এ ধরনের জঘন্য অপরাধ আর যেন না হয়

যুগান্তর ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৮

আমরা দেখলাম আমাদের যে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষিত হলো এবং এটা একদিকে ইতিবাচক আরেকদিকে নেতিবাচক। এটা ইতিবাচক এই অর্থে যে, যিনি অপরাধ করেন, তিনি যত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিই হোন, যত গুরুত্বপূর্ণ পদেই তিনি থাকুন না কেন, তিনি আইনের ঊর্ধ্বে নন, তিনি বিচারের আওতাধীনে আসতে বাধ্য এবং তিনি অপরাধী হলে তার শাস্তি হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী, সেটা আবারও প্রতিষ্ঠিত হলো। আর নেতিবাচক হলো-এটা আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আমাদের সরকারের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি এবং তিনি এবং তার গুরুত্বপূর্ণ সহকর্মী অর্থাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তাদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। এদিকে পুলিশের সাবেক আইজি, তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। সরকারের এত উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের এ ধরনের শাস্তি হওয়াটা লজ্জাজনক আমাদের জন্য। এটা নিঃসন্দেহে খুশির খবর নয়। অপরাধীদের বিচার হয়েছে, এটা ইতিবাচক নিঃসন্দেহে; কিন্তু সরকারের এরকম পর্যায়ের ব্যক্তিদের তা হতে হলো, কারণ তারা এমন সব অপকর্মে লিপ্ত হয়েছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, যার ভিত্তিতে তাদের শাস্তি হলো।


আরেকটা জিনিস লক্ষণীয় এখানে, যে আইনের আওতায় শাস্তি হলো, এই আইনটা কিন্তু প্রণয়ন করেছে শেখ হাসিনা সরকার ২০০৯ সালে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল ২০০৯ সালে প্রণীত হয়েছে এবং এটা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা গণহত্যা চালিয়েছে কিংবা আরও অনেকরকম গুরুতর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল, যেমন-খুন, গুম, নির্যাতন এসব অপরাধ করেছে, তখনকার বাংলাদেশের নাগরিক এবং পাকিস্তান আর্মি, যারা ওইসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল বা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল-তাদের বিচারের জন্য এই আইনটা করা হয়েছে। নিয়তির কী পরিহাস, এই আইনটা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই এবং তার সরকারের অন্যতম দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োগ হলো।


এই আইসিটি অ্যাক্টে ২০১২ সালে আমার যতটুকু মনে পড়ে, নয়জন জামায়াতে ইসলামীর এবং দুজন বিএনপি নেতার বিচার করা হয় এবং তাদের শাস্তি দেওয়া হয়। যদিও ওই বিচার ও শাস্তি নিয়ে অনেক আন্তর্জাতিক সংগঠন কিছু প্রশ্ন তুলেছিল। এই বিচারের নিরপেক্ষতা, বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছিল তখন অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ব্যক্তি, যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, তারা। শুধু তাই নয়, অ্যাকশন এইড নামে একটি সংস্থা একটা সার্ভে করেছিল আমার যতটুকু মনে পড়ে, তখন দুই-তৃতীয়াংশ লোক ওই বিচারের নিরপেক্ষতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। আমার যতটুকু মনে পড়ে, সাপোর্টেড ডিসটিংশন অনেকেই প্রশ্ন করেছিল, দুই-তৃতীয়াংশ প্রশ্ন করেছিল নিরপেক্ষতা নিয়ে। যদিও ৬৬ শতাংশ চেয়েছিল এর বাস্তবায়ন এবং ওই বিচারের একটা উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, কাদের মোল্লার প্রাথমিকভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল; কিন্তু শাহবাগ মুভমেন্ট তার মৃত্যুদণ্ড দাবি করে। সেই আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। আদালত রায় দিলেও প্রতিবাদের মুখে আদালত রায় পরিবর্তন করেছে এবং সেটা নিয়ে নিঃসন্দেহে প্রশ্ন তৈরি করেছে।


ওটা হলো ব্যাকগ্রাউন্ড। তো ওই আইনটাকেই আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন করে পুনর্গঠন করেছে ২০২৪ সালে। সে বছর গণ-অভ্যুত্থানে বহু প্রাণহানি হয়েছে-জাতিসংঘের হিসাবে ১৪০০ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এছাড়া আরও অনেকরকম অপরাধ হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে এবং এগুলোর বিচারের জন্য ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তী সরকার এই আদালত পুনর্গঠন করেছে এবং আদালত পুনর্গঠন করে ক্রাইম এগেইনস্ট হিউম্যানিটি বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য এটাকে পুনর্গঠন করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা মার্ডার, টর্চার এবং ব্যাপক ও ধারাবাহিকভাবে সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ, তাদেরকে খুন করা ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্যই কিন্তু এই আদালত পুনর্গঠন করা হয়েছে। দুটো বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। এই দুটো বেঞ্চেই বিচার চলছে এবং এই প্রথম তিনজনের রায় ঘোষিত হলো।


এই রায়ের পরবর্তী আরও পদক্ষেপ আছে। এরপরে রায় কার্যকর হবে কী হবে না এবং কত দ্রুত হবে-সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ শেখ হাসিনা দেশে নেই এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও দেশে নেই। সাবেক পুলিশ প্রধান রাজসাক্ষী হওয়ায় তার সাজার মেয়াদ অনেক লঘু। তিনি আটক থাকায় তার রায় হয়তো কার্যকর হবে; কিন্তু কথা হচ্ছে, অন্য দুজনের শাস্তি কার্যকর হবে কিনা।


মানবতাবিরোধী অপরাধের এই কার্যক্রম শুরু হয় নুরেমবার্গ ট্রায়াল থেকে এবং রোম স্ট্যাটিউট, যেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটা আইন কাঠামো, এগারো ধরনের অপরাধ এর অন্তর্ভুক্ত। রোম স্ট্যাটিউট অনুযায়ী এসব অপরাধের মধ্যে মার্ডার আছে, এক্সটারমিনেশন আছে, দাসত্ব, এলাকা থেকে কৌশলে মানুষকে বিতাড়িত করা, টর্চার ইত্যাদি আরও সব অমানবিক কার্যক্রম আছে। এসব অপরাধই রোম স্ট্যাটিউটে অন্তর্ভুক্ত।


আন্তর্জাতিকভাবে ২০০২ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট স্থাপিত হয় নেদারল্যান্ডসের হেগে। এসব অপরাধে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টেও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা যায় অথবা এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশের অভ্যন্তরেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টি করে তাদের বিচার করা যায়। এখন আমাদের দেশের অভ্যন্তরে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টি করে এই তিনজনকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে, আরও অনেকের বিচার হতে পারে; কিন্তু এই তিনজনের প্রথমবারের মতো রায়ে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এখন তাদের শাস্তি কার্যকর হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যারা বিচারপ্রত্যাশী ছিলেন, তারা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আমরা আশা করি, আদালত তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করেছেন এবং এই শাস্তি ঘোষণার মাধ্যমে অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং শাস্তি দিয়েছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও