লাশের বদলে লাশ নয়, সম্প্রীতির রাজনীতি চাই

জাগো নিউজ ২৪ চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৫

মানুষ হিসেবে আমরা কী চাই, এই প্রশ্নটার উত্তর আসলে খুব জটিল হওয়ার কথা নয়। খুব সাধারণ কিছু চাওয়া আমাদের। একটু শান্তি চাই, একটু স্বস্তি চাই, নিরাপত্তা চাই। চাই এমন একটা ঘর, যেখানে রাতের বেলা নিশ্চিন্তে ঘুমানো যায়, সকালে উঠে ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে কাঁপতে না হয়। ভাত কাপড়ের সংস্থান চাই, সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর সামর্থ্য চাই, অসুস্থ হলে চিকিৎসার নিশ্চয়তা চাই। এর সঙ্গে চাই সম্মান, চাই মর্যাদা, চাই এমন একটি সমাজ যেখানে একে অপরকে মানুষ হিসেবে দেখবে। এই চাওয়াগুলো কোনো বিলাসিতা নয়। এগুলো মানবিক জীবনের ন্যূনতম শর্ত। অথচ আজকের বাস্তবতায় এই সাধারণ চাওয়াগুলোই যেন পাহাড়সম ভারী হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে, এসব পাওয়ার অধিকারটুকুও বুঝি আমাদের কাছ থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে।


দেশটা এখন কেমন যেন বিভিন্ন মতের মানুষে গভীরভাবে বিভক্ত। মতের বিভাজন ছিল আগেও, মতাদর্শের দ্বন্দ্বও নতুন নয়। কিন্তু এখন সেই বিভাজন যেন মানুষের ভেতরের মানবিক অংশটুকু গিলে খাচ্ছে। একজনের সঙ্গে আরেকজনের মত না মিললেই যেন তাকে শত্রু ভেবে নেওয়া হচ্ছে। যুক্তির জায়গায় ঢুকে পড়ছে গালি, সহমতের জায়গায় দখল নিচ্ছে হুমকি। কথার লড়াই মুহূর্তেই রূপ নিচ্ছে হাতাহাতিতে, আর হাতাহাতি গড়াচ্ছে প্রাণনাশের প্রতিশ্রুতিতে। সমাজের ভেতরে যেন এক ধরনের আদিম প্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যেন কেউ অপেক্ষা করছে কখন সুযোগ পাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার, লাশ ফেলে দেওয়ার, নিজের ক্ষোভকে রক্তে ধুয়ে দেওয়ার।


এই প্রবণতা ভয়ংকর, কারণ এটি কোনো একক গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। রাজনীতি, আন্দোলন, সামাজিক মাধ্যম, চায়ের দোকান, টক শো সবখানেই একই ভাষা, একই উত্তেজনা, একই প্রতিশোধস্পৃহা। লাশের বদলে লাশ, চোখের বদলে চোখ, রক্তের বদলে রক্ত। এই ভাষা শুনতে শুনতে মনে হয়, দেশজুড়ে যেন একটি নিষ্ঠুর আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের মহড়া চলছে। যেন সবাই প্রস্তুত, কেবল একটা স্ফুলিঙ্গের অপেক্ষা।


কিন্তু আমরা খুব কমই ভাবছি, এই পথে গেলে শেষটা কোথায়? লাশের বদলে লাশ যদি নীতি হয়, তাহলে একসময় লাশের অভাব হয়তো হবে না, তবে মানুষই আর থাকবে না। চোখের বদলে চোখ চাইলে একসময় সবাই অন্ধ হয়ে যাবে। প্রতিশোধের রাজনীতি কখনো নিরাপত্তা দেয় না, দেয় কেবল অনন্ত শোক আর অনিশ্চয়তা। ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে, হিংসার মধ্য দিয়ে কোনো সমাজ মানবিক হয়নি, বরং আরও ভেঙে পড়েছে। অথচ আমরা সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে চাইছি না। আমরা যেন ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছি।


এই প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া কিছু বক্তব্য দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। ‘জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর কোনো আক্রমণ হলে পাল্টা আক্রমণের হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না, একটা লাশ পড়লে আমরা লাশ নেব।’ এই কথাগুলো শুনে শিউরে ওঠা ছাড়া উপায় থাকে না। কারণ এই বক্তব্য কেবল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি সরাসরি হিংসাকে বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা।


মাহফুজ আলমকে অনেকেই একজন চিন্তাশীল, প্রজ্ঞাবান মানুষ হিসেবে দেখেছেন। জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তাকে অনেকের চোখে সবচেয়ে অগ্রসর চিন্তার মানুষ বলেই মনে হয়েছে। তার বক্তৃতায়, লেখায় একটি সংযত বোধ, একটি বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা গিয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহম্মদ ইউনূসও নিউইয়র্কের এক সমাবেশে তাকে জুলাই আন্দোলনের ‘মাস্টার মাইন্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এই পরিচয়, এই প্রত্যাশার জায়গা থেকেই তার বক্তব্য আরও বেশি হতাশাজনক হয়ে ওঠে। কারণ যে মানুষটিকে অন্যদের তুলনায় ধীরস্থির এবং দূরদর্শী বলে মনে হয়েছিল, সেই মানুষটির মুখ থেকেই যখন লাশের বদলে লাশ নেওয়ার কথা শোনা যায়, তখন উদ্বেগ দ্বিগুণ হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও