ময়মনসিংহ নগরজুড়ে যানবাহনের নৈরাজ্য
ময়মনসিংহ নগরজুড়ে যানজট। যানবাহনে নেই শৃঙ্খলা। মানছে না ট্রাফিক আইন-কানুন। অসহায় সাধারণ মানুষ, যেন দেখার কেউ নেই। কোথাও নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। জরুরি রোগী নিয়ে হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছার সুযোগ নেই। ফুটপাত দখল করে বসেছে হকার আর দোকানিরা। পথচারীদের চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, মাহিন্দ্র ও টেম্পোসহ যাত্রীবাহী বাস। এসব যানবাহনের চালক ও প্রভাবশালী মালিকরা নগরীর যেখানে সেখানে খেয়াল খুশি মতো গড়ে তুলেছে বিভিন্ন স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ড ঘিরে চলেছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি। এর ভাগ যাচ্ছে নানা মহলে। ফলে নগরজুড়ে যানবাহনের নৈরাজ্য স্থায়ীরূপ নিয়েছে। এমতাবস্থায় যানবাহনের নৈরাজ্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে ময়মনসিংহ নগরী। এতে দিনভর যানজটে নাকাল হচ্ছে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষসহ নগরবাসী। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, রাজধানী ঢাকা থেকে পরিবেশ দূষণের অভিযোগে বের করে দেয়া থ্রি হুইলার টেম্পো অবাধে চলাচল করছে ময়মনসিংহে। ঢাকায় নিষিদ্ধ এই যানটি ময়মনসিংহে কীভাবে চলাচলের বৈধতা পেলো প্রশ্ন নগরবাসীর। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএর অনুমোদনহীন থ্রি হুইলার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রতিদিন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ময়মনসিংহ শহরে। রয়েছে রেজিস্ট্রেশন বিহীন মাহিন্দ্র ও সিএনজি অটোরিকশাসহ ফিটনেসবিহীন যাত্রীবাহী বাস। ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন ও অনুমোদনহীন সব ধরনের যানের নিরাপদ জায়গা এখন ময়মনসিংহ। নগরীর ব্যস্ততম চরপাড়া মোড়ে রাস্তার একপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে সিএনজি অটোরিকশা, মাহিন্দ্র, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড। ফলে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা চরপাড়া মোড় থেকে পলিটেকনিক পর্যন্ত যানজটে অচল হয়ে পড়ছে নগরজীবন। মাত্র ৫ মিনিটের এই পথ পার হতে সময় লাগছে ৪০ মিনিট। এর প্রভাবে চরপাড়া থেকে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড ও ভাটিকাশর হয়ে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ছে। এ সময় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা জরুরি রোগীদের ভোগান্তির সীমা থাকছে না। যানজটে আটকা পড়ে অনেক অসুস্থ রোগী মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। নগরীর পাটগুদাম ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ মোড় ও টাউনহল মোড় সংলগ্ন মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের সামনে সিএনজি অটোরিকশার হাট বসছে। যানজট নিরসনে পাটগুদাম ব্রিজ মোড় সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। সম্প্রসারিত জায়গা জবরদখল করে বসানো হয়েছে অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র স্ট্যান্ড। এই স্ট্যান্ড থেকে বকুল নামে এক ব্যক্তি পুলিশের নামে মাসোহারা তোলেন বলে অভিযোগ চালকদের। মুমিনুন্নিসা মহিলা কলেজের সামনে সিএনজি অটোরিকশা, ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ড সরাতে ময়মনসিংহ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির নিয়মিত মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত থাকলেও তা কার্যকর করতে পারেনি ময়মনসিংহ প্রশাসন। অভিভাবকহীন নগরীর মানুষ এতিম হয়ে গেছে। ফলে ব্যস্ততম এই মোড়জুড়ে দিনভর যানজটে নাকাল হচ্ছে উত্তরবঙ্গ ও টাঙ্গাইলগামী দূরপাল্লর যাত্রীসহ শিক্ষার্থী ও নগরবাসী। এর পাশে টাউনহল মোড়ে রাস্তার দুই পাশ জবরদখল করে রাতারাতি গড়ে তোলা হয়েছে পালকি নামে পিকআপ ভ্যানের অবৈধ স্ট্যান্ড। ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসস্ট্যান্ড মাসকান্দায় সরিয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। অথচ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর না করে উল্টো এই স্ট্যান্ড থেকে নতুন করে যোগ করা হয়েছে শালবন পরিবহন নামের আরেকটি বাস সার্ভিস। ত্রিশাল ও ভালুকাগামী যাত্রীবাহী এই দু’টি পরিবহন প্রতিদিন বদরের মোড় ও চরপাড়া মোড় হয়ে যাতায়াতের সময় তৈরি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। এ সবের বাইরে নগরীর বদরের মোড়ে, মহিলা ডিগ্রি কলেজের পাশে, স্টেশন রোডের তাজমহল মোড়ে, দীঘারকান্দা বাইপাস ও আকুয়া বাইপাস মোড়ে, সানকিপাড়া লেভেল ক্রসিং এলাকাসহ বিভিন্ন মোড়ের রাস্তার ওপর গড়ে উঠেছে ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পোর স্ট্যান্ড। সিটি কর্তৃপক্ষের দাবি এসব স্ট্যান্ডের কোনো অনুমোদন নেই। এসব স্ট্যান্ড ও অনুমোদনহীন যানবাহনের কারণে চরপাড়া, বদরের মোড়, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, নতুনবাজার, জিলা স্কুল মোড়, সিকে ঘোষ রোড, গাঙিনারপাড়, পাটগুদাম ব্রিজ মোড়সহ পুরো নগর যানজটে অচল থাকছে প্রতিদিন। স্থানীয় সূত্র মতে, ময়মনসিংহ নগরীতে প্রায় সাত হাজার ইজিবাইক, প্রায় ২০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা, এক হাজার মাহিন্দ্র, শতাধিক পালকি নামের পিকআপ ও ১০ হাজারের বেশি সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। এসব নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান জানান, এমন নৈরাজ্য মেনে নেয়া যায় না। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু নগরবাসীর ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড সরানোর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার জন্য মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে প্রয়োজনীয় জায়গা করে দেয়া হয়েছে। অন্য অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে দিতেও স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- অবৈধ যানবাহন
- টাঙ্গাইল
- ঢাকা
- ময়মনসিংহ