ছবি সংগৃহীত

ইসলামের দৃষ্টিতে নারীরা হাই-হিল জুতা পরতে পারবে, নাকি পারবে না?

মাওলানা মনযূরুল হক
লেখক
প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০১৫, ০২:৩০
আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫, ০২:৩০

আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানুষের বংশধারা অব্যাহত রাখার জন্যে মানুষকে নারী ও পুরুষ বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি প্রত্যেকের জন্যেই দিয়েছেন আলাদা বিধান, আলাদা আয়োজন। দৈহিক গঠন থেকে শুরু করে নারী ও পুরুষের প্রাকৃতিক তারতম্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান। ইবাদত-বন্দেগিতে নারী ও পুরষের পদ্ধতিতে রয়েছে পার্থক্য। কাজের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের অবস্থান আলাদা। নারীদের প্রধান দায়িত্ব ঘরে ও পুরুষের জন্যে বাইরের দিকটা সামাল দেয়া প্রধান দায়িত্ব। তাই নারীদের জন্যে এমন কিছু করা উচিত নয়, যা তার গঠন-প্রকৃতি ও ইসলাম সমর্থন করে না। সাধারণত নারীরা কোমল দেহবিশিষ্ট ও নাজুক গঠেনের হয়ে থাকে । তাই নারীদের চলাফেরা ও পোশাকের ক্ষেত্রেও এমন পোশাক নির্বাচন করতে হবে এবং এমনভাবে চলাফেরা করতে হবে, যা তার শরীরের জন্যে উপকারী এবং চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটাবে না। আজাকাল নারীরা যে হাই-হিল জুতো পরে, তার ক্ষতিকর বিষয়টি ফুটে ওঠে। নারীরা হাইহিল পরে রাস্তায় চলাফেরা করে, অথচ বাস্তবিক অর্থে তা নারীদের কোমল গঠনের জন্যে উপযোগী নয়, ফলে তার পড়ে গিয়ে আহত হবার আশঙ্কা থাকে শতভাগ। এবং রাস্তাঘাটে অহরহ তেমন বিব্রতকর ঘটনা ঘটতেও দেখা যায়। এজন্যেই ইসলাম নারীদের হাইহিল পরার বিষয়টি সমর্থন করে না কেননা, ইসলাম সাধারণ অর্থে আমাদের নির্দেশ দিয়েছে, যেনো আমরা আশঙ্কাজনক বিষয় থেকে বেঁচে থাকি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের নিজদেরকে ধ্বংসে নিপতিত করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৫) এটা তো দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে, হাই-হিল পরার কারণে একজন নারীকে বাস্তবের তুলনায় অধিক দীর্ঘকায় দেখায় এবং তাদের অন্যতম লজ্জাস্থান নিতম্ব মানুষের চোখে অধিক দৃশ্যমান হয়ে ধরা পড়ে । অবশ্যই এটা এক ধরনের প্রতারণা। একই সাথে হাই-হিল পরার কারণে নারীর এমন সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে, যা ইসলাম তাকে ঢেকে রাখাতে বলেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ আর আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেনো তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। আর যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পেয়ে তা ছাড়া তারা যেনো তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেনো তাদের ওড়না দিয়ে তাদের বক্ষদেশ ঢেকে রাখে। তারা যেনো তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ক্রীতদাস, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে না দেয়। আর তারা যেনো আপন সৌন্দর্য প্রকাশের তাড়নায় সজোরে পদচারণা না করে। (সুরা নূর, আয়াত ৩১) এছাড়া হাই-হিলের কারণে নারীরা সামনের দিকে অনেকখানি ঝুঁকে থাকে। এর কারণে তাকে হেলেদুলে প্রলোভন জাগানো ভঙ্গিতে চলাফেরা করতে হয়। তাতে কোরআনে যেসব নারীদের ব্যাপারে সতর্কবাণী এসেছে, এদের বেলায়ও তা পূর্ণভাবে মিলে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বক্তব্য অনুসারেও হাই-হিল নারীর পিঠের ক্ষতি সাধন করে। তাছাড়া হাই-হিল থেকে একপ্রকার টক-টক আওয়াজ উচ্চকিত হয় যা পুরুষকে আকৃষ্ট করে। সুতরাং এমন ক্ষতিকর ও মন্দকাজের প্রতি আহ্বানকারী পোশাক কিছুতেই নারীর জন্যে শালীন হবে না এবং তাই ইসলামও সমর্থন করবে না। (ফতোয়া লাজনাতুদ দায়িমাহ, ৯/৪৬) মাওলানা মনযূরুল হক [লেখক পরিচিতি : মাওলানা মনযূরুল হক- বর্তমানে তিনি দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘আল ফাতাহ পাবলিকেশন্সের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে লেখক ও সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তিনি একজন হাফেজ, আলেম এবং লেখক-সাংবাদিক। পড়াশুনা করেছেন ঢাকার শীর্ষস্থানীয় কওমি মাদরাসা দারুল উলুম মাদানি নগর, কাকরাইল মাদরাসা ও জামেয়া কুরআনিয়া লালবাগে। বেশ কয়েকটি মৌলিক ও অনুবাদিত গ্রন্থ রয়েছে তার। আহলে হাদিস সমস্যার সমাধান তার লেখা আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি বই। এছাড়াও প্রকাশের অপেক্ষায় আছে, ফিলিস্তিনের গল্প সংঙ্কলন আশিক মিন ফিলিস্তিন, শিশুতোষ গল্প এই পৃথিবীর পাতায়, নবিয়ে রহমত, সিরাজাম মুনীরা, খোদার আজব বান্দা এরা সহ আরো বেশ কিছু গ্রন্থ।]