যেভাবে হত্যা করা হয় গাজীপুরের ফজলুকে

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকার চাঞ্চল্যকর ফজলু মিয়া নিহতের এক বছর পর রহস্যঘেরা হত্যাকাণ্ডের জট খুলে রহস্যের কিনারায় পৌঁছেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দুই লাখ টাকায় দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলা থেকে ভাড়ায় খুনিচক্র এনে হত্যার পর মরদেহ মহাসড়কে ফেলে দিয়ে দুর্ঘটনাজনিত বলে চালানোর অপচেষ্টা করা হয়। হত্যাকাণ্ড থেকে জড়িতরা বাঁচতে বেছে নেন একের পর এক নানা কূটকৌশল। এরই অংশ হিসেবে প্রভাবশালী ওই চক্রটি গরিব-নিরীহ ফজলুর মাকে ভুল বুঝিয়ে তাকে বাদী করে গ্রামের লোকজনকে আসামি করে একটি সাজানো মামলাও করায়। কিন্তু বিধি বাম, সিআইডি’র তদন্তে বেরিয়ে আসছে আসল রহস্য। হত্যার এক বছরের মাথায় গ্রেপ্তার হয় হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা যুবলীগের রাজনীতিতে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহিনুর ইসলাম দিপু। রোববার দুপুরে গাজীপুরের পুলিশ অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. আরজু মিয়া এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান সাংবাদিকদের। তিনি জানান, নগরের কোনাবাড়ি থানার বাইপাইল এলাকার বাসিন্দা গ্রেপ্তার হওয়া শাহিনুর ইসলাম দিপু ২০১৫ সালে ইন্টারনেট ব্যবসা দেখাশুনা করার জন্য নিহত শেরপুরের ফজলু মিয়াকে তার নিজ প্রতিষ্ঠানে কাজ দেন। কিন্তু কিছুদিন পর দিপুর সঙ্গে এলাকার প্রভাব বিস্তার ও ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে বিরোধ শুরু হয় ফজলু মিয়ার। এর জের ধরে নিহত ফজলু মিয়া বাইপাইল এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে দিপুর সহযোগী মোস্তফা ও আল আমিনকে মারধর করে। পরে দিপুর বাসার সিসি ক্যামেরা ও তার বাবার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে নিহত ফজলু মিয়া। এর প্রতিশোধ নিতে ফজলু মিয়াকে হত্যার ছক আঁকে দিপু। ফজলুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে ২ লাখ টাকায় ভাড়াটিয়া কিলারদের সঙ্গে চুক্তি করে। হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ২০১৮ সালের ২৪শে মে ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে ফজলুকে মোবাইল ফোনে বাইপাইল ব্রিজের কাছে ডেকে নিয়ে আসে দিপু। এক পর্যায়ে ভিকটিমকে ভাড়া করা কিলারসহ ৭-৮ জনের একটি মাইক্রোবাসে তুলে ময়মনসিংহের দিকে রওনা দেয়। পথে মাইক্রোবাসের ভেতর ফজলুকে মারপিট এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে মৃত দেহটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার জন্য ত্রিশালের কাজী শিমলা এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর ফেলে যায়। রাত ৩টার দিকে ত্রিশাল থানা পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে ফজলুর মরদেহ উদ্ধার এবং সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে থানায় হত্যা মামলা করে। এরপর শেরপুরের স্থায়ী বাসিন্দা ফজলু মিয়ার সন্ধান না পেয়ে তার বাবা-মা দিপুর কাছে গেলে অভিযুক্ত দিপু নানা টালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করে এবং কিছু টাকা পয়সা দিয়ে ফজলুর মাকে বিদায় দেয়। কিছুদিন পর আবার ছেলের সন্ধানে ফজলু মিয়ার মা অজুফা দিপুর কাছে এলে দিপুর মা বাছিরুন তাকে মারধর করে এবং পরে কিছু টাকা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরে হত্যার বিষয়টি ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য বাদিনী অজুফাকে প্রভাবিত এবং ভুল বুঝিয়ে একই তারিখ ও সময় উল্লেখ করে শেরপুর আদালতে ১০ জনকে বিবাদী করে একটি অপহরণ মামলা করানো হয়। এতে অভিযুক্ত দিপুকে সাক্ষী করা হয়। কিন্তু সেই মামলাটি মিথ্যা বলে শেরপুর পুলিশ তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এদিকে ওই বছরের ৯ই সেপ্টেম্বর গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় এ বিষয়ে একটি হত্যা মামলা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ এক বছরেও মামলাটি অগ্রগতি না হওয়ায় সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ই জানুয়ারি মামলাটির তদন্তভার পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। গাজীপুর সিআইডি’র উপপরিদর্শক শাহ মো. আজাদ রহমান তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের এক পর্যায়ে গত ৮ই সেপ্টেম্বর হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা দিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ফজলু হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় অভিযুক্ত দিপু। আদালতের বিচারক জবানবন্দি শেষে দিপুকে কারাগারে প্রেরণ করেন। সহকারী পুলিশ সুপার মো. আরজু মিয়া আরো বলেন, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডে মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর সহযোগীদের ধরতে জোরালো তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত সময়ে অপর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো এবং নিহত ফজলুর গরিব-নিরীহ পরিবারের লোকজন ন্যায়বিচার পাবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও