ছবি সংগৃহীত

আগৈলঝাড়ায় নৌকা ও চাঁই তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে হাজারো পরিবার

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ২১ জুন ২০১৫, ১২:১৬
আপডেট: ২১ জুন ২০১৫, ১২:১৬

(অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া, বরিশাল) বর্ষা মৌসুমে চলাচল ও পণ্য পরিবহনের জন্য বরিশালের আগৈলঝাড়া, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া বিলাঞ্চলের মানুষের নির্ভরযোগ্য ও একমাত্র বাহন নৌকা। এ অঞ্চলের শত শত মানুষের মৎস্য শিকারের কাজেও অন্যতম ভূমিকা রাখে নৌকা। এ মৌসুমে নৌকায় জাল, চাঁই (মাছ ধরার জন্য বাঁশের তৈরি ফাঁদ) অথবা বড়শি নিয়ে মৎস্য শিকারে ছুটে চলে জেলেরা। তাই প্রতিবছর বর্ষামৌসুম এলেই বেড়ে যায় চাঁই ও নৌকার কদর। আর এই মৌসুমে চাঁই ও নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ অঞ্চলের শত শত পরিবার। আগৈলঝাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার বিলাঞ্চল হিসেবে পরিচিত বারপাইকা, দুশুমী, রাজিহার, রামানন্দের আঁক, বাটরা, বাহাদুরপুর, আমবাড়ি, ত্রিমুখী, রামশীল, সাদুল্লাপুর, পীরার বাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় নৌকা তৈরি করা হয়। জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত আগৈলঝাড়ার সাহেবেরহাট, বাহাদুরপুর ও কোটালীপাড়ার ঘাঘর, রামশীলে বসে নৌকার হাট। এসব অঞ্চলের মানুষের বর্ষামৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। হাট-বাজার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে আসার জন্য তাদের নৌকার উপর নির্ভর করতে হয়। তাই বর্ষামৌসুমের শুরু থেকেই আগৈলঝাড়া ও কোটালীপাড়ায় জমে ওঠে নৌকার হাট। বর্ষার শুরু থেকেই তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে নৌকা বানানোর ধুম। আগৈলঝাড়া, কোটালীপাড়া উপজেলার অসংখ্য পরিবার নৌকা তৈরির পেশায় নিয়োজিত। তারা গ্রামাঞ্চল থেকে কাঠ কিনে এনে নৌকা তৈরি করেন। চাম্বল কাঠ দিয়ে ডিঙ্গি ও ছোট আকারের পেনিচ নৌকা তৈরি করা হয়। আর রেইন্ট্রি কাঠ দিয়ে তৈরি হয় কমদামি নৌকা। নৌকার ক্রেতা প্রবীর মধু, সঞ্জয় বালা, সুকুমার, জীবন বালা জানান, শুধু বর্ষামৌসুমে ব্যবহারের জন্য কমদামি ছোট নৌকা বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। pic 1

ব্যস্ত চাঁই পল্লীর শ্রমিকেরা

মাছ ধরার চাঁই তৈরির জন্য বিখ্যাত আগৈলঝাড়া উপজেলার মোহনকাঠী গ্রাম। এ গ্রামে কবে কখন কে চাঁই তৈরি করার কাজ শুরু করেছেন তা সঠিকভাবে বলতে না পারলেও প্রবীণ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, প্রায় দুশ বছর ধরেই এ গ্রামে চাঁই তৈরি ও বিক্রি চলছে। বংশ পরম্পরায় এ গ্রামের চারশ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে চাই তৈরি করে। গ্রামের পুরুষেরা বর্ষা মৌসুমের ছয়মাস চাঁই তৈরি ও শুষ্ক মৌসুমে দিনমজুরের কাজ করেন। মোহনকাঠী গ্রামের তৈরি করা চাঁই বিক্রি হয় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হাট-বাজারে। গ্রামটির নাম মোহনকাঠী হলেও চাঁই তৈরি করতে গিয়ে গ্রামের নাম হয়েছে ‘আগৈলঝাড়ার চাঁই পল্লী’। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে বংশ পরম্পরায় এ গ্রামের বাসিন্দারা চাঁই তৈরির পেশাকে ধরে রেখেছেন। চাঁই তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, বেত ও লতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই অর্থাভাবে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন ও বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে টাকা এনে চাঁই বানাচ্ছেন। গ্রামের মাখন বৈরাগীর পুত্র দুলাল বৈরাগী বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। হরলাল বৈদ্যর পুত্র প্রশান্ত বৈদ্যও স্নাতক শ্রেণীতে পড়ছেন। তারা জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারের সাথে চাঁই বুনতে তারা সহযোগিতা করে থাকেন। শুধু দুলাল ও প্রশান্তই নয় গ্রামের প্রত্যেকটি ঘরের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনার পাশাপাশি চাই তৈরির কাজে পিতামাতাকে সাহায্য করে থাকে। বর্ষামৌসুম এলেই পরিবারের সকলের সাথে তাদেরও ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ওই গ্রামের হরলাল বৈদ্য (৬৬), নলিনী বৈরাগী (৭০) সহ অনেকেই জানান, দুশ টাকার বাঁশ, দুশ টাকার কৈয়া লতা দিয়ে একেকজন শ্রমিক পাঁচদিনে ২০টি চাঁই তৈরি করতে পারেন। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন আনার ফলে তাদের কাছে প্রতি কুড়ি চাঁই পাইকারি হিসেবে বিক্রি করা হয় ১২ থেকে ১৬শ টাকায়। বাজারে যার দাম ২ হাজার থেকে ২৫শ টাকা। ওই গ্রামের লক্ষ্মণ বৈরাগী জানান, তাদের গ্রামের তৈরি চাঁই স্থানীয় মাহিলাড়া, পয়সারহাট, সাহেবেরহাট, ধামুরাসহ বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠী, ভোলা, ঘাঘর, শশীকর, নবগ্রাম, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়।