৯ জনের ফাঁসির রায়ে আমরা শুধু হতাশ নই বিক্ষুব্ধ: ফখরুল
২৬ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলির ঘটনায় ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেয়ার বিষয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, পাবনায় যে রায় দেয়া হয়েছে, এতে গোটা জাতি বিস্মিত হয়েছে। আমরা এই রায়ের ঘটনায় শুধু হতাশ নই, বিক্ষুব্ধ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ড্যাব আয়োজিত এক চিকিৎসক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা আলমগীর বলেন, বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করা হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে ট্রেনে গুলি ছোঁড়া মামলায় যে রায় দেয়া হয়েছে তাতে সমস্ত জাতি বিস্মিত হয়েছে। দুটো গুলির শব্দ হয়েছে। গুলি কারা করেছে, কে করেছে? ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইটিতে বলেই দেয়া হয়েছে কারা গুলি করেছে। অথচ সেই গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৯ জনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এগুলো কি? তিনি বলেন, এই রায়ে আমরা শুধু হতাশ নই, আমরা বিক্ষুব্ধ। এই রায়ই প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশে বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই। তিনি বলেন, এই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে। সমস্ত প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ করছে। অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মুখে। দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক কোনো প্রভাব নেই। কিছুদিন পরই দেখবেন সব কলাপস করবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা একেবারে শেষ। দেশটাকে একেবারে ফোকলা করে দিয়েছে এই সরকার। তিনি আরো বলেন, শেয়ার বাজার লুট হয়ে যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা হাইজ্যাক হয়ে যায়। সোনা তামা হয়ে যায়। কোনো রকম প্রতিক্রিয়া সরকারের মধ্যে নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা সব সময় বলে বিএনপির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে। তারা ক্যান্টনমেন্টের দল। কিন্তু তারা একবারও বলেন না খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্ষমতায় আসেননি। তিনি নয় বছর এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। কারাবরণ করেছেন। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি জনগণের ভালোবাসা ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, কিছু বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও পত্রিকার সম্পাদক আছেন তারা বলতে চান খালেদা জিয়া সামরিক শক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু এটা ডাহা মিথ্যা ও সত্যের অপলাপ। তিনিই একমাত্র নেত্রী। যিনি আপোশহীনভাবে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে চলছেন। কারাবরণ করেছেন এটাও একমাত্র গণতন্ত্রের জন্য। তিনি বলেন, আমাদের এখনো মনে আছে ৯০এর আন্দোলনে যখন সব দল ফুঁসে উঠেছে। তখন দুই নেত্রী চট্টগ্রামে শহীদ মিনারে এসে শুভযাত্রা করেন। তার আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এরশাদের অধিনে এই নির্বাচনে যারা যাবে তারা হবে জাতীয় বেঈমান। পরে সেই এরশাদের অধীনে সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনা গিয়েছেন। আমরা একথা ভুলে যাইনি। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া প্রতিটি সময়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন। এখনো তিনি করে যাচ্ছেন। এখন যে কারাগারে আছেন এটাও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা হরণ করে মাত্র ৪ টি পত্রিকা রেখে আর সব বন্ধ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সব পত্রিকা খুলে দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের মামলায় সবাই জামিন পান। শুধু খালেদা জিয়া জামিন পাচ্ছেন না। এই ধরনের মামলায় জামিন পাওয়ার উদাহরণ আমাদের সামনেই আছে। ব্যারিস্টার মঈনুল হক জামিন পেয়েছেন। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জামিন পেয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আর কোনো আস্থা নেই। একটা নির্বাচনও তারা সুষ্ঠু করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটা অর্থনৈতিক ফোরামের দাওয়াতে গেছেন, চীনের সরকারের দাওয়াতে যাননি। আমরা খুব খুশি হতাম তিনি যদি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসে এ সমস্যা সমাধানে কথা বলতেন। কিন্তু তিনি তা করছেন না। তিনি চুক্তি করেছেন, মেগা প্রজেক্ট, মেগা দুর্নীতির চুক্তি। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। ড্যাবের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ড্যাবের নব নির্বাচিত সভাপতি হারুন আল রশীদ, মহাসচিব ডা. আবদুস সালাম, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ডা. ওবায়দুল কবির খান, নব নির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান প্রমুখ।