এবার দেশের উত্তরাঞ্চলে ৩৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
এবার দেশের উত্তরাঞ্চলে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। পাওয়ার চায়না এবং জিসিএম রিসোর্সেস যৌভাবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। এ ব্যাপারে দুটি কোম্পানির মধ্যে জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট (জেভিএ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বিদেশ থেকে আমাদানি করা কয়লা এবং এদেশের নিজস্ব খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা ব্যবহারের বিধান রাখা হয়েছে। দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকল্প প্রস্তাবে তিন ফেজে মোট ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। যার প্রাক্কলিত প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২ হাজার মেগাওয়াট করে তিন ফেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের তিনটি বড় কয়লা খনি বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ি এবং খালাশপীর-এর কাছাকাছি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে এসব খনি থেকে কয়লা উত্তোলিত হলে অল্প পরিবহন ব্যয়েই ওই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যায়। কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিই হবে দেশের সবচেয়ে কম খরচের কয়লাভিত্তক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।অতি সম্প্রতি দুই কোম্পানির মধ্যে অনুষ্ঠিত এগ্রিমেন্টে জিসিএম-এর পক্ষে স্বাক্ষর করেন মো. বদরুজ্জামান এবং মো. ফিরোজ জামান। অপরদিকে পাওয়ার চায়নার পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন জিয়াং লি জিন এবং প্যান ডেং উ। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জিসিএম রিসোর্সেস-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান দাতক মাইকেল ট্যাং, দীপন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রাশেদ মাহমুদ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস খান, পাওয়ার চায়নার চেয়ারম্যান দিয়াং ঝেং গাউ, চায়না চেম্বারের চেয়ারম্যান লিন উই কিয়াং, পাওয়ার চায়নার ভাইস চেয়ারম্যান জু জিয়াং লং প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ফেজ নির্মিত হলে ওই অঞ্চলের অন্তত ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় গৃহায়ন, স্কুল, মেডিকেল সেন্টার, ক্রীড়া চর্চার ব্যবস্থাসহ ইউটিলিটি সর্ভিসের উন্নয়ন করা হবে। সরকার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কর, রয়াটিসহ অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার পাবে। জিডিপিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অবদান রাখতে পারবে ২০ বিলিয়ন ডলার। এই এলাকায় শিল্প কারখানা, নির্মাণ সামগ্রী, সিরামিকসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠবে। জিসিএম রিসোর্সের নির্বাহী চেয়ারম্যান দাতক মাইকেল ট্যাং এই চুক্তি স্বাক্ষরকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের স্বর্ণযুগে প্রবেশ করলো। তিনি বলেন, যেহেতু আমরা এখান থেকেই ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি তাই এদেশে বিদ্যুতের আর কোন সংকট থাকবে না। পাশাপাশি ফুলবাড়ি কোলমাইনটি জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। পাওয়ার চায়নার চেয়ারম্যান দিয়াং ঝেং গাউ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি সমন্বিত উদ্যোগ। চুক্তি অনুযায়ী আমরা পরিবেশ ফ্রেন্ডলি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এখানকার কয়লা খনির উন্নয়ন ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এই এলাকার জনগণের জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসবে। প্রসঙ্গত, চায়না কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি পাওয়ার চায়না পৃথিবীর অন্যতম নেতৃস্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ২৪২ দশমিক ৭৫ গিগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এরমধ্যে ১৪ হাজার ৪০২ মেগাওয়াটের মালিকানা তাদের নিজস্ব। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই তারা আরও তিনটি বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে।