
ছবি সংগৃহীত
আবেগ যেভাবে সার্বিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে
আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৩:১১
ফটোসোর্স : frecuenciajoven.es
(প্রিয়.কম) – আবেগ শুধু একটি সুন্দর শব্দই নয়। আমাদের চিন্তা ও অনুভূতির সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের জীবনের উপর। মানসিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান। আবেগ বিশেষ করে নেতিবাচক অনুভূতি আমাদের টিকে থাকার উপর প্রভাব বিস্তার করে। আবেগ অনুভূতি দীর্ঘদিন যাবৎ মনের মধ্যে পুষে রাখলে তা হঠাৎ করেই এক সময় প্রচণ্ড আকারে প্রকাশ পেতে পারে। তাই আবেগ প্রকাশ করাটা অনেক বেশি জরুরী। নেতিবাচক আবেগ যেমন- উদ্বেগ, স্ট্রেস, ভয়, রাগ, ঈর্ষা, ঘৃণা, সন্দেহ এবং অধৈর্যতা ইত্যাদি স্বাস্থ্যের উপর প্রচুর প্রভাব ফেলে। কিছু ঘটনা যেমন- চাকরি চলে গেলে, দাম্পত্য অশান্তি হলে, আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হলে অথবা প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণে মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়মানুষএবং তার স্বাস্থ্যের উপর ও প্রভাব পড়ে, কীভাবে তা জেনে নিই চলুন।
১। রাগ
হতাশাবোধ ভোগা, আহত হলে বা মনঃক্ষুণ্ণ হলে অথবা হুমকির সম্মুখীন হলেই মানুষের মধ্যে রাগের মত তীব্র অনুভূতি প্রকাশ পায়। রাগ যদি সুস্থ ভাবে প্রকাশ করা যায় তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই রাগ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে রাগ যুক্তির ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। রাগ আমাদের শরীরে “যুদ্ধ বা যুদ্ধ” এই প্রতিক্রিয়া ছড়ায়। এর ফলে শরীরে অতিরিক্ত স্ট্রেস হরমোন যেমন- এড্রেনালিন, নরএড্রেনালিন এবং কর্টিসল এর নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। ফলে মস্তিষ্কের এমিগডালা (আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে) অংশ প্রতিক্রিয়াশীল হয় এবং মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবে (যুক্তি বা চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে) রক্ত ঠেলে পাঠায়। মস্তিষ্কের এই অংশে অতিরিক্ত রক্ত চিন্তার প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। তাছাড়া রাগের ফলে রক্তনালীগুলো শক্ত হয়ে যায়, ফলে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ এবং শ্বাসক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। এটা যদি খুব ঘন ঘন হয় তাহলে ধমনীর দেয়াল ছিরে যেতে পারে।
২। দুশ্চিন্তা
দীর্ঘমেয়াদী দুশ্চিন্তায় ভুগলে প্লিহা আক্রান্ত হয় এবং পাকস্থলী দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি নিউরোট্রান্সমিটার বিশেষত সেরেটোনিনের কাজে পরিবর্তন আনে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে মানুষ বুকে ব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, দুর্বল ইমিউনিটি এবং অকাল বার্ধক্যে ভুগে থাকে।
৩। বিষাদ বা দুঃখবোধ
বিভিন্ন প্রকার আবেগের মধ্যে দুঃখবোধ বা মর্মপীড়া দীর্ঘস্থায়ী হয়। এর ফলে ফুসফুস দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ক্লান্তি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়।
৪। স্ট্রেস
বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে স্ট্রেসের অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন হয়। মৃদু মানসিক চাপ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং এটি আপনাকে ভালো পারফর্ম করতে সাহায্য করে। কিন্তু অত্যধিক স্ট্রেসের ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, অ্যাজমা, আলসার এবং আইবিএস এর সমস্যা তৈরি করে।
৫। একাকীত্ব
মানুষ একাকীত্বে ভুগলে কাঁদে এবং মনমরা হয়ে থাকে। এর ফলে ফুসফুসের কাজের ছন্দপতন হয় এবং সারা শরীরে রক্ত ও অক্সিজেনের প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হয়। সাধারণত বয়স্কদের এই আবেগীয় সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়।
৬। ভয়
ভয় এমন একটি আবেগ যা আপনার আত্মবিশ্বাস, নৈতিক বিশ্বাস ও সুখকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ভয় উদ্বেগের সৃষ্টি করে ফলে কিডনি, এড্রেনাল গ্ল্যান্ড এমনকি প্রজনন তন্ত্রের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
ইতিবাচকতা আমাদের দৃষ্টিকোণকে প্রসারিত করে এবং তারা সময়ের সাথে সাথে গঠিত হয় ও বিকশিত হয়। সুস্থ ও সুখী থাকার জন্য ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন, তাহলেই নেতিবাচক আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। তাই ক্ষমা করতে শিখুন এবং কৃতজ্ঞ হোন।
লিখেছেন-
সাবেরা খাতুন
ফিচার রাইটার, প্রিয় লাইফ
প্রিয়.কম