ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে খাত সংশ্লিষ্ট বিজনেস প্ল্যান প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, দিনে দিনে ই-বর্জ্য কমানো যাবে না, আমাদের ইলেকট্রনিক্স ও ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহার আরো বাড়বে। পুরনো প্রযুক্তি বাদ দিয়ে নতুন প্রযুক্তিতে যেতে হবে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবহার যে বেড়েছে তা গত ৩০ বছরের চেয়ে বেশি। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম রিপোর্টারদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষক আলোচনায় তিনি একথা বলেন। আলোচকদের পক্ষে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইনটেনসিভ দেয়ার দাবি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আপনারা ট্যাক্স হলিডে চাইতে পারেন, এক্সপোর্ট জোন বা হাইটেক পার্ক থেকে বিশেষ সুবিধা নিতে পারেন। তবে আমরা একটি বিজনেস প্ল্যান দাঁড় করিয়ে দিতে পারি কিনা- যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কালেক্ট হওয়ার মতো একটি পদ্ধতি দাঁড়ায়। কোনো ভাঙারি দোকানদার যদি একটি জিনিস একশ’ টাকায় বিক্রি করতে পারে তাহলে সেটি ৫০ টাকায় কিনতে পারবে। তার জন্য ইনটেনসিভ লাগবে না। এটা একটা সহজ সমাধান। যারা রিসাইক্লিং করেন তাদের পণ্যের তালিকা তৈরির আহ্বান জানিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, ওই পণ্যগুলো কী দামে কিনতে পারেন তারও তালিকা করেন। যে সরবরাহ করবে তার জন্য এবং টোকাইয়ের জন্য মার্জিন দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। তাহলে সরাসরি ইনটেনসিভ প্রয়োজন হবে না। বিটিআরসি’র সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের (এসওএফ) অর্থ এই খাতে ব্যবহারের দাবি প্রসঙ্গে মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই ফান্ডের টাকা এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবো কিনা- সেটি পরীক্ষা করে দেখবো। তিনি জানান, ই-বর্জ্য নীতিমালা পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে গেছে। এটি ত্বরান্বিত করতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন মন্ত্রী। বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, ই-বর্জ্যের ভয়াবহতা মারাত্মক। যে পরিমাণ টাকা দিয়ে ডিভাইস কিনি তার দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা দিয়েও ব্যবস্থাপনা করা যাবে না। সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল দুর্গম এলাকায় টেলিকম সেবা দেয়ার জন্য বলা আছে। ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে এই তহবিলের আওতায় আনতে হবে। এজন্য এই আইনের সংশোধনের আহ্বান জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমরা লাইসেন্স দেয়ার আগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তৎপর হই। রবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ই-বর্জ্যকে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে দেখা হয়। অটিজম ও মানসিক বিকাশ না হওয়ার কারণও এটি। ই-বর্জ্য বাচ্চাদের মস্তিষ্কে প্রভাব পড়ছে। মায়েদের স্তনের ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আলাদা আলাদা ডাস্টবিন ব্যবহার করতে হবে। ২০১৫ সালে রবি স্বল্প পরিসরে ই-বর্জ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে ব্যাপক আকারে কাজ করা দরকার। এজন্য নীতিমালা দরকার। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সভাপতি মো. রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, প্রতিবছর প্রায় চার কোটি মোবাইল ফোন আমদানি হচ্ছে। এক বছর পরপর মানুষ মোবাইল পরিবর্তন করে। এক্ষেত্রে ই-বর্জ্য তৈরি হয়। তিনি বলেন, ই-বর্জ্য বেশি দামে কিনলে গ্রাহকেরাও বিক্রি করতে আগ্র্রহ দেখাবে। এক মাসের মধ্যে ঢাকার পাঁচটি স্পটে ই-বর্জ্য সংগ্রহ শুরু করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সংগ্রহ পয়েন্ট করা হবে। এজন্য বিটিআরসি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ বলেন, পরিবেশ আইনের আলোকে ইলেকট্রনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এটি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। ভেটিংয়ের পর জারি হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১৬ সালে ১ লাখ ৪২ হাজার টন ই-বর্জ্য বের হয়েছে। ২০২১ সালে ১ হাজার ১৬৯.৯৮ টন মোবাইল ই-বর্জ্য বের হবে। এনএইচ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হায়দার বলেন, টেলিকম অপারেটর থেকে বছরে প্রায় এক হাজার টন ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রওশন মমতাজ বলেন, ই-বর্জ্য পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সচেতনতা না থাকায় পরিবেশগত দিক থেকে বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআরএনবি সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে। অনুষ্ঠানে টেলিকম খাতের সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য রাখেন।
সম্পূর্ণ
আর্টিকেলটি পড়ুন