আমার ফেসবুক জীবন: স্বস্তিকায় ক্রন্দন
আপডেট: ০৪ জুন ২০১২, ১০:৩৮
স্বস্তিকায় ক্রন্দন -লেখকঃ frantic writer কিছু কথাঃ একজন লেখকের কি রকমের ঝামেলা ঝক্কি পোহাতে হয় তা আমি এখন হারে হারে টের পাচ্ছি। নিচের গল্প নাহ লেখাটা আমার ফেসবুক বিষয়ক একটি বাস্তবতা কিছুটা রঙ মেখে তুলে ধরা হল। একজন ফ্যান যার নাম 'স্বস্তিকা' কিন্তু ফেসবুক আইডি 'টুনটুনি'(ছদ্দ নাম দিলাম) হঠাৎ একটা রিকোয়েস্ট করে বসল এবং আমাকে দিয়ে একটা গল্প লিখিয়ে নিল। সে এখন ব্লক লিস্ট-এ আছে। তাকে এখন সরি বলছি, শুনতে পেল কিনা জানিনা.......frantic writer মানুষ শান্তিতে থাকলে নাকি ভুতে কিলায়। কথাটা একেবারে মিথ্যা না। কিন্তু আমার ঘাড়ে পেত্নি বাসা বেধেছে। তার মিষ্টি মিষ্টি যাতনায় আমার স্বাধীন মুহুর্তগুলো ফালা ফালা, পরাধিনতা আমায় হাত নেড়ে কাছে ডাকছে আর বলছে -এবার তুই খাল্লাস, মানে দি এন্ড, হে হে হে। - এই এই এই কথা বলনা কেন! চুপ করে আছো কেন!! কেন কেন কেন? - শোন পরে ফোন দিচ্ছি। - খবরদার যদি ফোন কাটো তবে খবর আছে। - আররে কি ঝামেলা আমি জরুরী কাজ করছি বাবা। বস অনেকগুলো ফাইল দিয়েছে ব্যালেন্স ভুল হলে বকা খেতে হবে। - একটু কথা বল এত্তু (একটু) এত্তু (একটু) কিঞ্চিত প্লিজ। - স্বস্তিকা.. শুনো কালকেইতো আমাদের দেখা হচ্ছেই। রাখছি। হায় আল্লাহ এই পাগলরে আমি কেমনে বুঝাই। তার নাম স্বস্তিকা মানে শান্তি, কিন্তু একেবারে বিপরীত। খালি ছটফট করবে, আর সারা দিন রাত যখন তখন ফোন। তার এই এত্তু এত্তু আদুরে গলা শুনে আমি সব ভুলে যাই। গত দেড় ঘন্টা ধরে ফোনে কথা বলছি, আমার কান গরম হয়ে গেছে। কয়েকটা ফিগার ভুল করে ফেলেছি। ফ্লুইড দিয়ে অবস্থা আরও ভয়াবহ। খাতার মধ্যে সাদা সাদা ছোপ। হেড একাউন্টেন্ট কাল ডেকে নিয়ে বলল- ভাই ও ভাই অফিস থেকে যাবার সময় ফাইলটা বন্ধ করে যাবেন নাহ। খাগে (কাকে) হাগি (shit) তো মাখামাখি করে ফেলিচু (ফেলছে)। হুমায়ূন স্যার খুবি মজার মানুষ, কিন্তু রেগে গেলে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। - ভাই এই বয়েসে বান্ধবি আমগিও আছিল। আমরা কি ঠিক মত কাম করি নাই নাক্কি?? - সরি মানে আর মানে ভুল হবে না। - শুনেন মিঃ আসিফ। ভুল একদিন হলে ঠিক আছে, দুইদিন হলেও ok, but everyday, is this a bloody joke. আপনাকে আমি স্নেহ করি, তবে প্রতিদিন কিভাবে বসের কাছ থেকে বাচাবো বলেন। এখন যান, কি বললাম একটু ভেবে দেখবেন। নাহ তারে কঠোর কিছু কথা বলতেই হবে। সে কি পেয়েছে। কিন্তু কিভাবে বলব, এই মেয়েটার জন্যইতো বেচে আছি। সেইদিনটার কথা কিভাবে ভুলে যাব। ........ আমার বাসায় খুব হই হুল্লা চলছিল। বড় ভাইয়ের বিয়ে। সবাই খুশি। সারা রাত জেগে ছিলাম, কাজিনদের সাথে আড্ডা দিয়েছি আর ফেসবুকে একটা পেজে গল্প দিয়েছি, তার কমেন্টসগুলো ফাকে ফাকে দেখছিলাম। হঠাৎ একটা মেসেজ আসল। আইডিতে নাম দেয়া টুনটুনি। প্রথমে ভেবেছিলাম উত্তর দিব না। কিন্তু কেন জানি দিয়ে দিলাম। >> - টুনটুনিঃ আপনার ‘তুমি রবে নিরবে’ গল্পটা খুব ভাল লেগেছে। আপনি এত সুন্দর করে লিখেন! Too good. Wish u all the very best. << -thanks. ‘তুমি রবে নিরবে’ এর পাগলীকে পছন্দ করার জন্য। আর আপনিও এত সুন্দর করে কমেন্টস করেন ‘’ole how sweet! u rock’’...itz also tooo good for inspiration....same wishes 2 u ...@টুনটুনি >> - টুনটুনিঃ আমি ভাবিই নাই আপনি রিপ্লাই দিবেন। Thanks a lot. Really আপনার গল্পের মেও মেও বিড়ালটা আমার খুব ভালো লেগেছে। ' এই হুশ হুশ ছাড়তো ' লাইনটা এত ভালো লেগেছে বোঝাতে পারবনা, আপনাকে জানানোর খুব ইচ্ছা ছিল কথাটা। Wish কেউ আমাকে বলতো ! U really rock.আরও অনেক গল্প লিখবেন, আমিও অনেক কমেন্টস করবো। Hehehe... আপনার reply এর খুশিতে big মেসেজটা দিয়ে ফেললাম আর ১টা request আছে, আপনার কোন গল্পের নায়িকার নাম ‘স্বস্তিকা’ রাখতে পারবেন plz? আর লিখলে নায়িকা যেন পাগলীটার মত পাগলী হয় and plz যেন happy ending হয়। Please পারলে লিখবেন। << -আররে কি ঝামেলা!!! স্বস্তিকা অর্থ কি? জানাবেন।...আমার বাংলা অভিধানে খুজতে ইচ্ছে করছে না। কখন লিখব জানিনা, না লেখার সম্ভাবনা খুব বেশি, লিখলে আপনাকে আগেই মেসেজ দিবো। আর হ্যা গল্প কিন্তু গল্পই হবে, প্লিজ প্লিজ আকাশে উড়তে গিয়ে ডানা ভাংবেন না যেন। ভালো থাকবেন। আমি সারারাত ঘুমাইনি, গল্প কিভাবে লেখা যায় ভাবেছি। মেয়েটাকে আমি চিনি না, তবে কেন রাজি হলাম গল্প লিখে দিব বলে। অনেকেই মেসেজ দেয়, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় কিন্তু আমি রিপ্লাই করি নাহ। - এই শান্তু তাড়াতাড়ি রেডি হ। ভাইয়ার সাথে যেতে হবে। - জী মা আসছি। আমার ডাক নাম শান্ত। সবাই রেডি গাড়ি সাজানো হয়ে গেছে। এখনই রওনা দিবে। আমি পিসি টা বন্ধ করতে যাব, ভাবলাম একটু ফেসবুক চেক করি। দেখি টুনটুনির মেসেজ। >> -হি হি হি, স্বস্তিকা মানে শান্তি। আমার ডানা অলরেডি ভেঙ্গে গেছে। ঝামেলা হলে থাকুক গল্প লেখা লাগবেনা। আমি কেবল আমার ইচ্ছার কথা বলছি। আমি জানি আপনি বিজিI আপনি ভাল থাকবেন, কথা বলে ভালো লাগল। -মা তোমরা যাও আমি বাসর ঘর সাজিয়ে একটু পরে আসছি। আসলে বাসর ঘর সাজানো প্রায় শেষ, ভাইয়ের গাড়িতে গেলেই পারতাম। কিন্তু মনে হল মেসেজ দেয়াটা জরুরী। পরে বাইকে চলে যাব নে। আমি মেসেজ দিলাম। << - এই হুশ হাশ যানতো এখন...