ছবি সংগৃহীত

অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করার প্রক্রিয়া (রুটেড + নন-রুটেড)

আবীর হাসান
লেখক
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০১৫, ২১:২০
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫, ২১:২০

এখনকার সময়ে যখন আমরা আমাদের প্রায় সব কাজে স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি তখন যেন স্মার্টফোনের ব্যাটারির সমস্যা আমাদের জন্য মহামারী এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এজন্যেই হয়তো ব্যাটারির জনিত সমস্যাগুলোই ব্যবহারকারিদের কাছে এখন সবচাইতে বড় কনসার্ন হিসেবে কাজ করে থাকে। বর্তমানে ক্রেতারা একটি ডিভাইস ক্রয় করার আগে শুধুমাত্র এর র্যাথম, রম, ক্যামেরা এবং প্রসেসরেই আটকে থাকেনা, বরং এই ফিচারগুলোর সাথে সাথে ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতার কথাও মাথায় রাখেন। শুধুমাত্র এই ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতার জন্যেই দারুণ সব কনফিগারেশনের স্মার্টফোন বাজারে মার খেয়ে যায় মাঝে মাঝে। তবে ব্যাটারির সমস্যা মানে কিন্তু এর ধারণ ক্ষমতা কম বুঝায় না, বরং একটি ডিভাইস ব্যবহার করতে করতে মাঝে মাঝে সেই ডিভাইসগুলোর ব্যাটারির পারফর্মেন্স ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অবশ্য এটা খুবই স্বাভাবিক, আপনি যদি একটি ডিভাইস দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার করেন তবে এর কার্যক্ষমতা আস্তে আস্তে কমবেই। তবে মাঝে মাঝে হঠাত করেই স্মার্টফোনের ব্যাটারির পারফর্মেন্স কমে যায়, বিরক্তিকর একটি সমস্যা এটি। আপনার যদি হঠাত করে মনে হয় যে আপনার ডিভাইসে ব্যাটারি ব্যাকআপ আগের চাইতে হঠাত করেই বেশ কমে গিয়েছে তবে আপনার বুঝে নেয়া উচিৎ যে তাতে নিশ্চয়ই কোন প্রকার সমস্যা হয়েছে। যদি আপনার ডিভাইসটির ব্যাটারি নন-রিমোভাল হয়ে থাকে তবে আমি আপনাকে কোন সাহায্য আপাতত করতে পারছিনা তবে যদি না হয়ে থাকে তবে আজকের টিউটোরিয়ালটি আশা করি আপনাকে বেশ সাহায্য করবে। কেননা, অধিকাংশ সময় উপরোক্ত সমস্যা ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করলে ঠিক হয়ে যায়। তাই চলুন, আপনাদের স্মার্টফোনের ব্যাটারি ক্যালিব্রেট কীভাবে করবেন তা শিখিয়ে দিচ্ছি আপনাদের।

কীভাবে বুঝবেন যে এটি ব্যাটারির সমস্যা কি না

ক্যালিব্রেট বা অন্যান্য প্রসিডিউর শুরু করার আগে প্রথমত আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে আসলেই আপনার ব্যাটারিতেই সমস্যা কি না। আপনি ইন্টারনেট থেকে স্মার্টফোনের ব্যাটারি এক্সটেন্ড করার কিছু টিউটোরিয়াল ফলো করে দেখতে পারেন। যদি তাতেও কাজ না হয় তবে সম্ভবত আপনার ব্যাটারিতেই সমস্যা রয়েছে এবং সে পর্যায়ে হয়তো ব্যাটারি ক্যালিব্রেট প্রক্রিয়া আপনাকে সাহায্য করতে পারে। 3 আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিতে সমস্যা হয়েছে কি না তা বোঝার মূলত দুটি উপায় রয়েছে। এক, আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি অতিদ্রুত ড্রেইন হচ্ছে এবং দুই, আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিটি পূর্বের তুলনায় চার্জ হতে বেশি সময় নিচ্ছে। এর আরও একটি কারণ হতে পারে ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং থাকা অ্যাপলিকেশন যা প্রতিনিয়ত ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং থেকে স্মার্টফোনের বিভিন্ন রিসোর্স ব্যবহার করে ব্যাটারি দ্রুত ড্রেইন করে থাকে। এবং এই কারণগুলোর ফলে আপনার মনে হতে পারে আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে! অবশ্য আপনার ধারণা অমূলক নাও হতে পারে, তবে টাকা-পয়সা খরচ করার আগে অবশ্যই আপনার ব্যাটারিটি ক্যালিব্রেট করে দেখে নেয়া উচিৎ একবার। নোটঃ ব্যাটারির সমস্যা হলে সেটি খুলে দেখতে পারেন। হালকা ফুলে ওঠা ব্যাটারি, আদ্র ব্যাটারি বা লিকড ব্যাটারি দেখতে পেলে তা যথাসম্ভব দ্রুত বদলে ফেলা উচিৎ। কেননা, এই ব্যাটারি গুলো আপনার স্মার্টফোনটির মারাত্নক ক্ষতি করতে পারে।

