সংগীতবিহীন স্কুল, ব্যথাহীন মন্ত্রণালয়

বিডি নিউজ ২৪ শাহেদ কায়েস প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১২

অবশেষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষার জন্য শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তটি বাতিল হওয়ার একটি সরকারি ব্যাখ্যা পাওয়া গেল। খোদ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বিবৃতি দিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছে। কিন্তু এই ব্যাখ্যা যে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র চেষ্টা, তা স্পষ্ট এবং বোঝার জন্য অতি বুদ্ধিমান হওয়ার দরকার নেই।


বলাবাহুল্য ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের চাপের মুখে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার বহুমুখী দিককে উপেক্ষা করে সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষার জন্য সৃজিত শিক্ষক পদ বাতিল করেছে। একইসঙ্গে বাতিল করা হয়েছে শরীরচর্চা শিক্ষকের পদটিও। এতে স্পষ্ট হয় যে শিক্ষার মান ও সমন্বিত বিকাশের চেয়ে চাপের মুখে আপস করাই অগ্রাধিকার পেয়েছে।


এই দুটি পদ বাদ দেওয়ার পাশাপাশি 'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০২৫'-এ কিছু 'শব্দগত পরিবর্তন' আনা হয়েছে। এসব পরিবর্তন এনে মন্ত্রণালয় মূলত অগাস্টে জারি করা নতুন বিধিমালার মূল উদ্দেশ্যকে পেছনে টেনে নিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও শরীরচর্চা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পদসমূহ বাতিল করা হয়েছে, যা সরকারের শিক্ষানীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।


৪ নভেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন করে সৃষ্টি করা সংগীত শিক্ষক পদ বাতিলের বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে অন্তর্বতী সরকার, সেখানে প্রকল্পটির ‘পরিকল্পনায় ত্রুটি ও বৈষম্যের’ কথা বলা হয়েছে।


বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কমিটি প্রকল্পটির ‘পরিকল্পনায় ত্রুটি এবং বৈষম্যের’ আশঙ্কা দেখে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছে।


“সচিব কমিটি মনে করে, প্রকল্পটির পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। এত অল্প সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না এবং এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে।”


বে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পরবর্তীকালে অর্থের সংস্থান-সাপেক্ষে সকল স্কুলে এরকম নতুন বিষয়ের শিক্ষকের পদ সৃজন এবং সেসব পদে নিয়োগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে কমিটি অভিমত ব্যক্ত করেছে।”


কিন্তু এই যুক্তি যেন শিক্ষার মান ও সমন্বিত বিকাশকে ন্যায্যভাবে বিচার করার দায় থেকে পালানোর চেষ্টা মাত্র। একটি নতুন বিষয় শিক্ষার্থীদের মনোবল, সৃজনশীলতা এবং শরীরচর্চা বিকাশকে উন্নত করার সুযোগ দেয় এবং তার জন্য অল্পসংখ্যক শিক্ষকও একটি সূচক হিসেবে কার্যকর হতে পারে।


বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “পরবর্তীকালে অর্থের সংস্থান-সাপেক্ষে সকল স্কুলে এরকম নতুন বিষয়ের শিক্ষকের পদ সৃজন এবং সেসব পদে নিয়োগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।”


প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাবনা বাতিল বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নজরে এসেছে।


ভালো কথা, নজরে এসেছে বলে তারা একটা সরকারি কিন্তু বেদরকারি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তাদের এই ব্যাখ্যা পড়লে মনে হবে, বাংলাদেশে আর কোনো ক্ষেত্রে বৈষম্য নেই। বিরাট বৈষম্য ঘটতে যাচ্ছিল সংগীত ও শরীরচর্চা বিদ্যার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্তে। কিন্তু আমরা এমন অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদাহরণ দিতে পারব, যেসব স্কুলে বাংলার শিক্ষক আছে তো ইংরেজির শিক্ষক নেই, ইংরেজির শিক্ষক থাকলে আবার নেই গণিতের শিক্ষক। কাজেই স্কুলগুলোই বন্ধ করে দিয়ে বৈষম্যকে চিরতরে দূর করে দেওয়া যেতে পারে। এ যেন ‘হীরক রাজার দেশে’র অবস্থা– “বিদ্যা লাভে লোকসান, নাহি অর্থ নাহি মান।” অবশ্য এই ফরমানের আগে হীরকের রাজা শিক্ষামন্ত্রীকে ডেকে বললেন, “শিক্ষামন্ত্রী আজ থেকে গান শেখা বন্ধ।” শিক্ষামন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে সায় দিয়ে বললেন, “যে আজ্ঞা খোদা বন্ধ।”


এখানে কে যে হীরক রাজা আর কে শিক্ষামন্ত্রী সেই আলাপে যাওয়ার আগে সংগীত শিক্ষক নিয়োগে ‘পরিকল্পনা ত্রুটি’ বিষয়ে আরেকটু জেনে নেওয়া দরকার। সরকারের ভাষ্যমতে, ৬৫ হাজার ৫৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে মাত্র দুই হাজার ৫০০টি ক্লাস্টারে এই শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সচিব কমিটি মনে করে, এত অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ‘কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না’ এবং এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থায় ‘বৈষম্যের সৃষ্টি হবে’। এই ক্লাস্টার-ভিত্তিক মডেল বাস্তবায়নের অসুবিধেও তুলে ধরা হয়েছে। সচিব কমিটির মতে, একজন শিক্ষককে প্রায় ২০টিরও বেশি বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিতে হতো, যা কর্মঘণ্টা পরিচালনা ও পাঠদানের ক্ষেত্রে ‘বাস্তবসম্মত’ ছিল না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও