যে কারণে আরব বসন্ত কখনোই ব্যর্থ নয়
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আরব বসন্তকে ব্যাপকভাবে একটি ‘ব্যর্থতা’ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে বিশ্লেষকরা একে আদর্শবাদের একটি ক্ষণস্থায়ী বহিঃপ্রকাশ হিসাবে চিত্রিত করেন, যা শেষ পর্যন্ত দমনপীড়ন, গৃহযুদ্ধ এবং স্বৈরশাসনের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিউনিসিয়ার সিদি বাউজিদে রাস্তার বিক্রেতা মোহাম্মদ বুয়াজিজির আত্মাহুতির মাধ্যমে যে গণজাগরণের সূচনা হয়েছিল, তাকে আজ অনেকেই শুধু এক ট্র্যাজেডি বা দুঃস্বপ্ন হিসাবে স্মরণ করেন।
কিন্তু এ দৃষ্টিভঙ্গি শুধু অসম্পূর্ণই নয়, বরং বিভ্রান্তিকরও বটে। বুয়াজিজির সেই চরম আত্মত্যাগ শুধু পুলিশি বর্বরতা বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ছিল না; এটি ছিল যুগ যুগ ধরে পুঞ্জীভূত অপমানের বিরুদ্ধে একটি নৈতিক বিদ্রোহ। এটি স্বৈরাচারী শাসনের ভিত্তিকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল। তিউনিসিয়া থেকে শুরু করে আরব বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে যা ঘটেছিল, তা শুধু বিক্ষোভ ছিল না-তা ছিল এক সামষ্টিক জাগরণ। মানুষ প্রথমবারের মতো মর্যাদা (কারামাহ), নাগরিকত্ব এবং আনুগত্যের সীমা সম্পর্কে নতুনভাবে সচেতন হয়ে উঠেছিল। তাই আরব বসন্তকে একটি ‘ব্যর্থ রাজনৈতিক রূপান্তর’ হিসাবে না দেখে, বরং ‘রাজনৈতিক চেতনার স্থায়ী রূপান্তর’ হিসাবে দেখা উচিত। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবগুলো প্রাতিষ্ঠানিক নয়, বরং অভিজ্ঞতামূলক। এটি মানুষের মনে নাগরিকত্ব, বৈধতা এবং নিজের ভাগ্য নিজে গড়ার সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণাকে আমূল বদলে দিয়েছে। অনেক দেশে শাসকগোষ্ঠী টিকে গেলেও বা আবার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেলেও, মানুষের চেতনার এ পরিবর্তন মুছে যায়নি।