গল্প আমি লেখব না আপনি লেখবেন!!! আমি ওয়েট করছি, আবার ভাবছি পিসিটা বন্ধ করে দেই, নাহ আরেকটু দেখি। আসলে আমার মামাতো বোনের সাথেই ভাইয়ার বিয়ে। মামার বাসাতেই বিয়ে হবে। বাইকে যেতে ৩০ মিনিট লাগে। তাই আমি বসে রইলাম। অইতো আবার মেসেজ। >> -টুনটুনি fb আইডি, এই নায়িকার নাম প্লিজ গোপন রাখবেন। গাছে কাঠাল গোফে তেল দিচ্ছি। হি হি হি। ভাল থাকবেন। আর শুনেন আমি বিড়াল নাহ, হি হি হি। Tc. আমি বাইকে যাচ্ছি আর মেয়েটার কথা ভাবছি। সে আফসোস করছিল ইসশ কেউ যদি হুশ হুশ তাকে বলতো, কিন্তু আমিইতো বলে দিলাম। হা হা হা। এইটা আমি কি করলাম। ‘হুশ হুশ বিড়ালের ফুসফুস ঘিরে ভালবাসা ছোয়াব। ক্লান্ত বিকেলে চায়ের মেও মেও কাপে সন্ধ্যা নামাবো, কভু গর্জনে কভু অর্জনে, রাত্রি ভোর একাকার প্রেম বিসর্জনে যেন অনন্ত আদুরে ক্রন্দন স্বস্তিকায় ফিরে আসে বারে বারে।’(-frantic writer) আমার ফোন বাজছে। রাস্তায় বিরাট জ্যাম। লোকজন বলছে সামনে নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে। বড় মামার ফোন। -হ্যা স্লামালায়কুম মামা। আমি আসতেছি। -শান্ত বাবা তুই ঠিক আছিসতো। -হ্যা মামা। কি হয়েছে, আপনি কাদছেন কেন? -আ আহ আ...তুই মেডিকেল এ চলে আয়। আমার কোন হুশ নেই পাগলের মত গাড়ি আর মানুষের ভিড়ের পাশ কাটিয়ে বাইক চালাচ্ছি। নাহ না হ আল্লাহ নাহ...আমার হাতে সাজানো বিয়ের গাড়িটা দুমড়ে মুচড়ে আছে। ভিতরে বাহিরে চাপ চাপ রক্ত। পাশে একটা বাসে আগুন জ্বলছে। একটা লোককে বলতে শুনলাম- বেবাগতে খতম, আয় আল্লাহ কি আজাব দিলা। আমার ভেজা চোখ জড়িয়ে আসছে। ঝাপসা চোখে এগিয়ে যাচ্ছে বাইক নিয়ে। হাসপাতালের গেটে পরিচিত সবাই। আমার কোন হুশ নেই। বুকে কি যেন জমাট বেধে গেছে। কাকে জড়িয়ে ধরে কানবো, সবাইতো শেষ। আমার কি হবে আমি কার কাছে যাব, কোথায় যাব। এক পলকেই আমি এতিম। বাবাতো ছেলে বেলাতেই আকাশে চলে গেছে। এখন মা আর ভাইয়াও ফাকি দিল। দাফন শেষ হয়েছে অনেক আগেই। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি কবরের পাশে। ‘খা খা খা তুই সবাই কে খা মাটি তুই শকুনি তুই পিচাশ তুই সবাইকেই খেয়ে যাহ।’(-frantic writer) আমার সব শেষ, আমি এতিম, আমার বেচে থাকার কি দাম আছে। মেজ মামার বাড়িতে ঠাই হল। আমার দিন যায়না, রাতে ঘুম নেই। আমি শরীরের মাঝে বেচে থেকেও মৃত। লেখা পড়াও বন্ধ হয়ে গেল। মাস্টার্স করা হল না। পাগলের মত কাজ খুজে বেড়াচ্ছি। প্রায় ৪ মাস পর মামাতো ভাইয়ের ল্যাপটপে বসেছি। ফেসবুকে ৩৮ টা মেসেজ। টুনটুনির কাছ থেকে। শেষ মেসেজ টা পড়লাম। >> -কি আপনার তো কোন খবর নাই। হঠাত হারিয়ে গেলেন যে। কি কোন সমস্যা। আমি জানিনা কেন আপনার জন্য চিন্তা হচ্ছে। এই শুনেন আমার জন্য গল্প লিখতে হবে না। আমি কখনই আপনাকে ডিস্টার্ব করবো নাহ। ভাল থাকেন খুব ভালো।@টুনটুনি << -টুনটুনি, উত্তর দিব কিনা ভাবছিলাম, কিন্তু কাউকে বলতে ইচ্ছে করছে, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমার জন্য পেয়েছি এই ২য় জীবন। ধন্যবাদ দিব না রাগ করব ভেবে পাচ্ছি নাহ। সেই প্রথমদিন তুমি মেসেজ না দিলে হয়ত আমিও চলে যেতে পারতাম মা আর ভাইয়ের সাথে অনেক দূরে। খুব ভালো হত। কেন বাচিয়ে দিলে আমাকে কেন? তুমি কি জানো এখন আমার ভাত মেখে খেতে হয়, মা থাকলে মাই খাইয়ে দিত। আমার গায়ের কাপড় আমাকেই ধুতে হয়। জ্বর হলে চুপচাপ বিছানায় পড়ে থাকি। বলতে পারো মা আমাকে ফেলে কেন চলে গেল। আর ভাইয়ার কথা কি বলব, আমার হাতখরচের টাকা, আমার বেতনের টাকা সব ভাইয়াই দিত। এখন আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই শুধু তোমার জন্য, তোমাকে কখনই মাফ করবো না, never ever। আমি প্রতিদিনই কাজের খোজ করি। মামীর ব্যাবহারও কেমন কেমন, হয়ত সে ভাবছে আর কত। এবার বিদায় হয় না কেন? একদিন ভাইয়ার এক বন্ধু জোড় করে তার অফিসে নিয়ে গেল। বীমা কোম্পানিতে কাজ করে সে। বসকে বলে কয়ে আমাকে জুনিয়র একাউন্টেন্টের পোস্ট দিয়ে দিল। বেতন খারাপ নাহ। আমার মোটামুটি চলে যাচ্ছে। সবাই খুব আদর করে, হয়ত তার চেয়ে করুনাই বেশী। অফিস থেকেই একটা মোবাইল দিল। মেসে উঠবো কিনা মামাকে জিজ্ঞাসা করতেই দিলেন ঝাড়ি। -আমার বাসায় তোর কি সমস্যা হচ্ছে শুনি। -না মামা তেমন কিছুই না, অফিসের কাছাকাছি একটা সেয়ারে যদি রুম নিতে পারি তবে ভাল হয়। মামা আমার কথা বিশ্বাস করেনি জানি। সে মামিকে ভাল করেই জানে। তাই আর বাধা দিলেন নাহ। শুরু হল আমার নতুন সংসার। অফিসের কামাল ভাই আমার রুমমেট। একদিন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম। -ভাইয়া আপনার কম্পিউটারটা একটু ইউজ করি। -এইটা কোন কথা হইল হ্যা...আমার সব জিনিসই তোমার মিয়া। হে হে হে। প্রায় অনেকদিন পর ফেসবুকে বসলাম। এই টুনটুনি নামক মেয়েটার কি অন্য কোন কাজ নাই। ১৯ টা মেসেজ। ফোন নম্বরও দিয়েছে। >> -প্লিজ ফোন দিবেন। আপনার মেসেজ পরে আমি খুব কেদেছি। আমার অন্য কিছুতেই মন বসছে না। প্লিজ এমন করবেন না, আমারো খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ একটা বার ফোন দেন। প্লিজ। প্রায় সব গুলা মেসেজেই এই টাইপের কথা লেখা। আজ রাতে আমি বাসায় একা। কামাল ভাই গ্রামে গেছে। আমি ঠিক রাত ১২টায় ফোন দিলাম। ফোন দেয়ার আগ পর্যন্ত বুঝতে পারি নাই আমার জীবন নতুন করে গড়তে যাচ্ছে এবং এই পাগল মেয়েটার পাল্লায় পড়তে হবে সারাজীবনের জন্যে। - হ্যালো। - হু হু হুম কে এ এ... - আপনি টুনটুনি বলছেন.. - আররে আপনি শশ...আস্তে আম্মা জেগে যাবে। দাড়ান বারান্দায় গিয়ে নেই। এই মেয়ের সমস্যা কি? আমিতো আস্তেই কথা বললাম। কিন্তু তার কন্ঠটা এত মিষ্টি কেন!! - এই আপনি কেমন আছেন। আপনার শরীর ভালোতো। আপনার খুব কষ্ট তাই না। আপনি এতদিন পর কেন ফোন করলেন। রাতে খেয়েছেন ঠিক মত.... ওরে আল্লাহ এ দেখি টেপ রেকর্ডার। টুনটুনি নামটা তাইলে যথার্থ হইছে। আমার মনে হচ্ছে কেউ কানের ভেতর নুপুর পায়ে নাচছে। - ইয়ে মানে আমি ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন। - আপনি জানেন আপনার মেসেজ পড়ে কি যে কান্না করেছি। আমি জীবনে এই প্রথম অন্য কারও জন্য কান্না করেছি। না মানে ছোট বেলায় আম্মা যখন মারত তখন একটু কান্না করতাম। কিন্তু ভেউ ভেউ করে কান্না জীবনে এই প্রথম। নিজের কষ্ট কেউ এইভাবে লিখতে পারে আমার জানা ছিল না। আমাকে কথা বলার কোন সুযোগই দেয়া হচ্ছে নাহ। আমার ভালই লাগছে। এত সুন্দর গলা। - এই শুনেন আমি মাঝে মাঝে যদি আপনাকে ফোন দেই কোন সমস্যা নেইতো। না মানে আপনার কোন গার্লফ্রেন্ড, মানে ওই আর কি!!! হি হি হি। নাই তো। - না কোন সমস্যা নেই। জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল নাহ মিষ্টি ভুল করে বসলাম। পাগলের কাছ থেকে ১০ হাত দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়, আমি টের পেলাম অনেক পরে। - আর শুনেন আপনার যখন মন খারাপ থাকবে আমাকে ফোন দিবেন। মনে থাকবে তো? আমার মনে না থাকলেও তার ঠিকই মনে আছে। ভোর বেলা আবার ফোন- হ্যালো অফিসে যাবেন নাহ, উঠেন তাড়াতাড়ি। -হ্যালো কি করেন, দুপুরে খেয়েছেন। –হ্যালো বাসায় গিয়ে ফোন দিয়েন।– হ্যালো রাতে রান্না কি?...প্রথম প্রথম ভাল লাগত, কারন মায়ের পর কোন মেয়ে এত যত্ন করছে। মাঝে মাঝে খেতে বসলে মায়ের কথা মনে করে কি যে কান্না করতাম, ঐ মুহুর্তে তার ফোন-হ্যালো আপনার মন খারাপ নাতো, কান্না করছেন নাতো? একদম মন খারাপ করবেন নাহ বুঝলেন। সব ঠিক হয়ে যাবে। ‘আমি দিন গুনি, রাত বুনি গহবরের জোছনায়, কবে কিসে হারিয়ে বুঝেছি পৃথিবী আমার নয়। সবে কেবল রদ্দি বলে কূলে কূলে ঠাই নাই তুমি চাও- শব ঠুকে, পুড়ে দিতে তোমার আর্ধেক প্রাণ এই আমায়।’(-frantic writer) আমার কোন কাজে মন বসে না। সারাদিন তাকে নিয়েই ভাবি। কেন এমন হচ্ছে। এটাই কি ভালবাসা। আমি কি প্রেমে পড়েছি। এখন প্রতিটা মুহুর্তে ঘোড়ের মধ্যে থাকি। মোবাইল ফোনটা বারে বারে চেক করি রিং বাজবে তো, ব্যাটারির চার্জ আছে তো, সে কল করে আমাকে পাবেতো!!! আমাদের ফোনে কথা বলার প্রায় ৯ মাস কেটে গেল। কথা এখন আপনি থেকে তুমিতে এবং তার আল্লাদের পরিমানও অতিমাএায় বেড়েছে। একদিন রাতে অতি আল্লাদের পাল্লায় পড়ে বলেই ফেলেছি-স্বস্তিকা I মানে ইয়ে I love you. তারপর থেকেই মনে আমি আমার স্বাধীনতার জলাঞ্জলি দিয়েছি। হয়ত এই কথাটা কোন ছেলের কাছ থেকে শোনার পর সব মেয়েই মনে হয় একটা অনুগত প্রজা পেয়েছে এমন একটা ভাব করে!! এখন মহারানীর আনুগত্য দেখতে গিয়েই অফিসে আমাকে নিয়মিত বকা খেতে হচ্ছে। নাহ এটা হতে দেয়া যায় না, চাকরী চলে গেলে খাবো কী! -স্বস্তিকা তোমাকে অন্য নামে ডাকি। এইটা ডাকতে ডাকতে আমি তো তো তোতলা হয়ে যাচ্ছি। -হি হি হি চুপ একদম সাইজ করে দিব। এই নামেই ডাকতে হবে। -না মানে তুমি কি কখনো কোন ডাক্তার দেখিয়েছ। ইয়ে মানে কোন সাইক্রিয়াটিক। -কি ফাইজলামী কর আমার সাথে না, দাড়াও একবার কাছে পেয়ে লই। আমার টুনটুনি হাসছে। আমি মোবাইলটা বুকে চেপে ধরলাম। সে বুঝল কিনা কে জানে। বুঝুক তাতে কি! আমি অন্যায় কি করলাম। কেউ কাউকে দেখি নাই, কিন্তু কিভাবে যেন একটা গভীর আবেগ নিয়ে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে ভালবেসে যাচ্ছি দুজন দুজন কে। কথা ছিল ঠিক এক বছর পর দেখা করব। হা হা হা। কাল এক বছর পুর্ণ হবে। কালকের জন্য ছুটির দরখাস্ত করেছি। আমরা কে কোথায় থাকি সেইটাও জানি নাহ। যাইহোক যদিও অফিসে আমি খুব বিজি আজ। ভয়ে ভয়ে আজকের একাউন্ট ক্লোজ করছি। সকাল থেকে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় তার ফোন। নাহ এখন লাস্ট আওয়ার ফোন ধরলেই কথা বলতে হবে, আর কথা বললেই আবার খাতায় নির্ঘাত খাগের (কাকের) হাগু(shit) মাখতে হবে। -এই তুমি কই। অফিস থেকে বের হইছ। এতক্ষন ফোন ধরলানা কেন? কেন কেন কেন?? -খুব বিজি ছিলাম, এই মাএ ছাড়া পেলাম। এই যে ম্যাডাম একটু বলবেন আপনি কোথায় থাকেন। -হি হি হি। আকাশে আমি আকাশে থাকি। হি হি হি। -হ্যা হ্যা যারা ঘাড়ে চাপে তারা আকাশেই থাকবে এইটাই স্বাভাবিক। -এই দেখ উলটা পালটা কথা বলবানা কিন্তু। নাইলে খবর আছে কিন্তু। সে তিরিং বিড়িং শুরু করছে। হাজার বুঝালেও বুঝবে না এখন। এইসব পাগলের পাল্লায় পড়লেও মজা লাগে, না পড়লেও আফসোস লাগে। সে যদি কোনভাবে বলে সে ঢাকায় থাকে তাহলে কর্ম সাড়া। ৭-৮ ঘন্টা বাস জার্নি। ওহ!! আমি শেষ। -শোন তুমি কিন্তু পাঞ্জাবী পড়ে আসবা, আর আমি শাড়ী...উমম আচ্ছা নীল শাড়ী। -আচ্ছা ঠিকে আছে। এখন বলেন কোথায় আসব। -ওহ হ্যা হ্যা শুনো, তুমি ধানমন্ডি লেকে থাকবা ঠিক সকাল ১১ টায়। ঐ যে জাহাজ বাড়ীটা আছে না। আমি গেছি। আমার খুবি ঘুম পাচ্ছে। শেষ মেস ঢাকাতেই যেতে হবে। ধানমন্ডি চিনি। ওইখানে ফুফুর ফ্লাট আছে। কিন্তু গিয়েছি অনেক ছোট বেলায়। কিন্তু জাহাজ বাড়ি এইটা আবার কি?? -হ্যালো ফুফু স্লামালায়কুম। আমি শান্তু। -শান্তু উঁ উঁ কেমন আছিস রে বাবা। আমিতো তোর কোন খোজ নিতে পারি নাই। উঁ উঁ... -ফু ফু কাইদেন নাহ। ফুফু আমি অফিসের কাজে কাল ঢাকা আসব। আপনার সাথে দেখা করে যাব নে। বাসে ঊঠে মরার মত ঘুমিয়েছি। কখন ঢাকায় এসে পৌছেছি আমি বলতেই পারবো নাহ। রাতে টুনটুনির সাথে কথা হয়েছে। –এই তুমি বাসে ঊঠেছো, ঘুমাও হ্যা, ভাল করে রেস্ট নাও, ঠিক আছে। আল্লাহফেজ।...আবার ১০ মিনিট পর ফোন- এই না মানে আমার খুব ভয় লাগছে জানো বুক ধরফর করছে, আচ্ছা আমাকে যদি তোমার পছন্দ না হয়, উরি আল্লাহ এত টেনশনে আমি মনে হয় মরে যাব। এই রাখলাম। বাস থেকে নেমে ফোন দিও। আল্লাহফেজ। আমি কি করছি আমি জানি না। হয়ত কোন ছেলে বা মেয়ে এই পরিস্থিতিতে এমনি ছটফট করবে। আমি তাকে দেখি নাই, সেও আমাকে দেখে নাই। একটা ভীতি, একটু ভাললাগা, একটু অনিশ্চয়তা। কিন্তু আমি মনকে দৃঢ় রেখেছি, সে যেমনি হোক দেখতে তাতে আমার কিছুই আসে যায় না। কেবল জানি এই স স সস স্বস্তিকা নামক পাগলীটাকে আমি ভালবাসি ভালবাসি এবং ভালবাসি। কিন্তু তার নামটা