ক্যালিব্রেট - কী, কেন?

অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে 'Battery Stats' নামে একটি সেটিংস আছে যার মধ্যে ব্যাটারির ক্যাপাসিটি সহ ব্যাটারি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জমা থাকে। এই স্টেটের ফলেই আপনি জানতে পারেন যে আপনার ব্যাটারিটি খালি নাকি ভর্তি। সমস্যা হচ্ছে, মাঝে মাঝে এই স্টেটটি করাপটেড হয়ে যায় এবং এর ফলে সেই সেটিংসটি ব্যাটারির সঠিক ইনফরমেশন দেখাতে ব্যার্থ হয়। এর ফলে কিছু অদ্ভুত সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন -
  • আপনার ব্যাটারিতে চার্জের পরিমাণ খুব কম থাকলেও আপনাকে শো করতে পারে অর্ধেকেরও বেশি। ফলে, হঠাত প্রয়োজনের সময় ধুপ করে স্মার্টফোনটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • আপনার স্মার্টফোনে চার্জ থাকা স্বত্তেও ভুল ইনফরমেশনের কারণে আপনার সিস্টেম ব্যাটারি শেষ হবার আগেই আপনার স্মার্টফোনটি বন্ধ করতে পারে।
2 এই সমস্যা গুলো থেকে মুক্ত হতে যা করতে হয় তা হচ্ছে আবার সেই ব্যাটারি স্টেটকে নতুন করে ক্রিয়েট করা যাতে করে তা আর কোন প্রকার ভুল ইনফরমেশন না দেখাতে পারে। আর এই প্রসেসের নামই হচ্ছে ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করা। আমি আপনাদের দুই ভাবে ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করার প্রক্রিয়া শিখিয়ে দিতে চেষ্টা করছি।
  • নন-রুটেড ফোনে।
  • রুটেড ফোনে।

নন-রুটেড ফোনে ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করার প্রক্রিয়া

