই শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করেন। এটা বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে কাউবয় শব্দটি চালু করে তার এক বন্ধুকে উত্যক্ত করতে যে সামরিক বাহিনীতে মাত্র যোগ দিয়েছিল আর এটা সামরিক ক্যাডেটদের প্যারেডের মতো হিপ হপ শোনায়। কাউবয় তার মঞ্চ পরিবেশনাতে এটা শুরু করে এবং অন্যান্য শিল্পীরাও এটা শুরু করে। বিশেষ করে আফ্রিকান সংগীতে। পশ্চিম আফ্রিকার ভ্রমণকারী গায়কদের ও কবিদের একটি দল যাদের নাম গ্রিয়টস, তারা মৌখিক ঐতিহ্যবাহী এক প্রকার গান গাইত, যা র‌্যাপারদের গানের ধরণের মতোই। ১৯৭০-এর দশকে হিপহপ সঙ্গীতের উদ্ভব ঘটে যখন ব্লক পার্টিগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ১৯৮০-এর দশকের হিপহপ সঙ্গীত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া-তে বি-বয়িং-এর গান প্রথম হিপহপ সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত বিস্টি বয়েজের লাইসেন্সড টু ইল হিপহপ অ্যালবামটি বিলবোর্ড চার্টের ১ম স্থানে চলে আসে প্রথম বারের মতো, যা ছিল প্রথম বাণিজ্যিক সাফল্য।
হিপহপের স্বর্ণযুগ হিপহপের ১৯৮০-এর দশকের শেষ থেকে ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিককে হিপহপ-এর স্বর্ণযুগ বলা হয়। গ্যাংস্টা র্যাপ হলো হিপহপ-এর উপধারা যা অনেক বেশি আক্রমণাত্নক। গানের কথায় উঠে আসত অবিরাম ধর্মনিন্দা, কালোদের নিগার বলে গালি, প্রচণ্ড বিতর্কিত বিষয় এবং আমেরিকান কালো যুব সমাজের সহিংস জীবনযাত্রা। গ্যাংস্টা র্যাপাররা বলতে থাকেন যে এটা তাদের জীবনের কঠোর বাস্তবতার কাহিনী এবং তারা এটা অভিনেতার মতো দেখাচ্ছেন মাত্র। ব্রাজিলীয় হিপহপ হলো আমেরিকার পর হিপহপ-এর বড় জায়গা। ব্রাজিলীয় হিপহপ-এ উঠে এসেছে ব্রাজিলীয় কালোদের বর্ণবাদী ও অর্থনৈতিক অবস্থা, যারা সেখানে খুবই খারাপ কুড়ে ঘরে থাকে। [video:https://www.youtube.com/watch?v=ArQQgVrnEMI&feature=youtu.be]