এত কঠিন কেন!!! আচ্ছা আমি কি তাকে জানু, লক্ষীমনি, কুটুমনি, টুনটুনি, ময়না ইত্যাদি নামে ডাকতে পারি নাহ। -ফুফু আমি বেরুলাম। ফিরতে রাত হবে। -বাবা সাবধানে যাস। পথঘাটতো চিনিস নাহ। -ও আমি চিনে নিবনে, আপনি চিন্তা কইরেন নাহ। যতই ঘড়ির কাটা এগুচ্ছে আমার টেনশন বেড়ে যাচ্ছে। টিক টিক শব্দ হচ্ছে বুকের ভেতর। আমি তার জন্য নুপুর বানিয়ে এনেছি। জানি না পড়বে কিনা। এইটা গাধামী হল নাতো। একটা ছোট ছেলেকে দেখলাম বেলী ফুলের মালা বিক্রি করছে। সবগুলাই কিনে নিলাম। যতক্ষন ওয়েট করেছি আমার কোন হুশ জ্ঞান ছিলনা মনে হয়। যা দেখছি সব ভাল লাগছে। ‘বিরতি নিয়েই ধুকধুক গাড়ি চলছে আমার বুকেতে, আমি প্রেমে কুতু পুতু আল্লাদ করা নারীতে। ভয় হয় ভয় হয় ভুল যেন না হয়, ভালবাসি ভালবাসি প্রেম যেন নাহি ক্ষয়।’(-frantic writer) ওয়েট করাটা খুবি বিরক্তিকর ঠেকছে নাহ। লেকের ওপারে এপারে অনেক অনেক জুটি দেখা যাচ্ছে। কিছু জুটি প্রেম খেলায় মেতে উঠেছে। সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু তাদের কোন লজ্জা লাগছে বলে মনে হয়না। ঢাকার মানুষ এত ফাস্ট!!! আমার চোখ নীল শাড়ী খুজে বেড়াচ্ছে। -হ্যালো.. হ্যা আসিফ তুমি কি এসে পড়ছ। কি জ্যামরে বাবা। আমার একটু দেরী হবে। প্লিজ একটু দাঁড়াও। এই তুমি কি কালারের পাঞ্জাবী পড়ছো। -নীল আমি তার পাগলামি তখনো বুঝি নাই। সে লেকের ওপার থেকেই আমাকে ফোন দিয়েছে। একজন কালো বোরকা ওয়ালি আমাকে পেছন থেকে ডাকছে। -স্লামালায়কুম স্যার। -জী -স্যার কয়টা টাকা দেন নাহ। সকালে নাস্তা করি নাই। দেন না স্যার। -কি দিলেন স্যার ১০টেকায় কি হয়। এক কাপ চাইয়ের দামি ১০ টেকা। আরে কঞ্জুশ.... তার শুধু চোখ দেখা যাচ্ছে। এত ফর্সা। হাতে মনে হয় অনেকগুলা কাচের চুড়ি। মাঝে মাঝে ঝনঝন করছে। ঘাড়ে ব্যাগ ঝুলছে। - স্বস্তিকা তোমাকে পাগলা গারোদে নিতে হবে। পাগল কোথাকার। হা হা হা। - হি হি হি। এহ! আমি একা যাবো নাকি, তোমারেও নিয়ে যাবো, হি হি হি। আমরা একটা গাছের নিচে বসলাম। সে বোরকা খুলছে। বাতাসে তার চুল উড়ছে। ওরে আল্লাহ এত সুন্দর মানুষ হয় নাকি!! হাতের চুড়ি গুলা ঝনঝন করছে। আমি মাতালের মত তাকিয়ে আছি তার দিকে। সে দেখতে তুলতুলে ধবধবে সাদা বেড়ালের মত। হাতে মেহেদি দিয়েছে। -কি কি কি দেখ হ্যা। মুখ বন্ধ করো মুখে মাছি ঢুকবে, হি হি হি। -থ্যাংকস আমাকে নতুন জীবন দেয়ার জন্য। -শুনো সিনেমার ডায়লগ দিও না। আল্লাহ তোমার জন্য আমাকে বানাক আর নাই বানাক আমি তোমাকেই শুধু তোমাকেই ভালবাসি। আমি প্রতিদিন নামাজ পড়ে কান্না করি কি এমনি এমনি!! -আচ্ছা ঠিক আছে। এই তোমার জন্য এই নুপুরজোড়া এনেছিলাম। একটু দেখবে পায়ে লাগে কি না। তার চোখে পানি। কিন্তু কেন!! সে আমার চোখে তাকিয়ে আছে। -আমার নাম স্বস্তিকা ইসলাম নুপুর। I Love you