ছবি সংগৃহীত

আদম ব্যবসা করা না করা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?

priyo.Islam
লেখক
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৪:৩৭
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৪:৩৭

বিদেশে জনশক্তি রফতানি সাধারণ্যে আদম ব্যবসা নামে পরিচিত। যুগ যুগ ধরে বিশ্বব্যাপী এ ব্যবসা চলে আসছে। মানুষ স্বভাবতই শিল্প উন্নত দেশের কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ক্ষত-খামারে শ্রম বিনিয়োগ করে অধিক অর্থ উপার্জন করতে আগ্রহী। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও উন্নত জীবনের প্রত্যাশা এ ব্যবসার বিকাশ ঘটিয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষর চাহিদা অনুযায়ী এ শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করে থাকে। সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষর অনুমোদনসাপেক্ষ দক্ষ জনসংখ্যা রফতানি করলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়, যা দেশের জাতীয় আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতদুদ্দেশ্যে শ্রম ও জনসংখ্যা রফতানি মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি করে থাকে। অপরদিকে কিছু অসাধু ব্যক্তি, রিক্রুটিং এজেন্সি ও সিন্ডিকেট যথাযথ কর্তৃপক্ষর বৈধ অনুমোদন ব্যতিরেকে চোরা পথে মানুষ পাচার করে থাকে। উন্নত জীবনের স্বপ্নে বিভোর এসব মানুষ যাত্রাপথে সমুদ্রে ও মরুভূমিতে প্রাণ হারায় মর্মামিত্মক পন্থায়। অনেকে সীমামত্মরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে বিদেশের কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে মরে। বহুক্ষেত্রে আইনি সহায়তা লাভেরও সুযোগ থাকে না। এসব শ্রমিক সীমান্তরক্ষীদের সতর্ক চোখকে ফাঁকি দিয়ে কোনো দেশের নির্দিষ্ট কোনো শহরে ঢুকলেও বৈধ ওয়ার্ক পারমিট না থাকায় ভালো চাকরির সুযোগ পায় না। অবৈধ পথে আসা শ্রমিকদের অনেক সময় শিল্প প্রতিষ্ঠান ও খনিতে নামমাত্র বেতনে জোরপূর্বক খাটানো হয়। বেকারত্বের ঘানি টানতে হয় অবলীলায়। সঙ্গোপনে স্বল্প বেতনে চাকরি করেও নিজ দেশের পরিবার-পরিজনের ব্যয় নির্বাহ করা রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়ে। আদম ব্যবসার ছত্রছায়ায় চলছে নারী ও শিশু পাচার সর্বত্র। নারীরা ব্যবহৃত হয় যৌনদাসী হিসেবে। সমত্মান উৎপাদনের উদ্দেশ্যে তাদের জরায়ু ভাড়া দেয়া হয় এমনকি ওভাম বের করে চড়া দামে বিক্রি করা হয়। আর শিশুদের কিডনিসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সরবরাহ করা হয়। প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে নারী ও শিশু সংগ্রহের জন্য দেশে রয়েছে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রত্যমত্ম অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত তাদের সুবিশাল নেটওয়ার্ক। কিছু এজেন্সি আফ্রিকার অপেক্ষাকৃত অনুন্নত ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে শ্রমিক এনে ব্রাজিল ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন চিনিকলে বিক্রি করে দেয়। বন্দি জীবনের এ বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসা অনেকের পক্ষ সম্ভব হয় না। আধুনিক যুগে এ দাসপ্রথার চিত্র দেখে বিস্মিত হতে হয়। ২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি বছর প্রায় ২৭ মিলিয়ন নারী, পুরুষ ও শিশু দালাল ও আদম ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে পাচার হয়। এর মধ্যে প্রতি বছর ১ হাজার ৮০০ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ঢুকে পড়ে। পৃথিবীর বহু দেশে বৈধ ও অবৈধসহ অবস্থানগত ও কর্মরত বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ। শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই রয়েছে ৮০ লাখ বাংলাদেশী। আদম ব্যবসায়ীরা শুধু অর্থের লোভে যাচাই-বাছাই ছাড়া বিদেশে লোক পাঠায়। বহু অপরাধী সুযোগ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায় এবং সে দেশে গিয়ে খুন, ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ইদানীং বিদেশে বাংলাদেশ ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। প্রবাসীদের ক্রমবর্ধমান অপরাধের কারণে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। হজ ও ওমরা ভিসা নিয়ে অনেকে আর দেশে ফিরে না এসে সৌদি আরবে থেকে যায়। আদম ব্যবসায়ীরা এদের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়। দূর মরুতে অবস্থিত খামারে সামান্য পারিশ্রমিকে কাজ করতে হয়। এতে করে ফরেন রেমিট্যান্স উলেস্নখযোগ্যহারে হ্রাস পাচ্ছে। গণসচেতনতার পাশাপাশি এ ব্যাপারে ত্বরিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। # ড. আফম খালিদ হোসেন সৌজন্যে : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