
ছবি সংগৃহীত
আশুরা ও মুহাররম : জাল-দূর্বল হাদিসের আলোকে প্রচলিত ১২টি ভিত্তিহীন আমল ও বিশ্বাস
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৫, ০৩:০৭
যেকোন আমল ও আকীদার বিশুদ্ধ ইলম যেমন থাকা চাই সে বিষয়ে অশুদ্ধ ও সমাজে প্রচলিত বানোয়াট-বিদাআত সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। কারণ অনেক দীনী বিষয়ে সহীহ ও বিশুদ্ধ বর্ণনার চেয়ে ভিত্তিহীন বা দুর্বলভিত্তির বর্ণনার পরিমান বেশি! আর সেজন্যই যুগে যুগে মুহাদ্দিসীনে কেরাম (রাহিমাহুমুল্লাহ)সহীহ হাদীস যেমন সংকলন করেছিলেন, উম্মতকে সতর্ক করবার জন্য হাদীসের নামে জালিয়াতি করা বর্ণনাগুলোও পৃথক ভাবে সংকলন করে গিয়েছেন। যথারীতি মুহাররম ও আশুরার করণীয় আমলের চেয়ে বর্জনীয় কাজ সমূহ অনেক বেশি! চলুন আশুরা ও মুহাররম সম্পর্কিত জাল-জঈফ হাদীসের ভিত্তিতে প্রচলিত কিছু ভিত্তিহীন আমল ও বিশ্বাসের কথা জেনে নেই। ১. বছরের শ্রেষ্ঠ মাস মুহাররম : আল্লামা সুয়ূতী সংকলিত জামেউর সগীরের একটি বর্ণনার ভিত্তিতে কারো কারো ধারণা, মুহররম মাসের মর্যাদা বছরের অন্য যেকোন মাসের চেয়ে বেশি। সেই বর্ণনাটি হলো – سيد الأشهر المحرم و سيد الأيام الجمعة অর্থাৎ: সকল মাসের সেরা মাস মুহাররম ও সকল দিনের সেরা দিন জুমার দিন। উক্ত হাদীসের শেষের অংশ বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে বিশুদ্ধ ভাবে বর্ণিত হলেও প্রথমাংশটিকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম মওজু বা বানোয়াট বলেছেন। (যঈফুল জা-মি’ ৩৩২৬) সুতরাং মুহাররমকে বছরের শ্রেষ্ঠ দিন মনে করা ভুল ও ভিত্তিহীন। একই কিতাবের অপর বর্ণনায় এসেছে أفضل الشهور المحرم অর্থাৎ মুহাররম হলো যেকোন মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মাস। শায়খ আলবানী রহ: যঈফুল জা-মি’ কিতাবে ৭৯৪নং হাদীসের অধীনে এটিকে যঈফ বলে মন্তব্য করেছেন। অবশ্য বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, রমাজানের পর অন্য যেকোন মাসের সিয়ামের চেয়ে মর্যাদার বিচারে মুহাররম মাসের সিয়াম শ্রেষ্ঠ। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم অর্থাৎ রামাজানের পর শ্রেষ্ঠ সিয়াম হলো মুহাররম মাসের সিয়াম। সুতরাং সিয়াম পালনের জন্য মুহাররম দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ মাস হলেও কোনভাবেই এটি বছরের শ্রেষ্ঠ মাস নয়। ২. মুহাররম মাসের প্রতিদিনের রোযার বিনিময়ে ৩০ নেকি : ইমাম সুয়ূতী রহ: জা-মিউস সাগীর ও ইমাম তাবরানী আল মু’জামুল কাবীরে ইবনে আব্বাস রা: থেকে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন- من صام يوما من المحرم فله بكل يوم ثلاثون حسنة অর্থাৎ যে ব্যক্তি মুহাররম মাসের এক দিন রোযা রাখবে তাকে প্রতি দিনের বিনিময়ে ৩০টি নেকি দান করা হবে। আল্লাহ হাইছামী বলেছেন- এই হাদীসে আল হাইছাম ইবনে হাবীব নামে একজন বর্ণনাকারী আছেন, যাকে হাফেজ যাহাবী রহ: ‘দুর্বল’ বলে মন্তব্য করেছেন। ইমাম মানাওয়ী জা-মিউস সাগীরের ব্যখ্যায় এবং শায়খ আলবানী ‘সিলসিলাতুয যাঈফা’য় এই হাদীসকে বেশ কয়েকটি কারণে জাল বলে মন্তব্য করেছেন। অবশ্য এমনিতে মুহাররম মাসে নফল সিয়ামের ফজীলত বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ও সিদ্ধ বিষয়। কিন্তু প্রতিদিনের নফল সিয়ামের যে বিনিময় উল্লেখিত বর্ণনায় এসেছে, সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। ৩. আশুরার দিন পরিবারের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করা : আশুরার দিনকে ঘিরে প্রচলিত ভিত্তিহীন আমল ও আকীদার মধ্যে অন্যতম হলো-‘এই দিনে পরিবারের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করা এবং এর কারণে সারা বছর সচ্ছল থাকা যাবে বলে ধারণা রাখা। এ সম্পর্কিত অশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি হলো- من وسع على عياله يوم عاشوراء وسع الله عليه سائر السنة. অর্থ: যে ব্যক্তি আশুরার দিনে তার পরিবারের লোকদের জন্য সচ্ছলতার (ভাল খাবার) ব্যবস্থা করবে আল্লাহ সারা বছর তাকে সচ্ছল রাখবেন। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেছেনঃ হাদীসটি সহীহ নয়। এ হাদীস কয়েকটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তার প্রত্যেকটিই দুর্বল বা অনির্ভরযোগ্য। বিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ইবনে কায়্যিম জাওযী (রহঃ) এ হাদীস সম্পর্কে বলেছেনঃ তাবারানী হাদীসটি আনাস রা. সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এ সূত্রে হাইদাম ইবনে শাদাখ নামের ব্যক্তি অপরিচিত। এবং উকায়লী বর্ণনা করেছেন আবু হুরাইরা রা. থেকে এবং তিনি বলেছেনঃ এ সূত্রে সুলাইমান বিন আবী আব্দিল্লাহ নামের ব্যক্তি অপরিচিত। আর এ হাদীসের প্রত্যেকটি সূত্র একেবারে বাজে ও খুবই দূর্বল। (আল-মানারুল মুনীফ ফিসসহীহ ওয়াজ যয়ীফ : ইবনে কায়্যিম জাওযী –রহঃ) তাবরানীর বর্ণনা সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ: তাঁর ‘আমা-লী’তে বলেন- এতে জা’ফরী নামক বর্ণনাকারী রয়েছেন। যাকে ইমা্ম আবু হাতেম যঈফ বলেছেন। আর জা’ফরীর উস্তাদকে আরেক ইমাম আবু যুরআ’হ যঈফ বলেছেন। এছাড়াও এই হাদীসটি এজন্য মুনকার যে, এটি আশুরার দিনে সওম পালন করা সম্পর্কিত বিশুদ্ধ হাদীস বিরোধী। সওম পালন করলে কি করে ভালো খাবারের প্রশ্ন আসে? কেউ হয়তো বলবেন, রাতের বেলায় ভালো খাবারের আয়োজন হতে পারে। মূলত: সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, বোখারী ও মুসলিমের বর্ণনা মতে খায়বরের ইহুদীরা এ দিনে আনন্দ-উৎসব ও সচ্ছলতা প্রদর্শন করত। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিরোধীতা করে সওম পালন করতে বলেছেন। অর্থাৎ সচ্ছলতা প্রদর্শন (ভাল খাবার ও পোষাক ব্যবহার) করা যাবে না। বরং এর বিরোধীতা করে সওম পালন করতে বলা হয়েছে। যদি এ দিনে ভাল খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয় তবে তা ইহুদীদের সাথে সাদৃশ্য আচরণ বলে গণ্য হবে। ৪. আশুরার দিনে গোসল করা ও চোখে সুরমা ব্যবহার করা : من اغتسل يومَ عاشوراءَ لم يمرضْ ذلك العامَ، ومن اكتحلَ يومَ عاشوراءَ لم يرمَدْ ذلك العامَ অর্থ: আশুরার দিনে যে ব্যক্তি গোসল করবে সে ঐ বছর অসুস্থ হবে না। আর যে আশুরার দিনে সুরমা লাগাবে তার চোখ সে বছর প্রদাহগ্রস্থ হবে না। আল্লামা উবনুল জাউযী রহ: ‘আল মাউযুআ-ত’ (জাল হাদীস সমগ্র) গ্রন্থে এই হাদীসটি (জাল হাদীসের তালিকায়) উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ: এই হাদীসটিকে জাল বলে অভিহিত করেছেন। মাজমূউল ফাতাওয়া (৪/৫১৩)হাফেজ ইবনে রাজাব ‘লাতাইফুল মা’আরিফ’ নামক গ্রন্থেও একই মন্তব্য করেন। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ: বলেন-আশুরার দিনে সুরমা বা তেল কিংআ সুগন্ধি ব্যবহার সংক্রান্ত সকল হাদীস মিথ্যাবাদীদের মনগড়া ও বানোয়াট বর্ণনা। কিছু লোক যেমন এই দিনটাকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপনের প্রবক্তা, আবার কিছু লোক এই দিনকে শোকের দিন হিসেবে পালন করে। উভয় দলই বিদআতী এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বহির্ভুত। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা-আহ এই দিনে হাদীস নির্দেশিত সিয়াম পালন করে এবং শয়তান নির্দেশিত বিদআত পরিহার করে। ৫. যুগে যুগে বিভিন্ন নবী-রাসুলগন এই দিনে মুক্তি পেয়েছেন : আশুরার দিনে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এদিনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরত প্রকাশ করেছেন। সহীহুল বোখারীর বর্ণনা মতে বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন। তবে আশুরার দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথাও বলে থাকেন। যেমন, এদিন হযরত ইউসুফ আ. জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইয়াকুব আ. চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। হযরত ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইদরীস আ.কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। অনেকে বলে, এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। [আল আসারুল মারফূআ, আবদুল হাই লাখনেবী ৬৪-১০০; মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ ফী আয়্যামিস সানাহ ২৫৩-২৫৭] ৬. আশুরা পূর্বের নবীগণের ঈদের দিন ছিল : আবু হুরাইরা রা: এর বরাতে মুসনাদে বাযযারে বর্ণিত, عاشوراء عيد نبي كان قبلكم فصوموه أنتم অর্থাৎ আশুরা তোমাদের পূর্বের নবীদের ঈদ ছিল। সুতরাং এদিনে তোমরা রোযা রাখ। এই হাদীসটিকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম যঈফ বলেছেন। কেননা, এই হাদীসের বর্ণনাধারায় ইবরাহীম আল হাজারী নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, তাঁকে ইবনে আদী নির্ভরযোগ্য বললেও অন্য সবাই দুর্বল বলেছেন। ৭. আশুরার দিনের রোযা ৬০ বছর ইবাদতের সমতূল্য : ইমাম সুয়ূতী রহ: তাঁর জাল হাদীস সংকলন- ‘লাআ-লিউল মাসনূআহ ফিল আহা-দীসিল মাউযুআহ’ গ্রন্থে ইবনে আব্বাস রা: এর বরাতে বর্ণিত এমন একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন যাতে বলা হয়েছে-من صام يوم عاشوراء كتب الله له عبادة ستين سنة অর্থাৎ যে ব্যক্তি আশুরার দিন রোযা রাখবে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য ৬০ বছরের ইবাদত (এর সওয়াব) লিপিবদ্ধ করবেন। এই বর্ণনায় আরো আছে যে, আশুরার দিনে রোযা রাখার বিনিময়ে দশ হাজার ফেরেশতার (ইবাদতের) সওয়াব দেওয়া হবে। এই হাদীসটির সনদে হাবীব ইবনে আবিল হাবীব নামের বিখ্যাত মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারী রয়েছে। মুহাদ্দিসীনে কেরামের নিকট যার ব্যপারে মিথ্যা হাদীস রচনার কুখ্যাতি আছে। ৮. আশুরার দিনে বিশেষ নফল নামাজ : আল্লামা শাওকানী রহ: এর জাল হাদীস সংকলনগ্রন্থ ‘আল ফাওয়াইদিল মাজমুআহ ফিল আহাদীসিল মাউযুআহ’য় আবু হুরাইরা রা: এর বরাতে বর্ণিত একটি দীর্ঘ মারফু হাদীস বর্ণনা করেছেন-যাতে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে যোহর ও আসরের মাঝে ৪রাকাত সালাত আদায় করবে এবং তার প্রত্যেক রাকাতে ১০০বার সুরা ফাতেহা ১০বার আয়াতুল কুরসী ১১বার সুরা ইখলাস ও ১৫বার করে সুরা ফালাক ও নাস পড়বে, অত:পর সালাম ফেরানোর পর ৭০বার ইস্তেগফার করবে-আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের উপর একটি সাদা গম্বুজ দান করবেন....। এ হাদীসটি বর্ণনার পর তিনি আল্লামা শাওকানী এটাকে জাল বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন-এর বর্ণনাকারী সবাই অজ্ঞাত। এছাড়াও আশুরার দিনে বিশেষ পদ্ধতির নফল সালাত সম্পর্কিত একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যার কোনটিই বিশুদ্ধ নয়। ৯. হুসাইন রা: এর মৃত্যুদিবস : অর্থাৎ আশুরার দিনে যে ব্যক্তি কাঁদবে, কেয়ামতের দিন সে ‘উলুল আযমি মিনার রুসুল’ আলাইহিস সালাম এর সঙ্গে থাকবে: প্রাগুক্ত সূত্রে আশুরার দিনে হুসাইন রা: এর মৃত্যুদিবস পালন উপলক্ষে কান্নাকাটি করা সংক্রান্ত আরো একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীস বর্ণনার পর আল্লামা শাওকানী হাদীসটিকে রাফেজী-শিয়াদের বানানো ভিত্তিহীন হাদীস বলে মন্তব্য করেছেন। নিজেদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের স্বপক্ষে এমন কিছু জাল হাদীস তৈরি করে শিয়া ও তথাকথিত সুন্নী নামের কবরপুজারীরা আশুরার দিনে শোক ও তাযিয়া মিছিল বের করে থাকে। ১০. আশুরার দিনে আসমান-যমীন সৃষ্টি হয়েছে : হাফেজ জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ: তাঁর জাল হাদীস সংকলগ্রন্থ ‘লাআ-লিউল মাসনূআহ ফিল আহা-দীসিল মাউযুআহয় দীর্ঘ একটি হাদীসের অধীনে মারুফূ সূত্রে বর্ণা করেন- خلق الله السموات يوم عاشوراء والأرض অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা আসমান ও যমীন সমূহ আশুরার দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই বর্ণনাতে হাবীব ইবনে আবিল হাবীন নামের কুখ্যাত মিথ্যা হাদীস রচনাকারী একজন বর্ণনাকারী রয়েছে, বিধায় এটাকে জাল হাদীসের শামিল করেছেন প্রায় সকল হাদীসবেত্তাগণ। ১১. আশুরার রাত জেগে ইবাদত করা : আল্লামা ইবনুল জাউযী রহ: তাঁর ‘আল মাউযুআ-ত’ বা জাল হাদীস সমগ্র নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন- من أحيَى ليلةَ عاشوراءَ فكأنَّما عبَد اللهَ تعالَى بمثلِ عبادةِ أهلِ السَّماواتِ অর্থাৎ যে ব্যক্তি আশুরার রাত জেগে ইবাদত করলো সে যেন আসমানবাসীদের ইবাদতের মতো আল্লাহর ইবাদত করলো। আল্লামা জাউযী ছাড়াও অপরাপর মুহাদ্দিসগন এই বর্ণনাকে জাল বলে মন্তব্য করেছেন। ১২. বছরের শেষ ও নতুন বছরের প্রথম দিন রোযা রাখা: ইমাম সুয়ূতী রহ: তাঁর জাল হাদীস সংকলন- ‘লাআ-লিউল মাসনূআহ ফিল আহা-দীসিল মাউযুআহ’ গ্রন্থে বানোয়াট হাদীসের তালিকায় নিন্মের হাদীসটিকেও উল্লেখ করেছেন। من صام آخرَ سنةٍ وأوَّلَ الأخرَى جعل اللهُ له كفَّارةَ خمسين سنةً অর্থাৎ যে ব্যক্তি বছরের শেষ দিনে এবং পরবর্তী বছরের প্রথম দিনে রোযা রাখবে আল্লাহ তা’আলা তার ৫০বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। এছাড়াও আশুরা কেন্দ্রিক বহু বানোয়াট হাদীস ও ভিত্তিহীন বিশ্বাস ছড়িয়ে আছে সমাজের মানুষের মুখে মুখে কিংবা কোন কোন অনির্ভরযোগ্য বই-পুস্তকে। বলা বাহুল্য, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নামে মিথ্যাচার অন্য যেকোন মিথ্যাচারের চেয়ে অনেক বেশি জঘণ্য। কারণ, একজন ঈমানদার কোন হারাম বা নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত থাকলেও তার মধ্যে অপরাধবোধ থাকে। ফলে এক সময় তার তাওবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু জাল-ভিত্তিহীন হাদীসের উপর আমলকারী ব্যক্তি অজ্ঞানতা ও ভুল বিশ্বাসের কারণে নিজের আমলের প্রতি আস্থাশীল থাকে। ফলে তাওবার সম্ভাবনা খুব কমই থাকে। সুতরাং, হাদীসের নামে সমাজে প্রচলিত সকল জালিয়াতির ব্যপারে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং অন্যদের সচেতন করতে হবে। আহমাদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ দেলোয়ার হুসাইন আলোচক, পিস টিভি দাঈ, পশ্চিম দাম্মাম ইসলামিক কালচারাল সেন্টার, সৌদি আরব