যেভাবে তৈরি হবে আবেদনকারীর ফলাফল
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪০ হাজার শূন্য পদের বিপরীতে প্রায় ৩০ লাখ আবেদন পড়েছে। এর মধ্যে ২৪ লাখের কিছু বেশি প্রার্থী আবেদন ফি বাবদ অর্থ জমা দিয়েছেন। জাল সনদে চাকরি নেয়া বন্ধ, শূন্য পদগুলো পূরণ এবং ৩৫ এর বেশি বয়সধারীদের বাদ দেয়ার জন্য এবার সম্মিলিত মেধাতালিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এতে ১ম থেকে ১২তম নিবন্ধিত চাকরি প্রত্যাশী পৌনে ৭ লাখ প্রার্থী প্রায় ৩০ লাখ আবেদন করেছেন। গড়ে প্রতি জনে প্রায় ছয়টি করে আবেদন করেছেন। তবে, কি প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীদের নিয়োগ হবে তা স্পষ্ট নয় অনেকের কাছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদেরও ভালো ধারণা নেই। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের মধ্যই শূন্য পদে আবেদনকারীদের আবেদন যাচাই-বাছাই কাজ শেষ হবে। যাচাইতে নিবন্ধন পরীক্ষার মেধাতালিকা ও বয়স অগ্রাধিকার পাবে। ২০১৮ সালের ১২ই জুনে যাদের বয়স ৩৫ বছর পার হয়েছে তারা নিয়োগের জন্য বিবেচিত হবেন না। এ ছাড়া ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠানে একটি পদের বিপরীতে একজনকেই নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। ওই সুপারিশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে এসএমএস করে জানিয়ে দেয়া হবে। নির্বাচিত ব্যক্তিকে একমাসের মধ্যে কাজে যোগদান করতে হবে। এরপর বিষয়টি এনটিআরসিএকে অবহিত করবে প্রতিষ্ঠান। একমাসের মধ্যে যোগদান না করলে মনোনয়ন বাতিল করে নতুন প্রার্থীর সুপারিশ করা হবে। এরপর নির্বাচিতদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিকে মোবাইল ফোনে এসএমএস করে নির্বাচিতদের তথ্য জানিয়ে দেয়া হবে। এভাবে একাধিক অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করবে এনটিআরসিএ। সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো ফলাফল তৈরি হবে নিবন্ধনের মেধা তালিকা অনুযায়ী। এক্ষেত্রে মেধাধারীদের নিবন্ধনের ফলাফলের স্কোরকে ধরে এ ফলাফল তৈরি হবে। এখানে বয়স, নিবন্ধনের ত্রুমিক, একাডেমিক ফলাফলসহ অন্যান্য কোনো বিষয় প্রাধান্য পাবে না। সম্মিলিত মেধাতালিকা প্রকাশের পর ১ম থেকে ১২তম নিবন্ধনের মোট উত্তীর্ণ প্রার্থী প্রায় ৪০ শতাংশ বয়সের কারণে বাদ পড়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে ১ থেকে ১২তম নিবন্ধনে পাস করা প্রার্থীদের জন্য সম্মিলিত মেধাতালিকা থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪০ হাজার শূন্য আসনে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ১৮ই ডিসেম্বর থেকে ১৯শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ হাজার পদের বিপরীতে নিবন্ধনধারী প্রায় ৭ লাখ আবেদনকারী প্রায় ৩০ লাখ আবেদন করেছেন। গড়ে প্রতি জনে প্রায় ৬টি করে আবেদন পড়েছে। এত সংখ্যক আবেদন পড়ার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এসএম আশফাক হুসেন মানবজমিনকে বলেন, পদের সংখ্যা এবং সবগুলো নিবন্ধনে পাস করা প্রার্থীরা এবার আবেদন করার সুযোগ পেয়েছে বলেই এত সংখ্যক আবেদন পড়েছে। তিনি বলেন, প্রায় ৪০ শতাংশ প্রার্থীর বয়স প্রায় শেষ। ৩৫ বছরের বেশি প্রার্থীরা এই নিয়োগের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবেন। তিনি বলেন, যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে মেধাতালিকায় যারা এগিয়ে থাকবেন তারাই নিয়োগ পাবেন। পুরো ফলাফল তৈরি হবে সফটওয়ারের মাধ্যমে। এনটিআরসিএ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে নতুন করে আরো ২০ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চরমভাবে শিক্ষক শূন্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। চলতি বছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, ১ থেকে ১৩ পর্যন্ত নিবন্ধনধারীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের পাশাপাশি হাইকোর্টে রিট করেছে। তাদের দাবিগুলো হলো- ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন বাতিল করে আগে ১-১২তম নিবন্ধিতদের নিয়োগ দিতে হবে। সার্টিফিকেটধারীদের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্যানেলভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। উপজেলা কোটা বাদ দেয়া, ৬০ হাজার জাল সনদধারীদের চাকরিচ্যুত করা, খণ্ডকালীন সৃষ্ট পদ বিলুপ্ত করে ১-১২তম বৈধ শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। সার্টিফিকেটের মেয়াদ ৩ বছর থেকে আজীবন বহাল রাখা।এ ব্যাপারে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধিত নিয়োগবঞ্চিত জাতীয় ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি ওবায়দুল ইসলাম বলেন, নিবন্ধন পরীক্ষায় যারা পাস করেছে সবাইকে নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও এখনো লাখ লাখ সনদধারী চাকরি পাচ্ছে না। ১-১২ পর্যন্ত নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ না দিয়েই ১৩-১৪তম পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল প্রকাশ করেছে। এ ছাড়াও যে ৬০ হাজার শিক্ষক ভুয়া সনদে চাকরি করছেন তাদের এখনো চাকরি থেকে বের করা হয়নি। অথচ এই ৬০ হাজার পদ শূন্য হলে আমরা আসল সনদধারীরা সেখানে চাকরির সুযোগ পাবো।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ
- ঢাকা