টিকার মতোই জাতীয় কর্মসূচি হোক সাঁতার শিক্ষা

জাগো নিউজ ২৪ জসিম উদ্দিন প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৬

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ—নদী, খাল, বিল ও পুকুর আমাদের ভূগোল, জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ এই জলই প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য শিশুর জীবন। প্রতিবছর দেশে কয়েক হাজার শিশু ডুবে মারা যায়; তাদের অধিকাংশের বয়স চার থেকে দশ বছরের মধ্যে। এই মৃত্যুর পেছনে কোনো জটিল রোগ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়—শুধু একটি অদক্ষতা, সাঁতার না জানা। যে দেশে শিশুরা পানির এত কাছে বেড়ে ওঠে, সেখানে সাঁতার শিক্ষা বাধ্যতামূলক না হওয়াটা নিঃসন্দেহে নীতি-অবহেলার প্রতিফলন। সময় এসেছে এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে সাঁতার শিক্ষাকে টিকার মতোই একটি জাতীয় কর্মসূচি হিসেবে ঘোষণার।


২০১৮ সালের জুলাইয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের সাইনাল গ্রামে ঘটে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। দুপুরে দুই বোন—মিম (৭) ও মরিয়ম (৫)—খেলতে গিয়ে পাশের পুকুরে পড়ে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যে তাদের উদ্ধার করা গেলেও তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। অসহায় মায়ের কান্নাভেজা কথা ছিল—“ওরা যদি একটু সাঁতার জানত, হয়তো বাঁচত।” এই একটি বাক্যই আমাদের নির্মম বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে—শিশুরা ডুবে মারা যায়, কারণ তারা বাঁচার উপায় জানে না।


এমন মর্মান্তিক ঘটনা দেশের নানা জায়গায় প্রায় প্রতিদিন ঘটে। তবে আশার কথা হলো—যেখানে শিশুদের সাঁতার শেখানো হয়েছে, সেখানে মৃত্যুহার কমে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার রুয়ান্ডা ইউনিয়নে ব্র্যাকের উদ্যোগে চালু হওয়া একটি পাইলট প্রকল্পে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ শতাংশ কমে যায়। অংশগ্রহণকারী শিশুরা শুধু ভেসে থাকা নয়, পানিতে পড়ে গেলে কীভাবে নিজেকে ও অন্যকে সাহায্য করা যায়, সেটিও শিখেছে।


এই উদাহরণ প্রমাণ করে—সাঁতার শিক্ষা কেবল বিনোদন নয়, এটি একপ্রকার জীবনরক্ষাকারী টিকা। টিকা যেমন শিশুকে অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, সাঁতারও তেমনি পানির বিপদ থেকে আত্মরক্ষার ক্ষমতা দেয়।


বাংলাদেশে জাতীয় টিকা কর্মসূচি (EPI) একটি অনুকরণীয় সাফল্য। টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, যা আমাদের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার বড় অর্জন। এক সময় যেমন টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব ছিল, আজ তেমনি সাঁতার শেখার ক্ষেত্রেও রয়েছে অবহেলা, সুযোগের ঘাটতি ও সামাজিক উদাসীনতা। অথচ লক্ষ্য একটাই—শিশুর জীবন রক্ষা।


ইউনিসেফ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে ১৪ থেকে ১৭ হাজারেরও বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়—যা মোট শিশুমৃত্যুর প্রায় ২৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু। এই মৃত্যুগুলো কোনো প্রাকৃতিক পরিণতি নয়—এগুলো প্রতিরোধযোগ্য। সামান্য পরিকল্পনা, সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যেই এই মৃত্যুহার অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ এই অঞ্চলে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। একইসঙ্গে ইউনিসেফের ২০২৪ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর মধ্যে ডুবে যাওয়ার হার এখনও বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ে। অর্থাৎ, এই সংকট শুধু স্থানীয় নয়—এটি একটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আমাদের মতো নদীপ্রধান দেশগুলো।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও