‘চোখের কাপড় সরাতেই দেখি মানুষের হাত-পা কাটা ছবি’
পঞ্জিকায় ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। সেই সময়ে ছাত্রদল নেতা মফিজুর রহমান আশিকের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ এক অধ্যায়। বিকেলের নাশতা শেষে হাঁটতে বেরোনোর পর তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় র্যাবের গোপন বন্দিশালা কুখ্যাত ‘আয়নাঘরে’। গোপন সেই টর্চার সেলে দুই মাস কাটে তার অমানবিক নির্যাতন আর মৃত্যুভয়ে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম হয়ে নিপীড়নের শিকার হওয়া সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন মফিজুর রহমান আশিক। গুম করার অভিযোগে মামলা করেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে।
ট্রাইব্যুনালকে আশিক জানান, তাকে ক্রেনে ঝুলিয়ে তার গোপনাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হতো। প্রচণ্ড পিপাসায় পানি চাইলে দেওয়া হতো না। বরং মুখে প্রস্রাব করে দিতে চাইত নির্যাতনকারী র্যাব সদস্যরা।
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে অসংখ্য। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে এমন বহু নারকীয় ঘটনা। বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের বহু মানুষ গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন সেই সময়ে। তখন গোপন বন্দিশালা থেকে বেঁচে ফিরলেও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাননি। কারণ তাদের আবার আয়নাঘরে নিয়ে যাওয়ার ভয় ছিল।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বোরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একে একে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে এসব গুম ও নিপীড়নের অভিযোগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ সম্পর্কিত বহু অভিযোগ ইতোমধ্যে জমা পড়েছে। সম্প্রতি নিজের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন সাবেক ছাত্রদল নেতা আশিক। গত ৩ নভেম্বর তিনি ট্রাইব্যুনালে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পৈশাচিক নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুখালী গ্রামের বাসিন্দা মফিজুর রহমান আশিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের (জুয়েল-হাবিব কমিটি) সাবেক গ্রন্থাগার সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। মিরপুরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
- ট্যাগ:
- রাজনীতি
- নির্যাতন
- ছাত্রদল নেতা
- রাজনৈতিক গুম