আসিফ। তোমাকে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালবাসি। সে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আমিও কি ধরব!! জানি না। আমি কিছুই জানি না। - শোন অনেক পাপ হয়ে গেছে আল্লাহ মাফ করুক। হি হি হি। শোন আমাকে কিন্তু খারাপ মেয়ে ভেবো না। তুমি জানোনা একটা বছর কিভাবে কেটেছে। আমাদের যখন বিয়ে হবে তখন রাত জেগে জেগে এই গল্প করব। ঠিক আছে। - হুমম -আর শোন আমার অনার্স মাস্টার্স শেষ হতে সব মিলিয়ে আরো ৫ বছর লাগবে। তুমি নিজেকে গুছিয়ে নাও। তারপর বিয়ে করব ইনশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ বলো, বলো বলো...... -ইনশাআল্লাহ। ................................................. (একটা রিলেশন ঠিকভাবে গড়তে হলে দুজকেই সময় নিতে হবে। আমি ছেলেদের দিক থেকে বলতে পারি, যদি একটা সম্পর্ক হয়েই যাই আর পবিত্রতা নিয়েই বিয়ে পর্যন্ত এগুই তবে বাস্তবতার সাথে মিল রেখেই আমাদের চলতে হবে এবং তার জন্য নিজেদের গড়তে হবে। আর বাবা মার কাছ থেকেতো একটা চিরাচরিত বাধা আসবেই, কিন্তু যদি নিজেরা ঠিক থাকি তাহলে আল্লাহ পাশে থাকবেই। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সবার মাঝেই কিসের যেন তাড়াহুড়া!! একটু মনে রাখি সব ভুলগুলা কিন্তু তাড়া হুড়োতেই হয়ে যায় –frantic writer- ওহ আমাকেতো গল্পের happy ending করতে হবেই। দেখা যাক...) .................................................. অফিস থেকে একটা ফ্লাট পেয়েছি। এই বিদেশি কোম্পানিগুলার কি পরিমান টাকা যে আছে। ফ্লাটটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সবচেয়ে সুন্দর আমাদের বাসর ঘরটা। মনে হচ্ছে কোন সাদা ফুলের ছোট বাগান। বাগানের মাঝে লাল ফুটফুটে রাজকন্যা বসে আছে। আমার চোখে খুশির পানি। সে বসে আমাকে শক্ত করে ধরে আছে আর কান্না করছে। আমিও তার পেটে জড়িয়ে অঝোরে কান্না করছি। আমার সব বেদনা আর বুকের মাঝে জমাট বাধা কষ্ট বহুবছরের একাকিত্তের অবসান হল আজ। আল্লাহর কাছে আমি খুব কৃতজ্ঞ, এই পাগলীটাকে আমার সাথে জুড়ে দেবার জন্যে। -এই শোন কেদনা, আজ থেকে আমি তোমার বাবা মা আমিই তোমার সব। ঠিক আছে। বলো বলো ঠিক আছে। -হ্যা ঠিক আছে। I love u . স স সস সস্বস্তিকা..... -হি হি হি আবার... উৎসর্গঃ স স সস স্বস্তিকা নামক একজন কে... প্লিজ প্লিজ আকাশে উড়তে গিয়ে ডানা ভাংবেন না যেন। ভালো থাকবেন।@ টুনটুনি।(T_T) ...................................................................... টুনটুনি: আপনি এইটা কেনো লিখলেন, কেন কেন কেন??? প্লিজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ০১৭******** । প্লিজ ফোন দিবেন প্লিজ প্লিজ প্লিজ। ..................................... তাকে ব্লক করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। আই এম সরি................. (লেখকঃ frantic writer)