বুঝতেই পারিনি কী ঘটতে যাচ্ছে
দূর্ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনো আঁতকে উঠেন বিমানের যাত্রী রেজওয়ানা খান। বাংলাদেশের স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস লিমিটেডের সিইও তিনি। তাঁর নাকে বেশ কয়েকটি সেলাই লেগেছে। আহত হওয়ার পর থেকে সারা শরীরে ব্যথা। এখন কিছুটা ভালো অনুভব করছেন তিনি। তাঁর পরিবারের আশা, শুক্রবার দেশে ফিরতে পারবেন তিনি। ইয়াঙ্গুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পড়া বাংলাদেশ বিমানের যাত্রী ছিলেন রেজওয়ানা। তিনি ইয়াঙ্গুনের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল বিকালে রেজওয়ানা খান টেলিফোনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সৃষ্টিকর্তা মহান। যখন বুঝলাম বেঁচে আছি, তখন মনে হলো দ্বিতীয় জন্ম পেলাম। আবহাওয়া খারাপ ছিল, কিন্তু দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত কিছুই বুঝিনি। দুর্ঘটনার পরপর বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ না করলে হয়তো কেউ আর বাঁচতে পারতাম না। রেজওয়ানা জানান, প্রথমে থান্ডার-স্টর্ম হচ্ছিল, পাইলট আধা-ঘণ্টার বেশি আকাশে চক্কর দিচ্ছিলেন। নামার চেষ্টা করেও নামতে পারছিলেন না, তখন অন্য দিকে ঘুরে যান। আমি বিমানের পেছনের দিকে বসে ছিলাম। একটি দরজা খোলার চেষ্টা করি। বিমানের বাইরে থেকেও অন্যরা তা খোলার চেষ্টা করছিলেন। এক সময় দরজাটা খুলতে পারি। চোখে চশমা থাকার কারণে নাকে-মুখে বেশ কয়েকটি জায়গায় কেটে যায়। তাতে সেলাই দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, পাইলট যখন বুঝতে পারলেন দুর্ঘটনায় পড়তে যাচেছন তখন ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এতে বিমানে আগুন ধরেনি। আগুন ধরলে হয়তো আমরা কেউ বাঁচতে পারতাম না। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বিমান বাংলাদেশের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ যাত্রী নিয়ে ইয়াংগুন যাচ্ছিল। সন্ধ্যায় ইয়াংগুন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে ইয়াংগুন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। ওই উড়োজাহাজে এক শিশুসহ ২৯ জন যাত্রী, ২ জন পাইলট ও ২ জন কেবিন ক্রু ছিলেন। রেজওয়ানা ব্যবসায়িক কাজে ইয়াংগুন যাচ্ছিলেন। সেখানে মিয়ানমারের একটি ব্যবসায়িক সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা ছিল তার। এজন্য তাঁর কোম্পানির ব্যবসায়িক পার্টনার আগে থেকেই সেখানে আছেন। দুর্ঘটনার পরপরই আহত যাত্রীদের প্রথমে জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। রেজওয়ানা বর্তমানে এআরওয়াইইউ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রেজওয়ানা জানালেন, ফ্লাইটটিতে অনেকেই পরিচিত ছিলেন। অনেকের এমন অবস্থা হয়েছে যে তাঁরা উড়োজাহাজে বসে দেশে ফিরতে পারবেন না। তাঁদের জন্য স্ট্রেচারে বা বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে থাকা রেজওয়ানার ১০ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ের সঙ্গে দুর্ঘটনার পর থেকে প্রতিনিয়ত কথা হচ্ছে রেজওয়ানার। ঘটনার আকস্মিকতায় মা ও মেয়ে মুষড়ে পড়েছেন বলে জানালেন রেজওয়ানা। রেজওয়ানা উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্সের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এ সংস্থার চেয়ারম্যান নাছিমা আক্তার নিশা বললেন, দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকেই সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে। সবাই রেজওয়ানা খানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছি। শুকরিয়া, বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। এই মুহূর্তে খুব বেশি কথা বলাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে রেজওয়ানা জানিয়েছেন, ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে কোথায় কোথায় ব্যথা পেয়েছেন তা তেমন ভাবে বুঝতে না পারলেও এখন বুঝতে পারছেন, সারা শরীরে ব্যথা। রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন।