
ছবি সংগৃহীত
অনন্ত জলিলের কারণে রাহার আত্মহত্যা!
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৩, ১৩:৩২
অভিনেতা অনন্ত জলিলের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন মডেল ও অভিনেত্রী সুমাইয়া আজগার রাহা (২০)। আর এ কারণেই পুলিশ ও গোটা চলচ্চিত্র পাড়ার লোকজনকে আড়াল করে গোপনে রাহার দাফন সম্পন্ন করে তার পরিবার। এমনকি আজিমপুর গোরস্থানে দাফনের সময়েও রাহা ও তার বাবার প্রকৃত নাম-ঠিকানা গোপন করা হয়। বাংলামেইল২৪ সুত্রে পাওয়া খবরে জানা যায় যে, ইফতেখার চৌধুরী পরিচালিত ২০১০ সালের ১৬ এপ্রিল মুক্তি পাওয়া খোঁজ দ্য সার্চ ছবিতে নায়ক হিসেবে প্রথম অভিনয় করেছিলেন এমএ জলিল অনন্ত। নায়িকা ছিলেন বর্ষা। ওই ছবিতে সহঅভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছিলেন সুমাইয়া আজগার রাহা। ছবিটিতে অভিনয়ের সূত্র ধরে রাহা এবং অনন্তের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। কিন্তু পরে বর্ষার সঙ্গে অনন্তর বিয়ে হয়। এ কারণে বেশ কিছু সময় ধরে রাহা-অনন্তর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বছর দেড়েক ধরে আবারো রাহা-অনন্তর প্রেম শুরু হয়। তারা বিভিন্ন শুটিং স্পট এমনকি বিশেষ বিশেষ দিনে দেশের নামীদামী হোটেলগুলোতে একত্রিত হতেন। সময় পেলেই অনন্তর কাছে রাহা ছুটে যেতেন তার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি এলাকায়। এ খবর বর্ষার কানে গেলে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়। রাহার সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে অনন্তর সম্পর্কের বিষয়টি দুজনের পরিবার পর্যন্ত গড়ায়। তবে অনন্ত বরাবরই রাহাকে একজন সহকর্মীর চোখে দেখছেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন। এসব নিয়ে তিনি মিডিয়ার কাউকে পাত্তা দিতেন না। এ কারণে পারিবারিকভাবে বিষয়টি আরো জটিল হয়। এর এক পর্যায়ে বর্ষা রাহাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এ নিয়ে অনন্ত বর্ষাকে মারধর করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শু���্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় অনন্ত-বর্ষা পাল্টাপাল্টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর স্বামীর পরকীয়ার কারণে রাগে ও ক্ষোভে বর্ষা চলে যান সিরাজগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে। স্বামী-স্ত্রীর মারামারি আর মিডিয়া পাড়ায় প্রেমের বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় অনেকটা অভিমান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন রাহা। এদিকে রাহার বাবা তার মেয়ের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কিছুই বলতে পারেননি। তবে আজিমপুর গোরস্থানে দাফনের আগে লাশ নিবন্ধনের খাতায় ভুয়া ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের ২৯/১৫ নম্বর বাড়ি। আর রাহার ডাক নাম বাদ দিয়ে লিখা হয় সুমাইয়া আক্তার। বাবার নাম মোঃ আলী আকবর। আর তাকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখানো হয় হাঁপানি রোগে স্বাভাবিক মৃত্যু। রাহার বাবা শেখ আজগার আলী জানান, তিনি দাবি করেছেন, তাঁর মেয়ে হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ রাহা বাসায় ফেরে। এরপর সে তার নিজের ঘরে চলে যায়। শনিবার সকালে তার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে চাবি দিয়ে তার ঘরের দরজা খোলা হয়। তখন বিছানায় থাকা রাহাকে ডাকাডাকি করে কোনা সাড়া না পেয়ে আমরা সকাল সাড়ে আটটার দিকে মহল্লার একজন চিকিত্সককে নিয়ে আসি। সেই চিকিত্সক জানান, রাহা ঘণ্টা তিনেক আগেই হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। এরপর আমরা তাঁকে দ্রুত সিটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেও চিকিত্সকেরা একই কথা বলেছেন। তবে রাহার বাবা চিকিত্সক কিংবা কোনো হাসপাতালের দেওয়া রাহার মৃত্যু সংক্রান্ত সনদ দেখাতে পারেননি। এদিকে রাহার প্রতিবেশীদের মতে, রাহা আত্মহত্যা করেছেন। আবার দাফন করার আগে আজিমপুর কবরস্থানের অফিসে জানানো হয়েছে, রাহা হাঁপানির সমস্যায় ভুগছিলেন। ওদিকে সিটি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, শনিবার তাঁরা রাহা বা এ ধরনের কোনো রোগী পাননি। শেখ আজগার আলী বলেন, পরে আমি এবং আমার স্ত্রী ফাতেমা বেগম মিলে দেখি রাহা আর নেই। এরপর স্বামী-স্ত্রী মিলে রাহার দাফনের উদ্যোগ নিই। রাহার মৃত্যু নিয়ে আজিমপুর গোরস্থানে মিথ্যা ঠিকানা এবং লুকোচুরি প্রসঙ্গে শেখ আজগার আলী বলেন, আমরা চাচ্ছিলাম না মরে যাওয়া মেয়েটি কষ্ট পাক। এদিকে আজিমপুর কবরস্থানের মোহরার (নিবন্ধক) নুরুল হুদা জানান, গত শনিবার দুপুরে গোরস্থানে দুজন নারীর লাশ দাফন হয়। এর মধ্যে একজন হলো রমনা এলাকার জনৈকা তাহসিনা আক্তার (৪৫)। অন্যজনের লাশ আসে মোহাম্মদপুর থেকে। তার কবরস্থানে লাশের নাম নিবন্ধনের খাতায় তার নাম লেখা হয় সুমাইয়া আজগার (২২)। সুমাইয়ার বাবার নাম লেখা হয় মোঃ আলী আকবর।