খালেদা জিয়াতেই কেন বিএনপির ভরসা
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যে ২৩৬টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে, তাতে সবচেয়ে বড় চমক হলো দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য তিনটি আসন রাখা। আসন তিনটি হলো ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। অতীতে এই সংখ্যা ছিল পাঁচ।
এরশাদের শাসনামলে কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুই নেত্রীর ১৫০+১৫০ আসনের ফর্মুলা দেন। এরপর নির্বাচন কমিশন পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমিত করে দেয়।
খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যতগুলো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সব কটিতেই বিপুল ভোটে জিতেছেন। কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা ব্যতিক্রম ঘটনা। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯১ সালের নির্বাচনে দুটি ও ২০০১ সালে একটি আসনে পরাজিত হন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৯১ সালে জেলে থেকে পাঁচটি আসনে জিতলেও ২০১৪ সালে একটি আসনে পরাজিত হন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালে জেলে যাওয়ার পর খালেদা জিয়া রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নন। বিএনপির দাবি, এই মামলা ছিল পুরোপুরি উদ্দেশ্যমূলক ও ভিত্তিহীন। জেলে যাওয়ার আগেই খালেদা জিয়া দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে যান।
তারেক সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে দেশান্তরি হন এবং লন্ডন থেকেই দল পরিচালনা করে আসছেন। সেখান থেকে নিয়মিত দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বৈঠক করছেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। দলের প্রার্থী মনোনয়নেও তাঁর ভূমিকা ছিল মুখ্য। আগামী মাসে তাঁর দেশে ফেরার কথা।
খালেদা জিয়া বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ। সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন, এটাও বলা যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সাত বছর তিনি কখনো কারাগারে, কখনো হাসপাতালে ও গৃহে অন্তরিণ ছিলেন। দলের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোর ক্রমাগত দাবি জানানো হলেও তৎকালীন সরকার গ্রাহ্য করেনি।
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। গত বছর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হলে খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পান। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সব মামলাও খারিজ হয়ে যায়।
এ অবস্থায় অনেকেই ভেবেছিলেন, খালেদা জিয়া সম্ভবত আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। কিন্তু দলের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় আগের মতো তিনটি আসনে তাঁর নাম রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বর্তমানে যে শারীরিক অবস্থা, তাতে তিনি নিজে নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। এরপরও দল তাঁর ওপরই ভরসা রাখছে।
এর প্রধান কারণ হলো দলের ভেতরে ও বাইরে খালেদা জিয়ার আপসহীন ভাবমূর্তি। সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি পুরোপুরি সফল, এটা বলা যাবে না। কিন্তু স্বৈরাচারবিরোধী ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁর সাহসী ভূমিকা সবাই স্বীকার করেন।