যেভাবে বদলে গেছে আদিল রশিদের ক্রিকেট দর্শন
ইংল্যান্ডকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতাতে বল হাতে ভূমিকা রাখেন লেগস্পিনার আদিল রশিদ। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে নিজে রান আউট হয়ে বেন স্টোকসকে স্ট্রাইক নেয়ার সুযোগ করে দেন রশিদ। ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ডে বেড়ে ওঠা রশিদ শুক্রবার স্থানীয় মসজিদ ওমরে জুমার নামাজ আদায় করেন। লোকাল হিরোকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে সেখানকার স্থানীয় মুসলিম কমিউনিউটি। একটা উৎসবেরই আয়োজন হয়ে যায় মসজিদে। ছেলে-বুড়ো সবাই রশিদের সঙ্গে সেলফি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তাদের আবদার মেটাতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। রশিদ এতটাই অমায়িক ছিলেন যে, যাদের অনুরোধ রাখতে পারেননি, তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। মসজিদের অনুষ্ঠান শেষে তিনি ওঠেন গাড়িতে। সেখানেই বার্তা সংস্থা বিবিসির রিপোর্টার শামন হাফিজকে নিজের ক্যারিয়ার ও ইংল্যান্ডকে নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানান রশিদ। জানান কীভাবে ধর্মীয় বিশ্বাস তার ক্যারিয়ারের অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছে।জাতীয় দলের সতীর্থ মঈন আলীর মতো আদিল রশিদও একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। বিশ্বকাপ জয়ের পর বৃটিশ কালচার হিসেবে শ্যাম্পেইন ছিটিয়ে আনন্দ করেছিলেন ইংলিশ ক্রিকেটাররা। কিন্তু শ্যাম্পেইন ছিটানোর পূর্ব মুহূর্তে সরে যান মঈন-রশিদ। কারণ, মদ ইসলামে হারাম। এ ছাড়া ম্যাচ চলাকালে অধিনায়ক এউইন মরগানকে রশিদ বলেছিলেন, ‘আমরা জিতবো, আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ রশিদের কথাটা পরবর্তীতে প্রেস কনফারেন্সে উল্লেখ করেছিলেন অধিনায়ক মরগানও। রশিদের ওয়ানডে অভিষেক হয় ২০০৯ সালে। কিন্তু দলে নিয়মিত হতে পারেননি। এরপর ২০১৫ সালে আবার ডাক পান। এরপর থেকে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। গত চার বছরে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ১২৯ উইকেট নিয়েছেন এই লেগি। আর তার এই অগ্রগতির পেছনে পাকিস্তানের কিংবদন্তি অফস্পিনার সাকলায়েন মুশতাকের বড় অবদান রয়েছে। রশিদ বলেন, ‘২০১১ সালে সাকলায়েন এখানে নামাজ পড়তে আসেন। তখন তিনি ইংল্যান্ডের স্পিন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে আমি ১০ দিন কাটিয়েছিলেন। এরপর আমার চোখ খুলে যায়। আমার মনে বিভিন্ন প্রশ্নের উদয় হয়। একজন মুসলিম হিসেবে আমি কী করছি? আমার কী দায়িত্ব? আমি কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় করি? কারণ তখনো আমি প্র্যাকটিক্যাল মুসলিম ছিলাম না।’ রশিদ বলেন, ‘আমাদের যখন দিনটা ভালো কাটে খুব আনন্দ লাগে। কিন্তু খারাপ কাটলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু পুরোপুরি ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর আমার মাঝে একটা দৃঢ় বিশ্বাস জন্ম নেয় যে, ভালো-মন্দ যা কিছুই হয়, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। আমার পারফম্যান্স যাই হোক না কেন, এই বিশ্বাস আমাকে সব সময় একটা মানসিক প্রশান্তি দেয়।’‘অভিবাসী হলেও ইংল্যান্ডের জন্যই খেলি’ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন কারা? অধিনায়ক মরগানের জন্ম আয়ারল্যান্ডে। একটা সময় আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলেও খেলেছেন। অলরাউন্ডার বেন স্টোকসের বাব-মা দুজনই নিউজিল্যান্ডের। আসরে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার জফরা আর্চারের জন্ম বার্বাডোজে। ওপেনার জেসন রয় দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। আর মঈন আলী ও আদিল রশিদের শেকড় পাকিস্তান। সত্যি বলতে ইংল্যান্ডকে শিরোপা এনে দিয়েছেন অভিবাসী ক্রিকেটাররাই। আর রশিদ বলেন, ‘আমরা সবাই ইংল্যান্ডের ব্যানারে খেলি। আমরা জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সবার কাছে একটা বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে ইংল্যান্ডের জন্য শতভাগ উড়াজ করে দিতে তৈরি আমরা। পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের যারা প্রতিনিধিত্ব করছি, আমরা দেখিয়েছি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা সাফল্য এনে দিতে পারি। অভিবাসীদের অনেকেই ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। তবে আশা করি, ব্রেক্সিট ইতিবাচক হবে আমাদের জন্য। ইনশা আল্লাহ, এটা (বিশ্বকাপ জয়) দেশের জন্য চমৎকার কিছু বয়ে আনবে।’
- ট্যাগ:
- খেলা
- জীবন দর্শন