প্রক্রিয়া - ১ এই প্রক্রিয়ায়া আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করার জন্য প্রথমে আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারির ক্যাপাসিটি আপনাকে জানতে হবে। ব্যাটারির ক্যাপাসিটি জানা খুবই সহজ। এর জন্য আপনি আপনার স্মার্টফোনটি বন্ধ করে আপনার স্মার্টফোন থেকে ব্যাটারিটি খুলে ব্যাটারির গায়ে লেখা স্টিকারটি লক্ষ্য করতে পারেন। অথবা, আপনার স্মার্টফোনের বক্সের সাথে থাকা ফোনের স্পেসিফিকেশন থেকেও দেখে নিতে পারেন। আর যদি বক্স না থেকে থাকে তবে আপনি আপনার স্মার্টফোনের মডেলটি লিখে ইন্টারনেটে সার্চ করলেই আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারির ক্যাপাসিটি সম্পর্কে জানতে পারবেন। স্মার্টফোনের ব্যাটারির ক্যাপাসিটি বা ধারণ ক্ষমতা জানা হয়ে গেলে আপনাকে 'Current Widget: Battery Monitro' নামের একটি অ্যাপলিকেশন ইন্সটল করতে হবে আপনার স্মার্টফোনে। এই অ্যাপলিকেশনটি আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারির চার্জের পরিমাণ মিলি অ্যাম্পিয়ারে প্রদর্শন করবে। আপনাকে ততক্ষন পর্যন্ত আপনার স্মার্টফোনটি চার্জ করতে হবে যতক্ষন না পর্যন্ত আপনার ব্যাটারির ক্যাপাসিটি অনুযায়ী এবং এই অ্যাপলিকেশনটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী আপনার স্মার্টফোনের টোটাল চার্জে না পৌছান। প্রয়োজন মাফিক পরিমাণ চার্জ হবার পর আপনার ডিভাইসটি চার্জের পোর্ট থেকে খুলে ফোনটি রিস্টার্ট করুন। ব্যাস, আশা করি রিস্টার্ট হবার পর আপনার ব্যাটারিটির ব্যাটারি স্টেট সেটিংসটি পুনরায় রিসেট হয়ে যাবে তথা, ভুল তথ্য প্রদর্শন করবে না। ফলাফলে আপনার ব্যাটারির সমস্যা দূর হয়ে যাবে। 1 Current Widget: Battery Monitor অ্যাপটি আপনি গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনামূল্যেই নামিয়ে নিতে পারবেন। প্রক্রিয়া - ২ আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিটি ফুল চার্জ করুন এবং যখন আপনার স্মার্টফোনটির ব্যাটারি সম্পুর্ন ভাবে চার্জড হয়ে যাবে তখন সেটি চার্জিং ক্যাবল থেকে আনপ্লাগ করুন এবং স্মার্টফোনটি বন্ধ (অফ) করুন। স্মার্টফোনটি বন্ধ হবার পর আবারও এটিকে চার্জিং ক্যাবলের সাথে যুক্ত করে ফুল চার্জড হতে দিন। যখন আপনার স্মার্টফোনটি ইন্ডিকেট করবে যে এটি সম্পূর্ন রুপে চার্জড হয়ে গিয়েছে তখন আপনার স্মার্টফোনটি চার্জিং প্লাগ থেকে আনপ্লাগ করুন। ফোনটি আনপ্লাগ করার পর তা চালু করুন এবং এমন কিছু করুন যাতে করে আপনার স্মার্টফোনটির স্ক্রিন বন্ধ না হয়ে যায়, এক্ষেত্রে আপনি 'স্টে অ্যাওয়েক' ফিচারটি ব্যবয়ার করতে পারেন। যাই হোক, এভাবে আপনার স্মার্টফোনটি আবারও চার্জিং ক্যাবলের সাথে যুক্ত করে ১০০ পারসেন্ট চার্জড হতে দিন। এই অবস্থায় সম্পুর্ণ চার্জ হয়ে গেলে আপনার স্মার্টফোনটি চার্জিং ক্যাবল থেকে আনপ্লাগ করুন এবং ততক্ষন ব্যবহার করুন বা রেখে দিন যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্যাটারি সম্পূর্ণ রুপে শেষ হয়ে আপনার স্মার্টফোনটি বন্ধ না হয়ে যায়। যখন আপনার স্মার্টফোনটি একাই বন্ধ হয়ে যাবে তখন আপনি এটিকে আবার ১০০% চার্জ করুন এবং এরপর চালু করুন। ব্যাস, আশা করি আপনার ব্যাটারির সমস্যা চলে যাবে।

রুটেড ফোনে ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করার প্রক্রিয়া

প্রক্রিয়া - ১ প্রথমেই 'Battery Calibration' নামের অ্যাপটি আপনার স্মার্টফোনে ইন্সটল করে নিন। অ্যাপলিকেশনটি আপনার স্মার্টফোনে ইন্সটল করার পর তা ওপেন করুন এবং অ্যাপটিতে 'mV'-এর পরিমাণ খেয়াল করুন যা পারসেন্টেজের পাশেই দেখতে পাবেন। সংখ্যাটি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যদি দেখেন যে আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি ১০০ পারসেন্ট চার্জড থাকার পরেও সেই সংখ্যাটি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে তবে আপনার স্মার্টফোনটি চার্জ করতে থাকুন। এভাবে চলতে চলতে যখন সেই সংখ্যাটি আর বাড়বে না এবং আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিটি ১০০ পারসেন্ট চার্জড অবস্থায় থাকবে তখন আপনি অ্যাপটির 'Battery Calibration' বাটনটিতে ট্যাপ করুন এবং এরপর ডিভাইসটি রিস্টার্ট করুন। এর ফলে পূর্বে থাকা ব্যাটারি স্টেটটি মুছে গিয়ে বর্তমানের স্টেটটি ব্যাটারির সর্বোচ্চ ক্যাপাসিটি হিসেবে সংরক্ষণ হবে। আশা করি, এই প্রক্রিয়াতেই আপনার ব্যাটারিটি চমৎকার ভাবে ক্যালিব্রেট হয়ে যাবে এবং এর সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তবে যদি এই মেথডে কাজ না হয় তবে মেথড দুই তো আছেই। Battery Calibration - অ্যাপটি রুটেড ডিভাইসে ব্যাটারি ক্যালিব্রেট করার জন্য চমৎকার একটি অ্যাপ এবং এটি আপনি প্লে স্টোর থেকে বিনামূল্যেই নামিয়ে নিতে পারবেন। প্রক্রিয়া - ২ আশা করি যেহেতু এই প্রক্রিয়াটি আপনি ফলো করতে চাচ্ছেন সেহেতু আপনার ডিভাইসটি রুটেড। আর যেহেতু আপনি একজন সুপার ইউসার তাই রিকভারি সম্পর্কেও আপনি অন্তত মোটামুটি জানেন। যদি না জেনে থাকেন তবে এই প্রক্রিয়াটি ফলো করার পূর্বে একটু রিকভারি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে আসুন। আর যদি জ্ঞান থেকে থাকে তবে চলুন, এখন শুরু করা যাক প্রক্রিয়া - ২! প্রথমে আপনার স্মার্টফোনের রিকভারি অপশনে যান এবং সেখান থেকে অ্যাডভান্স সেকশনে নেভিগেট করুন যেখানে আপনি 'wipe battery stats' নামের একটি অপশন খুঁজে পাবেন। এর ফলে পূর্বে থেকে থাকা ক্যালিব্রেশনের তথ্য মুছে যাবে। এরপর, আপনাকে আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারিটি সম্পূর্ণভাবে ড্রেইন করতে হবে এবং এরপর আপনার স্মার্টফোনটি বন্ধ করে চার্জে দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন, এই ক্ষেত্রে আপনার স্মার্টফোনটি কোন রকম বাঁধা ছাড়াই একটানা সম্পূর্ণ চার্জড করতে হবে এবং অবশ্যই তা বন্ধ অবস্থাতে চার্জ করতে হবে। সম্পূর্ণ চার্জড হয়ে গেলে চার্জারের ক্যাবলের সাথে প্লাগ ইন রেখেই আপনি আপনার স্মার্টফোনটি অন করুন এবং এরপর Battery Callibration অ্যাপটি ওপেন করে ব্যাটারি ক্যালিব্রেশন বাটনে ট্যাপ করুন। একটু পর 'callibaration succeded' - পপ আপ বার্তা দেখতে পাবেন। Ok ট্যাপ করুন এবং আপনার ডিভাইসটি চার্জিং ক্যাবল থেকে আনপ্লাগ করে অ্যাপলিকেশনটি বন্ধ করে দিন। ব্যাস, আশা করি আপনার সমস্যা দূর হয়ে যাবে। নোটঃ রুটেড প্রক্রিয়া গুলোতে অবশ্যই সুপার ইউজারের পারমিশন দিতে হবে।

শেষ কথাঃ

ব্যাটারি ক্যালিব্রেশনের জন্য সবচাইতে ভালো কাজ করে রুটেড-প্রক্রিয়াগুলো। তাই আপনি যদি আপনার স্মার্টফোনটি রুট করে নিতে পারেন তবে আশা করি তা সবচাইতে ভালো কাজে আসবে। যাই হোক, উপরের পদ্ধতিগুলো সাবধানে অনুসরণ করুন। আশা করি ব্যাটারি জনিত সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে।