কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ত্রাণের জন্য বানভাসিদের হাহাকার

মানবজমিন প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নতুন করে আরো পাঁচটি জেলায় পানি ঢুকে পড়েছে। শুকনো আশ্রয় ও খাবারের সন্ধানে ছুটছে বানভাসি মানুষ। কোথাও ত্রাণের গাড়ি কিংবা নৌকার সংবাদ শুনলেই ছুটে যাচ্ছে তারা। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে চারদিন ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে- বালাগঞ্জে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি বালাগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি: বালাগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা ও বিভিন্ন জনপদ বন্যায় আক্রান্ত রয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লোকালয়ে বন্যা দেখা দেয়। এতে গত দুই সপ্তাহ ধরে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। যদিও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি লোকজনের সংখ্যা আরো কম বলা হয়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে উপজেলা প্রশাসনের অফিস পাড়াসহ পুরো বালাগঞ্জ বাজার এলাকা। উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার অফিসগুলোর ভেতরে পানি থাকায় দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বানের পানিতে বিপুল পরিমাণ আউশ-আমন ফসল ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। এছাড়া উপজেলার বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়ন, বোয়ালজুড় ইউনিয়ন, দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন, পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়ন ও পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন কাঁচা-পাকা সড়ক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারা ডাইক নামক বালাগঞ্জ-খসরুপুর নির্মণাধীন সড়কের প্রায় ১৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন বলে জানা গেছে। বন্যার কারণে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে এই সড়কের বিভিন্ন অংশ নদীতে তলিয়ে যাওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। পানিবন্দি লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যা আক্রান্ত এলাকায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে শিশুসহ সকল বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকর আশঙ্কা রয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলশরীয়তপুর প্রতিনিধি: হু হু করে বাড়ছে শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি। শনিবার পদ্মা নদীর পানি নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে ৪৪০ সেন্টিমিটারে পৌঁছে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর, বড়কান্দি, পালেরচর, নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর, চরআত্রা, নওপাড়া, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা এবং তারাবুনিয়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ফসলি জমি, কাঁচা-পাকা সড়ক ও বসতবাড়ির উঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে, শরীয়তপুর-মাঝিরঘাট সড়কের নির্মাণাধীন ব্রিজের বিকল্প সড়ক ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। বন্ধ হয়ে গেছে এ সড়কের যানচলাচল। নড়িয়া-জাজিরা সড়কের কয়েকটি স্থানে পানিতে প্লাবিত হওয়ায় এ সড়কেও যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। পদ্মার স্রোতের তীব্রতায় নড়িয়া উপজেলার নওপাড়ার মুন্সিকান্দি গ্রামে অস্থায়ীভাবে তীর রক্ষা কাজের ১০০ মিটার অংশ ধসে গেছে বলে জানা গেছে। শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, দ্রুতই পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প স্থানে কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। আর তীব্র স্রোত থাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে সমস্যা হচ্ছে। শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মামুন উল হাসান বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে তবে এটা বন্যার পর্যায়ে পড়ে না। যদি বন্যা দেখা দেয় তা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।