৬ মাসের মধ্যে রাসায়নিক পল্লী: শিল্পমন্ত্রী
পুরান ঢাকার চকবাজারে অবস্থিত কেমিক্যাল গোডাউনগুলো আগামী ছয় মাসের মধ্যে ঢাকার আশপাশে যেকোনো জায়গায় রাসায়নিক পল্লীতে স্থানান্তর করা হবে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে এ কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। ওই সময়ের পর পুরান ঢাকায় কোনো কেমিক্যাল গোডাউন থাকবে না। গতকাল শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘২০শে ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরবর্তী আশু করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক সভায় একথা বলেন তিনি। এ সময় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুল হালিম উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, নতুন স্থানে যাতে ঘন জনবসতি গড়ে না ওঠে সেজন্য লোকালয় ও জনপথ থেকে কিছুটা দূরবর্তী কোনো জায়গায় চকবাজারের কেমিক্যাল গোডাউনগুলোর জন্য স্থান নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, আমরা পুরান ঢাকার সমস্যা সমাধানে পথ খুঁজছি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে আমরা জানতে পেরেছি রাজধানী থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের গোডাউন সরানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। নূরুল মজিদ বলেন, আবাসিক এলাকায় দাহ্য ও রাসায়নিক দ্রব্য থাকতে দেয়া যাবে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এটি সরানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরান ঢাকা থেকে দাহ্য ও রাসায়নিক দ্রব্যের গোডাউন সরিয়ে দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করা হবে না। সভায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী সমপ্রদায়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই আগে থেকে সচেতন হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, যাদের লাইসেন্স নেই, তাদের ব্যবসা কেন করতে দেয়া হলো। এ অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। সরকারি সংস্থার কর্মচারীরা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে আজকে এ অবস্থা হতো না। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আপনরা লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করতে দিলেন কেন? মাসে মাসে পরিদর্শন করার কথা। আপনারা যারা সরকারি কর্মকর্তা যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে পুরান ঢাকার এই ঘটনা ঘটতো না। তাই এখন থেকে সবাইকে দায়িত্ব পালনে সচেতন হতে হবে বলে আশা করি। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার রাস্তাঘাট প্রসারিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ কাজে রাজউককে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে। কেমিক্যাল শিল্পনগরীর বিষয়ে তিনি বলেন, শিল্পনগরী চালু হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা শুধু পুরান ঢাকায় নমুনা হিসেবে প্রদর্শনের জন্য দোকান রাখতে পারবেন। কিন্তু কেমিক্যাল সরবরাহ করবেন শিল্পনগরীর গোডাউন থেকে।পুরান ঢাকার রাস্তা সম্প্রসারণ করতে হবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে রাজউককে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমি মনে করি, রাজউকের ওপর আল্লাহর অভিশাপ আছে। রাজউকের জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে প্লট বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলতে গিয়ে বলেন, রাজউক আবাসন প্রকল্প করার জন্য মানুষের শত শত বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু শর্তানুযায়ী অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের যে প্লট দেয়ার কথা, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই দেয়নি। মানুষগুলো যুগের পর যুগ ঘুরছে। কারণ যাদের শত শত বিঘা জমি ছিল তাদেরকে রাজউক ভূমিহীন করেছে। অনেককে পুনর্বাসনের নামে অর্থাৎ দুই কাঠা জমি দেয়ার নামে দিনের পর দিন হয়রানি করছে। অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন এক ভাগও মিথ্যা নয়। ১০০ ভাগ সত্য। কাজেই আর কাউকে ভূমিহীন বানায়েন না বলে রাজউককে আহ্বান জানান। শিল্প মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তরসমূহ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি এবং এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।