ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে অচল চট্টগ্রাম
যেদিকে চোখ যায় শুধু গর্ত আর গর্ত। ছোটখাটো নয়, বড় বড় গর্ত। আর গর্তের চারপাশে হয় কাদা, নয় ধুলা। যার জন্য দায়ী চট্টগ্রাম ওয়াসা। ওয়াসার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির এমন যন্ত্রণা থেকে যেন মুক্তি মিলছে না চট্টগ্রাম নগরবাসীর।গত ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম মহানগরজুড়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে ওয়াসা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই খোঁড়াখুঁড়ি নগরীর সব সড়কে হওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম। নগরবাসীর অভিযোগ, ওয়াসা আগে রাস্তা বন্ধ না রেখে সড়ক কাটাকাটি করতো। এখন সড়ক বন্ধ করে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি।ফলে নগরবাসীর ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। সাধারণ পথচারীর পাশাপাশি বেশি বেকায়দায় পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি হলে তো আর কথায় নেই, কাদা আর কাদা। সবমিলিয়ে সড়কগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল প্রায়ই বন্ধ রয়েছে। পথচারীদেরও দুর্ভোগ চরমে।ভুক্তভোগীরা জানান, পাইপ লাইন বসানোর কারণে নগরীর গণি বেকারি থেকে জামালখান মোড় পর্যন্ত সড়কটি প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তাটি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি হাজি মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় এক প্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সড়ক বন্ধ থাকায় জামালখান মোড়ে অবস্থিত ডা. খাস্তগীর গার্লস স্কুল, এজি চার্চ স্কুলসহ আশেপাশের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। চকবাজার, কাতালগঞ্জ ও মুরাদপুর এলাকার শিক্ষার্থীরা অন্তত দুই কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে রহমতগঞ্জ আন্দরকিল্লা, চেরাগি পাহাড় হয়ে বিদ্যালয়ে আসছে। একই কারণে চকবাজার থেকে আগ্রাবাদগামী গণপরিবহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। মির্জাপুল সড়কে পথচারীরা মুখে কাপড় চেপে ধরে চলাচল করছে। ধুলো উড়ছে সবখানে। আবার বৃষ্টি হলে কাদায় মাখামাখি হয়ে পা ফেলা দায় হয়ে পড়ছে। কাটাকাটি চলা অংশের পাশে পড়ে আছে বালি, ইটের খোয়া, এস্কেভেটর, পাম্প মেশিন, শাবল ও কোদাল।নগরীর বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট সড়কের প্রায় ৬ কিলোমিটার গত তিন বছর ধরে বন্ধ। পাইপ লাইন বসানোর নামে এ সড়কের এক পাশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচল ও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। কাটা সড়কে চাকা দেবে ও গর্তে গাড়ি পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।গাড়ি চালকরা জানান, সড়ক বন্ধ হয়ে সংকীর্ণ হওয়ার কারণে যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ট্রিপ কমেছে, আয়ও কমে গেছে। ধুলাবালি, কাদা তো আছেই। এতে পুরো চট্টগ্রাম একরকম অচল হয়ে পড়েছে। জিকরুল হাবিবিল ওয়াহেদ নামে পরিবেশবাদী সংগঠনের কর্মী বলেন, সড়কের কাটাকাটির যেন শেষ নেই। সারা বছর কাটছে সড়ক। উন্নয়ন দরকার তবে তা জনদুর্ভোগ করে নয়। শুকনো সময়ে ধুলো বৃষ্টির সময়ে কাদায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে কিছুটা ভোগান্তি হলেও এ প্রকল্প তো নগরবাসীর পানি সংকট মেটানোর জন্য। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে নগরবাসী একদিনে পাবে ৪২ কোটি লিটার পানি। আমরা চেষ্টা করছি প্রকল্পের কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য। সেজন্য দিনে রাতে কাজ করছি। শত চেষ্টা করেও একদিনে একটার বেশি পাইপ স্থাপন বসানো যাচ্ছে না। কারণ একটি পাইপের ব্যাসার্ধ ১২০০ মিলিমিটার। তিনি জানান, মুরাদপুর মোড় থেকে দক্ষিণে হাটহাজারীর সড়কের মির্জারপুল, পাঁচলাইশ থানার মোড়, কাতালগঞ্জ, চকবাজার অলি খাঁ মসজিদ থেকে গণি বেকারি মোড় এবং জামালখান-চেরাগি পাহাড়-আন্দরকিল্লা ঘুরে কাটা পাহাড়- বোস ব্রাদার্স মোড়, আবার থিয়েটার ইনস্টিটিউট হয়ে নিউমার্কেট মোড় এবং সেখান থেকে সদরঘাট রোড হয়ে বারিক বিল্ডিং-কাস্টমস মোড় পর্যন্ত ৪৮ ইঞ্চির ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করছে ওয়াসা। এর পাশাপাশি কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের ফেইজ-২ এর অধীনে নগরের সার্সন রোড-চট্টেশ্বরী হয়ে গুলজার মোড় পর্যন্ত পাইপ লাইন বসানোর কাজ চলছে। ফেইজ-১ ও ২-এর অধীনে নগরে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার নতুন পাইপ লাইন বসানো হবে। যা ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হবে। এ পর্যন্ত নগরবাসীকে একটু দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে। উল্লেখ্য, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পুরনো পাইপ লাইন বদলে নতুন পাইপ স্থাপনের কাজ করছে ওয়াসা। যা ২০২১ সালের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। পাইপ লাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। এরমধ্যে শুরু হবে স্যুয়ারেজ প্রকল্প। যার বাস্তবায়নকাল পরবর্তী ৩০ বছর পর্যন্ত। শুধু ওয়াসা নয়, পিডিবি, বিটিসিএল ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডও একইভাবে রাস্তা কেটে প্রকল্পের কাজ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলো ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই সিটি করপোরেশনের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প সমন্বয়ের দায়িত্ব দিলে জবাবদিহিতা বাড়বে, কমবে প্রকল্প খরচও।