জগন্নাথপুরে বন্যায় ভেসে গেল কোটি টাকার মাছজগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বন্যার পানিতে প্রায় এক কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ৪ শতাধিক মৎস্য খামার থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বেরিয়ে গেছে। এলাকাবাসী ও উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহ ধরে অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নদী-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে জগন্নাথপুর পৌরসভার আওতাধীন হবিবনগর, জগন্নাথপুর, আলখানাপার, উপজেলার রানীগঞ্জ, পাইলগাঁও আশারকান্দি, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়ন, কলকলিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪০টি গ্রাম। এছাড়াও হাসিনাবাদ, মইয়ার হাওর, পিংলার হাওর, নলুয়া হাওরসহ বিভিন্ন খাল, বিলের পানি বেড়ে যায়। এসব এলাকায় চারশ মৎস্য খামার থেকে প্রায় এক কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। জগন্নাথপুর পৌরসভার হাসিনাবাদ এলাকার মৎস্য খামারি আমিনুল ইসলাম বলেন, হাসিনাবাদ হাওরে ৬০ কেদার জমি নিয়ে মাছের খামার আমাদের। আকস্মিক বন্যার পানিতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সাবেক মন্ত্রী, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাস সিরাজগঞ্জের বন্যা দুর্গত চৌহালী, বেলকুচি ও শাহ্‌জাদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। শুক্রবার বিকালে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে এসব এলাকা পরিদর্শন করে বানভাসিদের খোঁজ-খবর নেন। তিনি চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর, দিনদহ, বেতিল, আড়কান্দি, ব্রাহ্মণগ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া ঘর-বাড়ি পরিদর্শন করে জানান, সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলার হাজার-হাজার ঘর-বাড়ি তলিয়ে মানুষ চড়ম কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এটা না দেখলে বোঝা যাবে না। দুর্ভোগে পড়া লাখ-লাখ মানুষ কতটা যে অসহায় তা উপলব্ধি করতে সরজমিন পরিদর্শন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, যার-যার অবস্থান থেকে নিজ এলাকার বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। সাধারণ অনুসারী হিসেবে আমরা তার মানবতার নির্দেশিত পথ অবলম্বন করছি। তবে চরাঞ্চলের বন্যার যে ভয়াবহ অবস্থা তাতে আমি খুবই ব্যথিত। আমরা জেলা পরিষদ হতে একটি সমীক্ষা করছি। শাহজাদপুরে ত্রাণ না পেয়ে কষ্টে জীবনযাপন সাগর বসাক, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে: শাহজাদপুর যমুনা নদীর তীরবর্তী উপজেলার কৈজুরী ও গালা এলাকার বাঁধে আশ্রিত মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় তারা অর্ধহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে। কেউ তাদের খোঁজ রাখছে না। গত শুক্রবার বিকেলে সরজমিন কৈজুরী বাঁধ এলাকার জয়নাল, বায়না, হাছেন আলী এবং গালা ইউনিয়নের জান্নাতুল, নাছিমা খাতুন, একরাম আলী, আজিজুল হোসেন, শাহিদা বেগম, বাতাসি খাতুন, লোকমান হোসেন, স্বর্ণা খাতুন, ময়দান সরকার, হামিদুল হোসেন, জামাত আলী, আমোদ আলী সহ শত শত বাঁধে আশ্রিত মানুষ সাংবাদিকদের জানান, এতো ত্রাণ আসে সে ত্রাণ কোথায় যায়। আমরা ৪ দিন ধরে পরিবার-পরিজন ও ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাঁধে আছি। কেউ আমাদের খোঁজ রাখছে না। তাদের অভিযোগ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের আত্মীয়স্বজনরা ত্রাণ পায়। অথচ আমাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে এ কারণে আমরা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি এবং প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করছি। আল্লাহ্‌র কসম কেউ আমাদের ১ কেজি চাল দেননি। বানভাসিরা গ্রামের ভাষায় বলেন গ্যাদাপ্যাদা নিয়ে খুব কষ্টে আছি কীভাবে দিন চলছে তা কাকে বোঝাবো। একপর্যায়ে নাম লেখার সময় শত শত মানুষ ঘিরে ধরে বলে আমার নামটা লিখুন আমি যেন চাউল পাই। তাদের অভিযোগ, কৈজুরী ইউপি চেয়ারম্যান এবং গালা ইউপি চেয়ারম্যান এমনকি মেম্বাররাও একদিন তাদের দেখতে আসেনি। যারা তাদের আপন তাদেরই আত্মীয়স্বজন ত্রাণ পাচ্ছে। এদিকে, উপজেলার পক্ষ থেকে প্রতিদিন নৌকাযোগে ত্রাণ দিলেও বাঁধে আশ্রিত মানুষরা এখনও ত্রাণ তাদের কাছে পৌঁছায়নি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও